আমান উল্লাহ, টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি॥

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে হাজার হাজার একর সবুজ বনভুমি পাহাড় ন্যাড়া করে ধ্বংস করে দিয়েছে। উপড়ে ফেলেছে গাছের শিকড় পর্যন্ত। লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের জন্য গড়ে তুলেছে বাসস্থান। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর যে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে সেখানে টেকনাফের সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশ কিছুটা স্বস্তি দিয়ে আসছিল। কিন্তু দূষ্কৃতিকারীরা সেই বনায়ন বা পাহাড়কে ধ্বংস করতে সামাজিক বনায়ন ও পশু খাদ্য বাগানসহ প্রাকৃতিক পাহাড়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। হঠাৎ করে দিনের বেলায় পাহাড়ে দাউ দাউ আগুন জ্বলতে দেখে টেকনাফবাসীসহ পুরো প্রশাসনের মাঝেও আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পাহাড়ের প্রায় ৪০ টি পয়েন্টে দূর্বৃত্ত্বরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে একশ একর সৃজিত বাগানসহ কয়েকশ একর প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠা বাগান পুড়ে যায়। পাশাপাশি পুড়ে গেছে বন্য পশুদের জন্য সৃজিত ২৫ একর খাদ্য বাগানও। বনবিভাগসহ উপজেলা প্রশাসন আগুন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করলেও বাতাসের গতিবেগ থাকায় প্রায় ৭-৮ ঘন্টা যাবৎ জ্বলতে থাকে সবুজ বন। অবশেষে বিকাল সাড়ে ৫ টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে চলে আসে।

টেকনাফ রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, উক্ত ঘটনায় টেকনাফ মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রী (নং- ৩৬৬, তারিখ ৮ মার্চ ২০১৮) করা হয়েছে এবং কে বা কারা আগুন লাগানোর গঠনায় জড়িত রয়েছে তা তদন্ত করতে টেকনাফ সদরের এসিএফ দেওয়ান মোঃ আবদুল হাই আজাদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত টীম গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এসব দূষ্কৃতকারীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। তবে এঘটনায় এপর্যন্ত কাউকে চিহ্নীত করা যায়নি বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো জানান, পুড়ে যাওয়া পাহাড়ে সামাজিক বনায়নে আকাশমনি গাছের বাগান সৃজিত করা হয়েছিল। সেই গাছগুলি প্রায় পুড়ে গেছে। যদি বৃষ্টি হয় অনেক চারা গজাতে পারে। তবু দ্রুত বনায়ন সৃজনের জন্য আজ থেকে নার্সারী করা হচ্ছে। দূর্বৃত্ত্বের এই আগুনে প্রায় কোটি টাকা ক্ষতি সাধিত হয়েছে। শুক্রবার (৯ মার্চ) সকাল থেকে ১২ টা পর্যন্ত পুরো পাহাড় ধুঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকতে দেখা গেছে। সকালে কক্সবাজার জেলার দক্ষিন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আলী কবির পুড়িয়ে যাওয়া পাহাড় পরিদর্শণ করেছেন।

এদিকে উখিয়া-টেকনাফের প্রাকৃতিক দৃশ্য ঘেরা বনভুমিকে ধ্বংস ও দখল করার জন্য একটি দুষ্কৃতিকারী চক্র দীর্ঘদিন ধরে ঘাপটি মেরে বিভিন্ন অপরাধ ও উস্কানীমুলক কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে। তারা মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে এসব কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। পাহাড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া তাদেরই কাজ এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেনা টেকনাফের সাধারন মানুষ। এছাড়া রোহিঙ্গাদের বসবাসের সুযোগ করে দিতে অদৃশ্য দূর্বৃত্ত্ব পাহাড়ে আগুন ধরিয়েছে এমন মন্তব্যও শুনা যাচ্ছে। তাছাড়া ভুমিদস্যুরা পাহাড়ী জমি দখল করার পাঁয়তারার বিষয়টিও এড়িয়ে যাচ্ছেনা স্থানীয় সচেতনমহল।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ বছর ধরে মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা আবদুল হাকিম ডাকাত গহীন পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে এলাকায় ডাকাতি, খুন-গুম ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তাকে নির্র্মূলে গত এক মাস ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা আন্দোলন ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। এমনকি উপজেলা পরিষদ ঘেঁেষ পুরান পল্লান পাড়ায় ওই হাকিম ডাকাতের বসত বাড়ীতে এলাকাবাসী হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী হাকিম ডাকাতকে তাড়াতে পাহাড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও এড়িয়ে যাচ্ছেনা সংশ্লিষ্টরা। টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, টেকনাফের পাহাড়ে আগুন দেওয়ার বিষয়ে টেকনাফ রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে একটি সাধারন ডায়রী করেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।