নিজস্ব প্রতিবেদক
সাড়ে ৬ মাস আগে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে স্বামী দাবি করে একটি কাবিননামা উপস্থাপন করেছেন আরেফা আক্তার মনু নামের এক প্রতারক নারী। একাবিন ও বিয়ে ভূঁয়া দাবি করে মামলা করেছেন মৃত ব্যক্তির স্ত্রী। তিনি মৃত স্বামীর কাবিননামার বালাম দেখতে গিয়ে লাঞ্চিত হয়েছেন কাজি অফিসে। এরপর আশ্রয় নিয়েছেন আদালতের। প্রথম নির্দেশে বালাম আদালতে হাজির না করায় এ কাবিননামা সৃজনে জড়িত ক্বাজি অফিস ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
মৃত কামাল হোসেনের স্ত্রী সেতারা করিমের আবেদনের প্রেক্ষিতে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) খালেদ মাহমুদ সোমবার (১২ মার্চ) এ আদেশ দেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে কাবিননামা উপস্থাপনকারিনি আরেফা আক্তার মনু উখিয়া জালিয়াপালং ইউনিয়নের বড় ইনানী এলাকার মৃত মুহাম্মদ মিয়ার মেয়ে।
বাদী সেতারা করিম তার মামলার আরজিতে বলেন, আমার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলনা। তার আচার আচরণ, চলাফেরা সব দিনের মতো ¯পষ্ট। মূলত: আমাদের স¤পদ কুক্ষিগত করতে একটি বিশেষ মহল আমার মৃত স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী আবিস্কার করে প্রতারণা করতে চাচ্ছে। তারা আমার মৃত স্বামীর নামে ভূঁয়া কাবিননামাও সৃজন করে।
তিনি বলেন, তাদের দাবি আমাদের বাড়িপর্যন্ত পৌঁছানোর পর রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ক্বাজি অফিসে গিয়ে কাবিননামা দেখতে চাইলে তা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তারা বলেন, এক সপ্তাহ পরে আসেন তখন দেখাব।
অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত ক্বাজি মুজিবুর রহমান চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, যেকোন ঘটনায় একটি পক্ষ সংক্ষুব্দ হতে পারেন। এভাবে একজন নারী সংক্ষুব্দ হয়ে মামলা করেছেন। বিজ্ঞ হাকিম নির্দেশনা দিয়েছেন বালামটি আদালতে উপস্থাপন করতে। আমি আদালতের নির্দেশনায় তদন্ত কর্মকর্তার হাতে ইতোমধ্যে (সোমবার রাত ৮টার দিকে) কাবিননামার বালামটি হস্তান্তর করেছি।
কাবিন নামার স্বাক্ষর ও অন্যান্য বিষয়াদি ভূঁয়া দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এটি যেহেতু আদালতে গড়িয়েছে সেহেতু বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত হবে না।
এছাড়া, টিনেজ বয়সের ছেলে-মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করলে দেশের যেকোন প্রান্তের কাজি অফিসে বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন কিন্তু এ কাবিন নামার পাত্র-পাত্রি পূর্ণ বয়স্ক এবং স্বামীর বাড়ি মহেশখালী আর দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা নারীর বাড়ি উখিয়া। এ দু’উপজেলার কোনটাতে কাবিন না হয়ে ভিন্ন উপজেলার একটি ইউনিয়ন কাজি অফিসে কেন কাবিননামাটা হলো, আর এসময় একজন পূর্ণ বয়স্ক পুরুষের প্রথম পক্ষ আছে কিনা বা অন্য কাগজপত্র দেখা হয়নি কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকার বিয়ে রেজিস্ট্রির ব্যাপারে অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে। যেকেউ চাইলে দেশের যেকোন প্রান্তে বিয়ে রেজিস্ট্রি করাতে পারেন। আর কামাল হোসেন যখন আরেফা আকতার মনুকে বিয়ে করছিলেন তখন স্বাক্ষীদের স্বাক্ষাতে বলেছিলেন তার স্ত্রী মারা গেছেন তাই তিনি বিয়ে
করছেন। এর বাইরে তাকে বা পাত্র-পাত্রিকে কিছু বলা একজন কাজির দায়িত্বে পড়ে না বলে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এভাবে কামাল সাহেবের উত্তরসূরী উদয় হবে তখন জানলে অনেক কিছু তাকে জিজ্ঞাসা করা হত।
আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী সাতঘরিয়াপাড়া এলাকার মৃত উলা মিয়ার ছেলে কামাল হোসেন দীর্ঘ দিন সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাস করে আসছিলেন। দেশে ফিরে কিছু দিন পর ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি চট্টগ্রামের বাসায় মারা যান। তার মৃত্যুর পর আরেফা আক্তার মনু নামের এক নারী নিজেকে কামাল হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবী করে রামু জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের ক্বাজি অফিসের একটি কাবিননামা প্রদর্শন করে।
তিনি আরো বলেন, ওই কাবিননামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কথিত স্বামী ও স্ত্রী দুই জনেরই স্বাক্ষর একই হাতের লেখা। বিয়ে দেখানো হয়েছে ২০১৬ সালের ২০ জুন। কাবিননামা সরবরাহের তারিখ উল্লেখ আছে একই বছরের ২১ জুলাই। অন্যান্য তথ্যের মধ্যেও রয়েছে বিরাট ফারাক।
স্থানীয়দের মতে, এ কাজি অফিসে এরকম ভেজাল সৃষ্টিকারি একাধিক বিয়ের কা¡িন নিয়ে পূর্বেও অনেক লঙ্কাকান্ড ঘটে গেছে। অভিযোগ রয়েছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কাজি মুজিবুর রহমান চৌধুরী অনৈতিক বিয়ে গুলো পড়ান আর এভাবে ঝামেলা সৃষ্টি করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রামু থানার ওসি একেএম লিয়াকত আলী বলেন, মামলাটি দায়েরের পর নির্দেশনা মোতাবেক কাবিননামার বালামটি উপস্থাপনের জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু কাজি মুজিবুর রহমান চৌধুরী তা অগ্রাহ্য করেন। এসময় পুলিশ গিয়ে কাজি অফিসটি সীলগালা করে দিয়ে আসে। আর আজ (সোমবার) আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক অফিসটি ক্রোক করে বালামটি নিয়ে আদালতে উপস্থাপনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।