ডেস্ক নিউজ:

নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে ও আগামী দিনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, স্বাধীনতা পুরস্কার থেকে অনুপ্রাণিত হবে তরুণ প্রজন্ম। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে ও আগামী দিনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই যাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে চলবো।’

রবিবার (২৫ মার্চ) সকালে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে আয়োজিত ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১৮’ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় এ সময় ১৮ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১৮ তুলে দেন তিনি।

পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন—স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য কাজী জাকির হোসেন (মরণোত্তর), শহীদ এসএমএ রাশীদুল হাসান (মরণোত্তর), শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী (মরণোত্তর), এয়ার ভাইস মার্শাল (অবসরপ্রাপ্ত) সুলতান মাহমুদ (বীর-উত্তম), এম আব্দুর রহিম (মরণোত্তর), ভূপতিভূষণ চৌধুরী ওরফে মানিক চৌধুরী (মরণোত্তর), শহীদ লে. আনোয়ারুল আজিম (মরণোত্তর), হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী (মরণোত্তর), আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (মরণোত্তর), মতিউর রহমান মল্লিক (মরণোত্তর), সার্জেন্ট জহুরুল হক (মরণোত্তর), আমজাদুল হক; সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য আসাদুজ্জামান নূর, কৃষিক্ষেত্রে অবদানের জন্য শাইখ সিরাজ, চিকিৎসায় অধ্যাপক ডা. একেএমডি আহসান আলী, সমাজসেবায় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান, সাহিত্যে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় আব্দুল মজিদ।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আজকে যারা সম্মাননা পেয়েছেন, এর মাঝে অনেকেই মরণোত্তর পুরস্কার পেয়েছেন। সম্মাননাপ্রাপ্ত সবাইকে অভিনন্দন, যারা মারা গেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা।’

স্বাধীনতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এরপর জাতির পিতা ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ৭ মার্চ জাতির পিতার ভাষণের পর থেকে, জাতির পিতার নির্দেশের পর বাঙালিরা প্রস্তুত হয়। এরপর আমরা বিজয় অর্জন করেছি। জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার জন্য। দেশ স্বাধীনের পর জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দেন তিনি। বিশ্বে তিনি বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়েছেন। এর মধ্যেই তিনি একটি দেশকে গড়ে তুললেন এবং তার হাত ধরেই দেশের উন্নতি শুরু হয়। যখনই বাংলাদেশের মানুষ একটি আলোর পথ খুঁজে পায় তখনই ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটে। তিনি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) বেঁচে থাকলে আরও আগেই বাংলাদেশ উন্নত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারতো।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হয়েছি। আমাদের দুর্ভাগ্য এত দেরিতে আমরা এই সম্মান অর্জন করেছি। তারপরও আমরা তা অর্জন করতে পেরেছি। এর কারণ, সরকারের ধারাবাহিকতা ছিল বলেই আমরা তা করতে পেরেছি। আমরা উন্নয়নশীল দেশের সনদপত্র পেয়েছি। তিন বছরের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে তিনটি শর্ত পূরণ করতে পারলেই সনদ পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা মাথাপিছু আয়, হিউম্যান রিসোর্স ইনডেক্স ও ইকোনোমিক ভার্নালিবিটি ইনডেক্স—এই তিনটি শর্তের প্রতিটিই বেশ বড় ব্যবধানে পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। এ সময় সরকারের বিভিন্ন সফলতা তুলে ধরেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার লক্ষ্য ছিল সোনার বাংলাদেশ। আমরা সেই সোনার বাংলা গঠন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আর আমাদের এই লক্ষ্য অর্জনে এবং আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা বিশেষ অবদান রেখেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে, আমরা চেষ্টা করছি তাদের সম্মান জানাতে। ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৮৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ও ৬টি প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেছি। এ বছর করলাম আরও ১৮ জনকে। যদিও আমরা জানি আরও অনেকের অবদান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমরাও চেষ্টা করছি তাদের খুঁজে বের করতে। আমরা তাদের সম্মানিত করে নিজেরাই সম্মানিত হতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশকে আমরা উন্নত, সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমি চাই মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা নিয়ে যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তার যাত্রা যেন থেমে না যায়, যাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।