এস. এম. তারেক :

“বর্ণাঢ্য ও জমকালো অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে গতকাল ১০ মার্চ শনিবার সম্পন্ন হলো জেলার ঐহিত্যবাহী ও প্রাচীণতম বিদ্যাপীঠ ঈদগাহ্ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭১ বর্ষের পুনমির্লনী। সকাল ৮ টা’য় জাতিসত্তার কবি ও দরিয়ানগরের ভূমিপুত্র এবং অত্র বিদ্যালয়ের প্রাক্তন মেধাবী শিক্ষার্থী কবি মুহম্মদ নুরুল হদা শান্তির পায়রা উড়িয়ে অনুষ্টানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। তিনি তার বক্তব্যে বৃত্তের পাশাপাশি চিত্তের দিকে তাকানোর আহবান জানান এবং আলোক পরিবার ঈদগাহ্ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে আগামীতে আরো বিশাল যজ্ঞ শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বাংলার লোকজ ঐহিত্যকে ধরে রাখার জন্য মাটির ব্যাংক ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ঈদগাহ্ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় একটি পরিবার, এটি একটি শিক্ষা পরিবার, এর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে, যতদিন থাকবে বাংলাদেশ থাকবে পৃথিবী”। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পুনমির্লন উদযাপন কমিটির আহবায়ক এবং বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী লেঃ কর্ণেল (অবঃ) ফোরকান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মহাগ্রন্থ আল কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ ইব্রাহীম। গীতা পাঠ করেন শিক্ষয়ত্রী পূর্ণাম পাল। অতঃপর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় জাতীয় সংগীত, এরপর একসাথে জাতীয়, পুনমির্লনী ও বিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন, প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাতের কন্ঠে শপথ বাক্য পাঠ এবং প্রয়াতদের স্বরণে নীরবতা পাঠ শেষে অনুষ্টানে সূচনা বক্তব্য রাখেন অনুষ্টানের সভাপতি লেঃ কর্ণেল (অবঃ) ফোরকান আহমদ। অবশ্য এর আগে অতিথিবৃন্দ উম্মোচন করেন পুনমির্লনী স্বারক স্মৃতিপট। তিনি তার বক্তব্যে অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং অনুষ্টানের সকল ত্রুটি বিচ্যুতি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। ব্যারিস্টার নুরুল আজিম, শিক্ষক নুরুল আমিন হেলালী এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী আজাদ মনছুরের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্টিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ডিজিএফআইয়ের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার হামিদুল হক। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আজকের এ মিলনমেলা বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় সুযোগ, কারণ প্রাক্তনদের মধ্যে যারা আজকে মঞ্চ আলোকিত করে বসে আছেন, তারা তাদের থেকে শিক্ষা নিতে পারে। আগামীতে যেন নোতনদের পদভারে মঞ্চ নুয়ে পড়ে সেকামনাও করেন তিনি। এছাড়া তিনি, মাদকের করাল গ্রাস যাতে এ বিদ্যালয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য উপস্থিতদের আরো বেশী সচেতন হওয়ার আহবান জানান। নবাগত জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, সামর্থ্য অনুযায়ী তিনি কক্সবাজারের উন্নয়নে কাজ করে যাবেন এবং সেবার দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলে ঘোষনা দেন। শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে পড়া জেলা কক্সবাজারে শিক্ষার সম্প্রসারনে কাজ করে যাবেন বলেও তিনি উপস্থিতদের অঅশ্বস্ত করেন। অতিথি রামু কক্সবাজারের সাংসদ আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল তার বক্তব্যে, কক্সবাজারের বিপুল সম্ভাবনাময় অথচ অনগ্রসর জনপদ ঈদগাঁওকে অচিরেই উপজেলা, থানা এবং অত্র বিদ্যালয়কে জাতীয়করনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে জানান। ব্যবসা বানিজ্যের জন্য আদর্শ স্থান ঈদগাঁও’র আধুনিকায়ন এখন অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে। এ বিদ্যালয়ের সাথে তার অনেক অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে উল্লেখ করে বলেন, আগামী প্রজম্মের শিক্ষার্থীরা আরো অনেক বড় পরিসরে পুনমির্লনীর আয়োজন করবে। সাবেক সংসদ সদস্য ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী লুৎফুর রহমান কাজল অতীতের স্মৃতিচারন করে বলেন, শুধু জেলা পর্যায়ে নয়, জাতীয় পর্যায়েও রয়েছে এ বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কিভাবে শিক্ষার গুনগত মান আরো বেশী বাড়ানো যায় এবং জাতিকে আরো বেশী সেবা দেওয়া যায় সেলক্ষে তিনি সকলকে একযোগে কাজ করে যাওয়ার আহবান জানান। প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সুপ্রীম কোর্টের প্রতিথযশা আইনজীবি ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, পিতামাতা হচ্ছে শিশুর প্রথম পাঠশালা আর শিক্ষকেরা হচ্ছেন জীবনের পথ প্রদর্শক। তিনি কক্সবাজারের উন্নয়নে প্রত্যেককে নিজের অবস্থান থেকে এগিয়ে এসে সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করে যাওয়ার আহবান জানান। চট্টগ্রাম সরকারী মহিলা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র প্রসেফর জাফর আহমদ তার বক্তব্যে বলেন, সেবকেরাই কেবল শিক্ষা গ্রহণ করে এবং জাতির কল্যাণে তারাই সূর্যতূল্য অবদান রাখতে সক্ষম। বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাত। তিনি তার বক্তব্যে এ বিদ্যালয়ের উন্নয়নে উপস্থিত সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন এবং দীর্ঘদিন পরে হলেও এধরনের একটি অনুষ্টান আয়োজন করায় সংশ্লিষ্ঠদের ধন্যবাদ জানান। এছাড়া স্বনামধন্য এ প্রতিষ্টানকে জাতীয়করনের জন্য উপস্থিতদের সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করেন। আলোচনা অনুষ্টান শেষে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে শুরু হয় বর্ণাঢ্য র‌্যালী। পুনমির্লন লগো সম্বলিত টুপি ও গেঞ্জি পরিধান করে অংশগ্রহণকারীরা সকাল সাড়ে ১১ টা’র দিকে বিদ্যালয় থেকে র‌্যালিটি আরম্ভ হয়ে বাস ষ্টেশন ও বাজারের বিভিন্ন অলিগলি প্রদক্ষিণ শেষে আবারো বিদ্যালয়ে এসে শেষ হয়। এরপরই শুরু হয় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ এবং অবসরপ্রাপ্ত ৮ শিক্ষককে ক্রেস্ট ও উত্তরীয় প্রদান। দুপুরে জোহরের নামাজ ও মধ্যহ্নভোজ শেষে আবারো শুরু হয় স্মৃতি রোমন্থন। চলে টানা বিকেল ৫ টা পর্যন্ত স্মৃতি রোমন্থনের ফাঁকে অনুষ্টিত হয় র‌্যাফেল ড্র। সবশেষে সন্ধ্যায় শিল্পী ঐশী ও কমোডিয়ান কাজলসহ একঝাঁক তরুণ শিল্পীদের পরিবেশনায় এবং মিটি মিটি বাতির ছন্দে অনুষ্টিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্টান। দিনের ক্লান্তি শেষে অডিয়েন্সরা হারিয়ে যায় সুরের ভূবনে। একের পর এক পরিবেশনা শেষে রাত ১০ টা’য় সমাপ্তি ঘটে মহামিলন মেলার। ওই দিন অনুষ্টানকে সমৃদ্ধ করতে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মাঝে আরো যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, লেঃ কর্ণেল (অবঃ) এহেছান, সমন্বয়ক ডাঃ সাইফুদ্দীন ফরাজী, যুগ্ন আহবায়ক অধ্যাপক ফিরোজ আহমদ, শওকত আলম, বিভিন্ন উপ-কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও সদস্যগণ, বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারী ও অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীবৃন্দ সরকারী বিভিন্ন পদে কর্মরত বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এবং অংশগ্রহণকারীরা। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক (রাজস্ব) কাজী আবদুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নোমান হোসেন, কবিতা পাঠ করেন কবি তৌহিদা আজিম এবং ৯৩ ব্যাচের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ব্যাংকার শাহজাহান মনির।