– এম এ খালেক

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি মানুষের যে শ্রদ্ধাবোধ ছিলো তা এখন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। তাদের প্রতি সম্মানটা এখন কাগজেকলমে সীমাবদ্ধ। অনেকে বলবেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা কখনো কমবেনা। কিন্তু অপ্রিয় সত্য হলেও শ্রদ্ধাটা আসলে কমে যাচ্ছে তা নয়, কমেই গেছে। এর একমাত্র কারণ কোটা প্রথা। দেশের শিক্ষিত সমাজ এখন আওয়ামীলীগ -বি এন পি তে বিভক্ত নয়। তবে হ্যা, দেশের শিক্ষিত তরুণেরা এখন দুই দলে বিভক্ত। আর তা হলো মুক্তিযোদ্ধা কোটার পক্ষের দল আর মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিপক্ষের দল। খুব সম্ভবত শেষের দলটির পক্ষে গোটা দেশের এক তৃতীয়াংশ মানুষ। তাহলে কী দাঁড়ালো? এরা সবাই পরোক্ষভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় ব্যবসার অন্যতম অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে অনেকে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দিয়ে সচিব পর্যন্ত গেলেন এক ব্যাক্তি। পরে ধরাও খেলেন। এই লজ্জা কার? গতবছর কক্সবাজার সরকারী কলেজে কম জিপিএ পেয়ে ও আমার এক ছাত্রকে ভর্তি হতে দেখে জানতে চেয়েছিলাম কীভাবে সম্ভব হলো।

পরে জানতে পারলাম মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি হয়েছে। অবশ্যই এইজন্য তাকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে অদৃশ্য শক্তিকে। অথচ এই ছেলের পিতা মুক্তিযুদ্ধের নাম শুনেছেন কিনা আমার সন্দেহ। সে আমাকে এটা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে জানালো এইচ এস সি টা কোনমতে পাশ করতে পারলেই আবার একই কায়দাত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। আর এভাবেই হয়তো সারাদেশে বিভিন্ন সরকারী চাকরীতে, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নামের অভিশাপে হাজারো মেধাবী মুখ যোগ্য স্থানে যেতে পারছে না।

কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না। তাহলে কি এক্সট্রা সুযোগ সুবিধা নেওয়ার জন্য সেইদিন মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিলো?

তবে হ্যা একটা লাভ হচ্ছে দেশের জন্য। আর তা হলো ভবিষ্যতে যদি আবার অন্য কোন দেশের সাথে যুদ্ধ হয়, তখন দেশের সব মানুষ এতে ঝাঁপিয়ে পড়বে তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য।

প্রত্যাশা থাকবে মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা এই দেশকে স্বাধীন করার জন্য জীবন বাজী রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা যেন বিন্দুমাত্র কমতি না হয়। এটা তাদের দোষ নয়, এটা আমাদের সিস্টেম এর দোষ।

” এই দেশে জন্মই আমার আজন্ম পাপ” এই টুকু বলে আপসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

এম এ খালেক ,শিক্ষার্থী, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।