আহমদ গিয়াস॥
কক্সবাজার শহরকে বন্যামুক্ত করতে বাঁকখালী নদীর দুই তীরে ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। বিদ্যমান বেড়ীবাঁধ থেকে ৮ ফুট উঁচু ও প্রায় দেড়শ ফুট চওড়া বিশিষ্ট এ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। চলতি বছরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বাঁধের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিতে অসংখ্য মানুষের বসতভিটাসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অন্তর্ভূক্ত হলেও প্রকল্পটিতে ক্ষতিপূরণের কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এতে ক্ষুব্দ হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকশত মানুষ গতকাল রবিবার সকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। এর আগের দিন বিক্ষুব্দ লোকজনের বাধায় বেড়ীবাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদার।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ‘বাঁকখালী বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও ড্রেজিং প্রকল্প’ নামের একটি ২০৮ কোটি টাকার প্রকল্প সম্প্রতি ডিপিএম ভিত্তিতে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় নদীর কক্সবাজার অংশে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়ীবাঁধকে ১৫০ ফুট চওড়া করে বিদ্যমান অবস্থা থেকে আরো ৮ ফুট উচুঁ করা হচ্ছে। নদীর ওপারেও একই আকারের আরো ১৮ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করা হবে। পরবর্তীতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এই বেড়ীবাঁধের উপর সড়ক নির্মাণ করবে। তবে বেড়ীবাঁধটির ৫টি অংশে মাত্র ১.৮ কিলোমিটার সিসি ব্লক থাকবে। বাকী অংশ হবে মাটির বাঁধ। আর বাঁধের উপরের অংশ হবে ১৪ ফুট বিশিষ্ট মাটির সড়ক। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কক্সবাজার শহর ছাড়াও শহরতলীর আরো চারটি ইউনিয়ন বন্যামুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকল্পটিতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কোন ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে বিক্ষুব্দ লোকজনের বাধায় প্রকল্পটি ভেস্তে যেতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
তবে রবিবার কক্সবাজার শহরে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে জানানো হয়েছে, তারা মোটেও বেড়ীবাঁধের বিপক্ষে নয়। তবে নির্মাণাধীন বেড়ীবাঁধের যে নকশা করা হয়েছে এবং যেভাবে তীরের জমি কেটে মানুষের ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলী জমি ভরাট করা হচ্ছে। তাতে হাজার খানেক মানুষের বসতভিটা ও জমি বেড়ীবাঁধের নীচে হারিয়ে হারিয়ে যাবে। অনেকেই ভিটেবাড়ীসহ একমাত্র সম্বলটুকু হারিয়ে নি:স্ব হয়ে যাবে। পরে বিক্ষুব্দ লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত জমির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবী করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দেয়।
সমাবেশে জেলা আাওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, সহ-সভাপতি রেজাউল করিম চেয়ারম্যান, জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকউদ্দিন চৌধুরী, কুষক লীগ নেতা মো. জাকারিয়া চৌধুরী, কক্সবাজার পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছালামতউল্লাহ বাবুল, বিএনপি নেতা সাহাবউদ্দিন চৌধুরী, আওয়ামীলীগ নেতা শহীদুল্লাহ মেম্বার, ফোরকান আজাদ, মনজুর আলম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
প্রকল্পটিতে ক্ষতিপূরণের কোন ব্যবস্থা না থাকার কথা স্বীকার করে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, ক্ষতিপূরণের দাবীতে এলাকাবাসীর ক্ষোভের কথা উর্ধতন মহলকে জানানো হয়েছে।
আজ সোমবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে এক বৈঠকে যোগদিতে গতকাল রবিবার কক্সবাজার থেকে রওয়ানা হয়েছেন। বিষয়টি বিবেচনার জন্য বৈঠকে উত্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান।