হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :

রামু খিজারী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে মিনতি বড়ুয়া নামে এক অভিভাবক শিক্ষিকার হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত ৪ মার্চ রোববার আদালতে মামলা হয়েছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) কক্ষে তাঁর উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে।

মারধরের শিকার অভিভাবক গত ৪ মার্চ রোববার অভিযুক্ত শিক্ষিকা নাজনিন আকতার মেরির বিরুদ্ধে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। যার মামলা নং-৬২/২০১৮ । আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা) তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মিনতি বড়ুয়ার স্বামী মংশু মারমা পুলিশ কনষ্টেবল হিসেবে কক্সবাজার পুলিশ লাইলে কর্মরত আছেন। কিন্তু রামুতে ভাড়া বাসায় থাকত মিনতি বড়ুয়া ও তার ছেলেমেয়েরা। বর্তমানে তারা স্থায়ী বসতবাড়ী নির্মাণ করে কক্সবাজার শহরে চলে আসেন। রামু থাকাকালীন সময়ে তাদের এক ছেলে চুংচু মারমা রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে এবং রুপি মারমা ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত ছিল। চলতি বছর যোগাযোগ এবং লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার সুবিধার্থে রুপি মারমাকে পূর্বের বিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র এনে দেওয়ার শর্তে কক্সবাজার কলাতলীস্থ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। গত জানুয়ারি মাস থেকে মিনতি বড়ুয়া পূর্বের রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে মেয়ের টিসি (ছাড়পত্র) চেয়ে ধর্না দিতে থাকেন। কিন্তু তাকে ছাড়পত্র না দিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মফিজুল ইসলাম কালক্ষেপন করতে থাকেন।

সর্বশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মিনতি বড়ুয়াকে ছাড়পত্র দেওয়ার আশ্বাসে বিদ্যালয়ে আসতে বলা হয়। মিনতি বড়ুয়া তার বড় মেয়ে রুপা মারমাকে সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ে যান এবং প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বসেন। ওই সময় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নাজনিন আকতার প্রকাশ মেরি ম্যাডাম মিনতি বড়ুয়াকে দেখে তার উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করে বসেন এবং ছাড়পত্র নিতে হলে দশ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানান।

প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) নিজেও ছাড়পত্রের জন্য দশ হাজার টাকা দাবী করেন। মিনতি বড়ুয়া এত টাকা দাবী করার কারণ জানতে চান। একপর্যায়ে শিক্ষিকা নাজনিন আকতার মেরি বলেন এই মহিলার (মিনতি বড়ুয়া) সাথে কথা বললে শুকুরের দাঁত ধরার মত হবে। এতে মিনতি বড়ুয়া এর প্রতিবাদ করেন। হঠাৎ শিক্ষিকা নাজনিন আকতার মেরি বেয়াদব বলে তেড়ে গিয়ে মিনতি বড়ুয়াকে নাকে ঘুষি মারেন এবং গালে থাপ্পড় মারতে থাকেন। এরপর চুলের মুঠি ধরে টানাহেচড়া শুরু করেন।

মিনতি বড়ুয়া বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্র্াপ্ত) সামনে এই দুঃখজনক ঘটনা ঘটলেও তিনি ওই শিক্ষিকাকে কিছুই বলেননি। পরে ঘটনাস্থলে থাকা অন্য দুই শিক্ষক আমাকে ছাড়িয়ে নেন। পরে সেখান থেকে উদ্ধার করে আমাকে রামু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে ফিরে আমি রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাজাহান আলি বলেন, শিক্ষিকার মারধরের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। রামু উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. তৈয়ব চৌধুরীকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই ঘটনায় উপজেলার পক্ষ থেকে গত রোববার খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে যান বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে শিক্ষিকা নাজনিন আকতার মেরি বলেন, ২৭ ফেব্রুয়ারি আমাদের বিদ্যালয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা নিয়ে সবাই ব্যস্ত। এই পরীক্ষার অংশ হিসেবে আমি প্রধান শিক্ষকের কক্ষে যাই। গিয়ে দেখি ছেলেকে উর্ত্তীণ করে দেয়ার বিষয় নিয়ে অভিভাবক মিনতি বড়ুয়া প্রধান শিক্ষকের সাথে বাগবিতন্ডা করে যাচ্ছেন। তার দীর্ঘক্ষণ বাগবিতন্ডার এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক আমাকে ওই অভিভাবিকাকে বুঝানোর জন্য বলেন। আমি বুঝাতে গেলেই আমাকে বেয়াদব বলে তেড়ে আসেন।

তিনি বলেন- আমি নিজেই তার ছেলেকে প্রাইভেট পড়িয়েছি। আর উল্টো তিনি আমাকে বেয়াদব বলছেন। এটি খুবই লজ্জাজনক। তবে মারধরের কোনো ঘটনা হয়নি। আদালতে মামলার বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি।

এ বিষয়ে রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মফিজুল ইসলাম বলেন, মিনতি বড়ুয়া নামে এক অভিভাবকের দুই সন্তান আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারমধ্যে একজন ছেলে পাঁচ বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় নবম থেকে দশম শ্রেণিতে উর্ত্তীণ হতে পারেনি। তাকে দশম শ্রেণিতে ভর্তি করার জন্য বিদ্যালয়ে প্রায় সময় এসে তদবির চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তুু পাঁচ বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়া একজন ছাত্রকে ভর্তি না করার বিষয়ে আদেশ রয়েছে। এছাড়া তার আরেক মেয়ে কক্সবাজার শহরের একটি স্কুলে রেফার করার জন্য ছাড়পত্রের আবেদন করে। নিয়মানুসারে ৩০০ টাকা দিয়ে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তুু এই ৩০০ টাকা দিতে বিভিন্ন গড়িমসি ও ছেলেকে দশম শ্রেণিতে ভর্তি করার জন্য আমার রুমে হৈচৈ করে। এসময় আমার কক্ষে উপস্থিত হন সহকারী শিক্ষিকা নাজনিন আকতার মেরি। ওই অভিভাবকের হৈচৈ তিনি থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু এই অভিভাবক উল্টো শিক্ষিকাকে বেয়াদব বলে তেড়ে যান। এখানে কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি। তবে গত রোববার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে ঘটনার তদন্ত করার জন্য একটি টিম গিয়েছিলেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

তবে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) টিসি দিয়ে দেয়া হয়েছে বললেও অভিভাবিকা মিনতি বড়–য়া জানান, তিনি এখনো মেয়ের টিসি (ছাড়পত্র) পাননি।

এদিকে অনেক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, যেসকল ছাত্রছাত্রী তার কাছে প্রাইভেট পড়ে তিনি তাদেরকে পরীক্ষার খাতায় নম্বর বাড়িয়ে দেন। আর যারা তার কাছে প্রাইভেট পড়েন না তাদের নম্বর কম দেন এমনকি ফেল পর্যন্ত করিয়ে দেন।

বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, এর আগে ওই শিক্ষিকা বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষককে লাঞ্চিত করেন।