কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া:
মিয়ানমার জান্তা সরকার কর্তৃক রাখাইনে নানান নির্যাতন শুরু হলে উখিয়ার বালুখালীতে ভুয়া কাস্টম কর্মকর্তা পরিচয়ে ছিনিয়ে নেয়া প্রায় অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণের বার ও মুক্তিপন বাবদ নগদ ১০লাখ আত্মসাতের মূল রহস্য বেরিয়ে আসছে র্দীঘ ৫ মাস পর। এ নিয়ে বর্তমানে কাস্টম্স এলাকা সহ উখিয়ার সর্বত্রে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে কাস্টম্সে কর্মরত কয়েকজন অবৈধ শ্রমিক, সরকারী অফিসের চেয়ারে বসে এ ধরণের অন্যায় কাজ চালিয়ে যাওয়ায় এলাকায় ব্যাপক চা ল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার ধামাচাপা দিতে ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন সহ বিভিন্ন প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলকে ৬ লক্ষ টাকা বিতরণ করেছে বলে গোপন সুত্রে জানা গেছে।
ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে দুই ভুয়া কাস্টম কর্মকর্তা আবুল হোসেন প্রকাশ আবুল্যা ও তার সহকারী আবদুল হালিম ওরফে দুদুমিয়া প্রকাশ দুইদ্যা। তারা দু’জনই বালুখালী কাস্টমস চেকপোস্টে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ভাবে শ্রমিক ও পিয়ন হিসেবে কর্মরত রয়েছে।
এ অভিযোগ ভিত্তিতে উখিয়া থানা থানা এবং ঘুমধূম তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পৃথকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে। উখিয়ারঘাট এলাকার মাহবুব আলীর পুত্র জসিম ও ভুয়া সিপাহি রোহিঙ্গা আনসারুল্লাহকে ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ধরে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাবাদে পর বেরিয়ে এসেছে মূল রহস্য। তারা সেখানের অকপটে স্বর্ণ লুট ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেছে ওসব (স্বর্ণ) মৃত ছৈদ নুরের পুত্র আবুল হোসেন ও বাদশা মিয়ার পুত্র আবদুল হালিম প্রকাশ দুইদ্যার হাতে রয়েছে বলে জানায় পুলিশকে। একই ভাবে উখিয়া থানা পুলিশও নুরুদ্দিন ও আবদুর রহমান সহ কয়েকজনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সুত্রে জানা গেছে। গত ২৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটলেও পুলিশ রহস্যজনক কারনে এ পর্যন্তও ছিনতাইকারী ভুয়া কাস্টমস দুইদ্যা ও আবুল্যাকে বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রশাসনের লোকজন তদন্তে আসলে আমরা ওইসময় চোখে যা দেখেছি, তা স্পষ্ট ভাবে বলতে প্রস্তুত আছি।
সূত্র জানা যায়, উখিয়ার ঘাট বালুখালী এলাকায় বসবাসকারী মৌলভী রুহুল আমিনের ভাগিনা মিয়ানমারের রাইমন খালীর জুবাইর নামে এক যুবক মুঠোফোনে তার মামাত বোনের জামাই আনসারুল্লাহকে ৭টি স্বর্ণের বার (৭০ভরি) পাচারের খবর দেয়। পুরনো রোহিঙ্গা আনসারুল্লাহ কাষ্টমসে অবৈধভাবে কর্মরত আবুল হোসেন ও দুদু মিয়া প্রকাশ দুইদ্যাকে জানালে তারা কাস্টমস কার্যালয়ে অদূরে আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার সামনে অপেক্ষা করতে থাকে। বিকেলে টমটম বাইকযোগে আসে মংডুর আবদু ছত্তার ও রাইমন খালীর আবদুল হামিদ নামে দুই যুবক। তাদের প্রথমে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় কাস্টমস কার্যালয়ে। সেখানে কাস্টমস কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা আবুল হোসেন দায়িত্বরত অফিসারের চেয়ারে বসে মিয়ানমারের ওই দু’যুবককে হাত বেধে ফেলার জন্য তার সহযোগি দুউদ্যা ও আনসারুল্লাহকে নির্দেশ দেয়। পরে তাদের দেহ তল্লাশির পর উদ্ধার করে ৭টি স্বর্ণের বার। কেউ বুঝে উঠার আগেই আটক দুই যুবককে দুইদ্যার ঘরে নিয়ে আটকে রাখা হয়। রাতে এদের স্বজনদের নিকট থেকে ১০লাখ মুক্তিপন নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়।
উল্লেখ্য দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের সুবাদে উখিয়ারঘাট কাস্টমস কর্মকর্তা তার অফিসের গুদামের চাবি অবৈধ পিয়ন আবুল হোসেনের কাছে রেখে যান। আবুল হোসেন ওই অফিসে রাত্রি যাপন করে থাকে।