পেকুয়া সংবাদদাতা :
পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মগনামা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আখতার আহমদকে মুঠোফোনে হুমকি ও স্কুল মাঠে শিক্ষার্থীদের সমাগম চলার সময় পরিচালনা কমিটির সদস্য কর্তৃক ‘কুলাঙ্গার শিক্ষক’ বলায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। ওই সময় শিক্ষার্থীরা ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করলে পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। সোমবার (১৯ মার্চ) সকালে স্কুল মাঠে ঘটনাটি ঘটে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আখতার আহমদ বলেন, বিগত ৪ বছর ধরে আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। সততার সহিত দায়িত্ব পালনকালে কিছু কুচক্রিমহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। যা এখনো অব্যাহত আছে। ২০১৭ সালের শেষ দিকে স্কুল পরিচালনা কমিটির নির্বাচন হয়। নির্বাচন কমিশন স্কুল ভবনে নির্বাচন না করে উপজেলা হল রুমে নির্বাচন অনুষ্টিত করা ও নির্বাচন নিয়ে মামলার জটিলতায় শিক্ষাবোর্ড এখন পর্যন্ত উক্ত কমিটি অনুমোদন দেননি। যে কমিটির সভাপতি রিয়াজুল করিম চৌধুরী, সদস্য নাজিম উদ্দিন, আবুল হাসনাতসহ আরো কয়েকজন। আমিসহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি বোর্ডে গিয়ে অনেক তদবির করেছি তারপরও কমিটি অনুমোদন হয়নি। সর্বশেষ গত ১৮ মার্চ আমি খুটাখালি গিয়েছিলাম স্কুলের কাজে। ওই সময় রিয়াজুল করিম আমাকে ফোন করেন। বলেন কি জন্য আমি স্কুল না করে ওখানে গেলাম। ব্যাপক রাগান্বিত হয়ে বলেন, কমিটি অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত স্কুলে আসবে না। আসলে কি হয় আমার বলতে পারবোনা। এছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে আমার পরিচিতি জনরা আমাকে ফোন করে বলেন স্কুলে না আসতে। আসলে আমাকে মারধর করা হবে। এ খবরটি রাতেই স্কুল শিক্ষার্থীদের কানে পৌছে যায়। সকালে অনেক হুমকি থাকলেও আমি স্কুলে আসার জন্য মনস্থির করি এবং সকাল ৮টার দিকে স্কুলে উপস্থিত হয়। তখন কেউ আমাকে কিছু বলেনি।
৯টার দিকে স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়মিত সমাগম উপলক্ষে মাঠে অবস্থান নেন। শেষ পর্যায়ে রিয়াজুল ইসলাম চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন, আবুল হাসনাতসহ আরো কয়েকজন মাঠে উপস্থিত হয়। আমার হাত থেকে মাইক কেড়ে নিয়ে মাঠিতে পেলে দেন। ব্যাপক উত্তেজিত হয়ে পড়েন নাজিম উদ্দিন। শুরু করেন অশ্লীল ভাষায় গালি। এক পর্যায়ে বলেন, প্রধান শিক্ষক একজন কুলাঙ্গার শিক্ষক তাকে স্কুল থেকে বের হয়ে যেতে হবে। সর্বশেষ আমাকে মারতে আসলে সকল শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। প্রতিবাদ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ওই সময় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে উল্লেখিত ব্যক্তিরা দ্রুত চলে যান। বর্তমানেও হুমকি দিচ্ছে আমি স্কুল থেকে চলে যাওয়ার জন্য। আমি নিরাপত্তাহীনতায়।
ক্লাস চালাকালীন সরেজিমন ৮ম, নবম ও দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রধান শিক্ষককে কুলাঙ্গার বলেছেন আমাদের সামনে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন কুরুচিপূর্ন ভাষা আমরা মানতে পারি নাই। তাই প্রতিবাদ করেছি এবং বিক্ষোভও করেছি।
এবিষয়ে জহানতে চাইলে নাজিম উদ্দিন বলেন, আমি স্কুলটি নির্বাচিত সদস্য। অনেকদিন হল কমিটির নির্বাচন হয়েছে। এখন পর্যন্ত কমিটির অনুমোদন এনে দেননি তিনি। এছাড়াও আমি একজন অভিভাবক, উপজেলা আ’লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যান বিষয়ক সম্পাদক, মগনামা ইউনিয়ন আ’লীগের সি: সহসভাপতি। কোন অনুষ্টানে তিনি আমাদের তাওয়াতও দেননা। স্কুলটি তার ইচ্ছেমত চলে। সকালে আমরা সবাই গিয়েছিলাম শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার জন্য। ওই সময় প্রধান শিক্ষক কিছুতেই আমাদের কথা বলতে দিবেনা। তাই রাগ করে কিছু অশ্লীল ভাষা ব্যবহার হয়েছে।
রিয়াজুল করিম চৌধুরী বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্কুল ফাঁকি দিচ্ছেন। বিভিন্ন অজুহাতে স্কুলে না আসায় আমাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। রবিবার আমি ফোন করি প্রধান শিক্ষককে। তিনি বলেন খুটাখালিতে ব্যাংকে গেছেন। ওই সময় কথারচলে বলি পরিচালনা কমিটি অনুমোদন নিয়ে যেন স্কুলে আসে। তার কারণে আমরা নির্বাচিত হয়েও স্কুল কমিটি অনুমোদন পাচ্ছিনা। তাই ক্ষোভে স্কুলে না আসার জন্য বলি। সকালে তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়ে শো-ডাউন করে স্কুলে আসায় এর কারণ জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিলাম।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।