ইমাম খাইর, সিবিএন:
বড়-ছোট সব কাজেই এখন অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। বাজার সওদা সবই পুরে দেওয়া হয় পলিব্যাগে। পণ্যের মোড়কও পলিথিনেরই। রাস্তায় ডাস্টবিন থাকলেও তাতে ময়লা ফেলা হয়না। এসবেরই সোজা গন্তব্য হচ্ছে ড্রেন-নর্দমা। তাই প্রায় সব ড্রেন ভরে উঠে মানব ব্যবহার্য বর্য্যে। রাস্তা, ঘাট, ড্রেন-নর্দমা, জলাশয় সবই এখন নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব। তাই জলাবদ্ধতা বাড়তে থাকে। বাড়ে বর্ষায় জনভোগান্তি।
সুত্র মতে, একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে চারটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে থাকে। আর এই পলিথিন হয় রাস্তায়, না হয় বাড়ির পাশের গলিতে ফেলা হয়। রাস্তা এবং গলি থেকে পলিথিন বাতাসে উড়ে এক পর্যায়ে জমা হয় ড্রেনে-নর্দমায়। রাস্তার মধ্যে থাকা ড্রেনের মুখে পলিথিনের স্তুপ সবসময়ই চোখে পড়ে। ড্রেন-নর্দমা ভরাট হয় নানা জঞ্জাল ও পলিথিনে। একটুখানি বৃষ্টি হলেই তাই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা।
বিভিন্ন সময় পরিবেশবিদদের গবেষণায় উঠে এসেছে যেসব তথ্য তাদের একটি হচ্ছে, পলিথিন ৪০০ বছরেও পচে না। অর্থাৎ আজ কাজ শেষে যে পলিথিন গলিতে বা রাস্তায় ফেলা হচ্ছে তা পরিবেশ ধ্বংস করার হাতিয়ার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একদিকে জলাবদ্ধতা বাড়াচ্ছে, আবার অন্যদিকে মাটির উর্বরতা কমাচ্ছে পলিথিন।
জলাবদ্ধতার পাশাপাশি বায়ুদূষণেও ভূমিকা রাখছে নিষিদ্ধ পলিথিন। শপিং মল, কাঁচাবাজার, মুদি দোকান সর্বত্রই এখন পলিথিনের ব্যবহার। দোকানীরা সারাদিন দোকান করার পর রাতে ঝাড়ু দিয়ে পলিথিন রেখে যায় রাস্তায়। এই অবস্থায় রাতে বৃষ্টি হলে পলিথিনগুলো ভাসতে ভাসতে চলে যায় ড্রেনের মুখে। দিনের পর দিন এভাবে পলিথিন জমতে জমতে ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে অকেজো অচল করে দেয়।
এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব সিবিএনকে বলেন, ড্রেনে আবর্জনা পড়ে থাকলে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি অন্যদিকে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করবে। যা মারাত্নক ক্ষতিকর। আবার আবর্জনাযুক্ত পানি বাঁকখালীতে পড়লেও নদীর ইকো-সিস্টেম ক্ষতি। দূষিত হবে নদীর পানি। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, পৌরসভার বাসা-বাড়ী, হোটেল মোটেল, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন মহল্লা কেন্দ্রিক তিন ধরণের ডাস্টবিন বসানো দরকার। এ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নিতে হবে।
এদিকে আগামী বর্ষার আগেই ড্রেন, নালা-নর্দমা সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে কক্সবাজার পৌরসভা। গত সপ্তাহ ধরে পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা গোলদীঘিরপাড় থেকে পেশকারপাড়া স্লুইচ গেইট পর্যন্ত দীর্ঘ ড্রেনটির সংস্কার কাজ পুরোদমে চলছে। প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত শ্রমিক সংস্কার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি তারা কাজ করছে। আগামী একমাসের মধ্যে কাজ শেষে হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। এতে করে বর্ষায় ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করছে পৌরবাসী। সংস্কার কাজের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধায়ন করছেন মোঃ শাহাব উদ্দিন। ১৭ মার্চ সরেজমিন গিয়ে এই চিত্র ধরা পড়ে।
এই সময় দেখা গেছে, ড্রেন থেকে যেসব ময়লা-আবর্জনা তুলা হচ্ছে তার মধ্যে অধিকাংশ পলিথিন। সাথে রয়েছে বিভিন্ন আকারের বোতল ও প্লাস্টিক সামগ্রী। দিনের বেলায় এসব আবর্জনা তুলে রাখা হয়। রাতে ট্রাকে করে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট স্থানে।
গোলদীঘিরপাড়-এডভোকেট ছালামত উল্লাহ সড়ক থেকে বাজারঘাটা হোটেল শাহেরাজের পাশ ঘেঁষে রাবেয়া কুঠির হয়ে প্রাচীন ড্রেনটি পেশকারপাড়া স্লুইচগেটে গিয়ে পৌঁছেছে। ওখান থেকে সরাসরি বাঁকখালী নদীতে মিলিত হয়েছে শত বছরের ড্রেনটি। এই ড্রেনের দুই পাশে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এটি সংস্কার হলে পার্শ্ববর্তী অন্তত ২০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুর রহমান চৌধুরী সিবিএনকে জানান, প্রতি বছর বর্ষায় পৌরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিষয়টি বিবেচনা করে পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে সংস্কার কাজ শুরু করে দেয়া হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে কাজ শেষ হতে পারে। অন্যান্য ড্রেন, নালা-নর্দমাও পর্যায়ক্রমে সংস্কার করা হবে।