আমান উল্লাহ, টেকনাফ:

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেছেন, উন্নয়নের মাধ্যমে সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধিসহ সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। মাদক, বাল্য বিবাহ হচ্ছে সামাজিক ব্যাধি। শিক্ষার হার বাড়িয়ে এসব ব্যাধি দূর করার প্রয়োজন। টেকনাফে শিক্ষার হার খুবই নাজুক। এ থেকে উত্তোরণ হতে হবে। শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সামাজিকভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টি দরকার।

তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, দায়িত্বশীলতা , সততা ও মানবিক আচরনের মাধ্যমে সেবা প্রার্থীদের জন্য কাজ করতে হবে। তাদের সমস্যাধি সমাধানের মনোভাব নিয়ে কাজ করুন। দূনীর্তি যাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামের সাথে লেগে না থাকে এমন নিদের্শ ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের দেওয়ার পরও কেউ জড়িয়ে পড়লে ছাড় দেওয়া হবেনা। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাসকারীদের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এখন থেকে নিতে হবে।

টেকনাফকে মাদক ইয়াবামুক্ত করতে প্রশাসনকে বস্তুনিষ্ট তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করে মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলুন। এজন্য শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যেসব স্কুলে শিক্ষক সংকট ও পদ শূণ্য রয়েছে তা শিগগিরই পুরণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোহিঙ্গা একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। তবে রোহিঙ্গাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ উখিয়া-টেকনাফের মানুষের জন্য সরকারের চিন্তাধারা রয়েছে।

ইয়াবা পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদে ৬-৭ মাস ধরে জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ রাখা একটি অমানবিক সিদ্ধান্ত। আলোচনার মাধ্যমে একটি কাঠামোতে রেখে জেলেরা যাতে মাছ শিকার করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৫ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় টেকনাফ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সূধী সমাবেশ ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হাসানের সভাপতিত্বে ও একাডেমিক সুপারভাইজার নুরুল আবছারের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ আছাদ্দুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সরকারের নির্দেশ পালনে আমরা বাধ্য। মাদক পাচার বন্ধ রাখতে রাত-দিন নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। মাদক পাচারকারীদের কোন ছাড় দেওয়া হবেনা। সঠিক তথ্য দিয়ে বিজিবিকে সহযোগীতা করলে অচিরেই মাদক ইয়াবা পাচার বন্ধ করা সম্ভব।

সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, মাদকে চেয়ে গেছে টেকনাফ। তাই সারা দেশে টেকনাফের বদনাম ছড়িয়ে পড়েছে। এই থেকে উত্তোরণে আইনশৃংখলা বাহিনীকে আন্তরিক হতে হবে। দূর্নীতিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে ট্কেনাফ। সরকারি উন্নয়নের চিত্র কোথাও চোখে পড়েনা। যথাযথ উন্নয়ন হচ্ছেনা। সরকারি বরাদ্ধের কাজে সাইন বোর্ড নেই। বিশেষ করে কর্মসৃজন প্রকল্প লুটপাট নামে অবহিত করছে জনগন। এগুলো তদারকি করা প্রয়োজন। একজন রোহিঙ্গা হাকিম ডাকাতে কাছে মানুষ জিম্মি হয়ে আছে। আতংকে বসবাস করছে জনগন। উপজেলা পরিষদের সন্নিকটে এভাবে রোহিঙ্গা ডাকাত স্থাপনা গড়ে তুলেছে তা সত্যিই ভাবিয়ে তুলেছে।

সভায় শিক্ষার মান উন্নয়ন, রোহিঙ্গা নিয়ে স্থানীয়দের নানা সমস্যা নিরসন , মাদকপাচার রোধ, মাছ ধরা বন্ধের ফলে নাফ নদীর জেলেদের মানবেতর জীবন-যাপনসহ এলাকার সার্বিক উন্নয়ন বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়।

এছাড়া সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক সাংসদ অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, জেলা পরিষদের সদস্য শফিকুর রহমান, মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রনজিত কুমার বড়–য়া, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাহেরা আকতার মিলি। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক নুরুল বশর, টেকনাফ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী, আজিজ উদ্দিন, নুর আহমদ, মোঃ শাহজাহান মার্শাল, আওয়ামীলীগ নেতা জহির হোসেন এম,এ, সোনা আলী, যুবলীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর কবির, টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর হোসেন প্রমুখ।

প্রসংগত জেলাপ্রশাসক মো: কামাল হোসেন গত ৪ মার্চ কক্সবাজার জেলার দায়িত্বভারগ্রহনের পর প্রথম টেকনাফ সফর করে সুধী সমাবেশে অংশ নেন। এ সময় নবাগত জেলা প্রশাসককে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করা হয়।