শাহেদ মিজান, সিবিএন:
পর্যটম মৌসুমের শুরুতে গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারির দিকে কক্সবাজার শহরে ব্যাপক হারে বেড়েছিল ছিনতাই। এমনকি ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছিল এক পর্যটক। আহত হয়েছিল অনেক। এমন পরিস্থিতিতে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছিল পুলিশ। পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে অর্ধশতাধিক ছিনতাইকারী ধরা পড়েছিল। পুলিশের ওই কঠোরতার পর মাস দেড়েক ধরে অনেক কমেছিল ছিনতাই। কিন্তু সম্প্রতি পর্যটন শহরে আবার বেড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। গত এক সপ্তাহে অন্তত ১০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ছয়জন ছুরিকাহত হয়ে আহত হয়েছেন। ফের ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কত বোধ করছে পর্যটক ও স্থানীয়রা। ছিনতাইকারীদের ধরতে পুলিশের অভিযান ভাটা পড়ায় আবার ছিনতাই বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত গত ৪মার্চ রাতে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে শামসুল আলম (৩০) নামে টমটম চালক গুরুতর আহত হয়। ওইদিন দিবাগত রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। টার্মিনাল থেকে যাত্রী বেশে একদল ছিনতাইকারী তার টমটমে উঠে। পরে ঝিলংজা বীজ উৎপাদন খামার পর্যন্ত পৌঁছলে ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাত করে তার সব কিছু ছিনিয়ে নেন। ৫ মার্চ রাত সাড়ে ১১ টার দিকে গোলদীঘির পাড় এলাকায় ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাত করে দিদারুল ইসলাম (৩০) নামে ব্যবসায়ীর সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। ছুরিকাঘাতাতে তিনি গুরুতর আহত হন। তার কাছ থেকে ছিনতকারীরা এক লাখ টাকা ও দামি দুটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পূর্ব পাহাড়তলী ইছুলুরঘোনা এলাকার মো. রাহাত ও পশ্চিম পাহাড়তলী বড়–য়া পাড়া এলাকার ছৈয়দের নেতৃত্বে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটে বলে স্থানীয়রা জানান। ৫মার্চ সন্ধ্যার দিকে ছোটন নামে এক ব্যবসায়ী বাসায় ফেরার পথে গরুর হালদা সূর্যের হাঁসি ক্লিনিকের সামনে একদল ছিনতাইকারী তার হাতে পায়ে ছুরিকাঘাত করে মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। তবে ছিনতাইকারীদের আরো ছুরিকাঘাতের মুখে তিনি পালিয়ে বড় ধরণের অঘটন থেকে রক্ষা পেয়েছেন। তারপরও তার হাতে ও পায়ে মারাত্মক জখম হয়েছে। এর পাঁচদিন আগে একই কায়দায় তার দামি মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়েছিল ছিনতাইকারীরা। ৭মার্চ রাতে হাশেমিয়া মাদ্রাসা এলাকায় আরেক ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাত করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়েছে। তবে তার পরিচয় জানা যায়নি। ৯ মার্চ মো. শাহেদ (১৯) নামে এক যুবককে পিটিয়ে ২৫ হাজার টাকা ও দামি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে যায় টেকপাড়ার চিহ্নিত ছিনতাইকারী পারভেজের নেতৃত্বে একদল ছিনতাইকারী। ছিনতাইকারীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে শাহেদ। এছাড়াও গত এক সপ্তাহে অন্তত ১০টি ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের ১৫টির বেশি স্পটে ছিনতাইকারীরা উৎপেতে রয়েছে। এসব স্পটগুলো হলো, কলাতলী এলাকার সী-ইন পয়েন্ট, সৈকতের হোটেল সী-ওয়ার্ল্ড রোড, বাহারছড়ার জাম্বুর মোড়, সার্কিট হাউসের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের চত্বর, লালদীঘির পাড়ের বিহারি গলি, হাসপাতাল রোড, কালুর দোকান, বার্মিজ মার্কেট, খুরুশকুল রোডের মাথা, বিজিবি ক্যাম্পের নারিকেল বাগান, প্রধান সড়কের সাবমেরিন ক্যাবল এলাকা, সিটি কলেজের সামনে, হাশেমিয়া মাদ্রাসা পয়েন্ট, কলাতলীর প্রধান সড়কের টিএন্ডটি অফিসের সামনে, আদর্শ গ্রামের সামনেসহ শহরের ডায়াবেটিক পয়েন্ট।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আলীরজাহাল কেন্দ্রিক একটি বড় ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। এই চক্রের সবাই দক্ষিণ রুমালিয়ার ছড়ার। তারা বাসটার্মিনাল থেকে শহরের ঝাউতলা পর্যন্ত টমটমে করে চষে বেড়ান। মূলত টমটমের যাত্রীরাই তাদের একমাত্র টার্গেট। এই ভয়ংকর চক্রটি সন্ধ্যার পর থেকে তৎপর হয়ে উঠে। তারা টার্গেট করে যাত্রী বেশে টমটমে উঠে পড়ে। শহরের আসার পথে আলীরজাঁহাল থেকে হাশেমিয়া মাদ্রাসা ব্রীজ পর্যন্ত স্থানে সুযোগ বুঝে ছুরির মুখে টমটম চালক ও যাত্রীদের জিম্মি করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। তবে ভীতি সৃষ্টির জন্য অধিকাংশ ঘটনায় ছুরিকাঘাত করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টমটম চালক জানান, সপ্তাহ খানেক আগে ওই ছিনতাইকারী চক্রটির পাঁচজন ছিনতাইকারী বাসটার্মিনাল থেকে যাত্রী বেশে তার টমটমে উঠে। তারা শহরে এসে পৌরসভার সামনে আকস্মিক টমটম থেকে নেমে ছুরি ধরে এক লোকের দামি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। এই ঘটনার পর টমটম চালক দ্বিমত পোষণ করলে ছুরি ধরে তাকে হুমকি দেয়। পরে ওই টমটম নিয়ে থানার সামনের সড়ক দিয়ে বদরমোকাম কস্তুরাঘাট এলাকায় পৌঁছলে আকস্মিক নেমে ছুরি ঠেকিয়ে তিনজন লোকের দামি মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। সেখান থেকে আবার যায় বৌদ্ধমন্দির সড়কে। সেখানে একই কায়দায় দু’জনের দামি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে ওই টমটমে করে আলীরজাঁহাল গিয়ে ভাড়া না দিয়ে চম্পট দেয় ছিনতাইকারীরা। এই টমটম চক্রের মতো আরেকটি ভয়ংকর চক্র হচ্ছে ‘সিএনজি চক্র’। এই চক্রটি শহরের কলাতলী থেকে হাসপাতাল সড়ক পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়ায়। এই চক্রটির পিস্তল ও ছুরি ব্যবহার করে মানুষকে জিম্মি করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো ছিনতাইয়ের কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। তারপরও পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে গত এক মাসে অর্ধশতাধিক ছিনতাইকারীকের আটক করে তাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা দায়ের করেছে।’

তিনি আরো বলেন, আমি যোগ দিয়ে কক্সবাজারকে প্রথমে ইয়াবামুক্ত করার মিশন নিয়ে কাজ করছি। এখনো আমি ইতিমধ্যে অনেক কাজও করেছি। এভাবে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে একটা বিশেষ মিশন আসছে। অচিরেই শহরবাসী সে সুসংবাদ পাবেন।’