এম.মনছুর আলম, চকরিয়া:
অন্যদশ জন লোকের মত নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিশ্রম করে খেয়ে বাঁচতে চাই।
ভিক্ষা করে আর বাঁচতে চাই না।মানুষের দেয়া সামান্য কয়টি টাকায় চাল-ডাল কিনে নিজের চিকিৎসা চালিয়ে এ ভাবে আর কতদিন বাঁচব।মানুষ মানুষের জন্য। আমি আপনাদের মতো করে বাঁচতে চাই।
এমনটাই আকুতির সঙ্গে কথাগুলো বলেছিলেন দুরারোগ্য ফাইলেরিয়া ব্যাধিতে আক্রান্ত আবদু রহমান। তার বয়স ২৮বছর।
বাড়ী চকরিয়া উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডস্থ আনিসপাড়ায়। তার আবদুর রহমানের পিতার নাম মৃত টুনু মিয়া। অসহায় গরীব পিতার পরিবারের দুঃখ এখন সে।
মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা চাওয়ার সময় তার সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হয়।
চকরিয়া পৌর শহরের নিউ মার্কেটের দ্বিতীয় তলার গলিতে দেখা।
দীর্ঘ ১৬বছর যাবত ওই রোগের সাথে লড়াই করে বর্তমানে তার শরীরের অবস্থা খুবই নাজুক।টাকার অভাবে চিকিৎসা সামর্থ্য নেই।এই মুহুর্তে প্রয়োজন তার উন্নত চিকিৎসার।তিনি বাঁচার জন্য সরকার,সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও দেশের প্রতিটি বিত্তবান ব্যাক্তির কাছে জানান আকুল আবেদন।
সুত্র জানায়, একসময় মাঠে-ঘাটে ও শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবন যাপন করে আসছিল যুবক রহমান।গত ১৬বছর ধরে দুরারোগ্য ফাইলেরিয়া রোগে ভুগছেন তিনি।কাজের সামর্থ্য হারিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করেই নিজের আক্রান্ত ফাইলেরিয়া রোগের চিকিৎসা ও মা-ভাইয়ের সংসার চলে আবদু রহমানের।আবদু রহমান ১২বছর বয়স থাকাবস্থায় তার পিতা মৃত্যু বরণ করেন।তার পিতার মৃত্যুর পরথেকে মা-ভাই বোনের খাবার জোগাড় করতে দৈনিক শ্রমিক হিসেবে কাজ নেয় হোটেলে।
আক্রান্ত আবদু রহমান জানান,তার বয়স যখন ১৩ তখন হোটেলে দৈনিক মজুরী হিসেবে কাজ করে পরিবারের সংসার চালাতো। একদিন তার শরীরে জ্বর জ্বর ভাব অনুভব করেছিল।ডাক্তারের কাছে গেলে রোগ নির্ণয়ের নিরীক্ষণে ধরা পড়ে তার ম্যালেরিয়া রোগ।পরিবারের ভূলের কারণে শরীরের ফোলা জখমের ঔষধ খাওয়ান তার পরিবারের সদস্যরা।এর পর থেকে প্রথমে শরীরের পুরো অংশ ফোলা দেখা দেয়।আস্তে আস্তে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে এবং তা বড় হতে থাকে।চিকিৎসকের শরানাপন্ন হলে শরীরের উপরের অংশ কোন রখম ভাল হলেও কোমরের নীচ থেকে পা পর্যন্ত গোলাকৃত রখমের ফোলা রয়ে যায়।সংসারে মা-ভাই বোনের তাড়নায় ভাল চিকিৎসা করতে পারেননি বলে জানায়।
আবদু রহমানের মা হাজেরা খাতুন এ প্রতিবেদককে বলেন,রহমানের শরীরে প্রথমে ধীরে ধীরে গুটি উঠে ফোলে যায়।কোন রখম ঔষধ খেলে আস্তে আস্তে শরীরে মধ্যে বুকের ও পিঠের অংশ গুলো কমে যায়।কিছুদিন যেতে না যেতেই শুধুমাত্র কোমর থেকে পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত গুটি উঠে ফোলা দেখা দেয়।এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় হোমিওসহ এ্যালোপ্যাথিক ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়ে থাকলেও তাতে কোন উপকার পাইনি।এ গুটি গুলো নরম ছিল।তখন তেমন কোন জ্বালা যন্ত্রণা হত না।ফলে মাঠের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আমাদের সংসার চালাতো।পরে পরীক্ষা করিয়ে রোগ নির্ণয় করতে পারি তার ফাইলেরিয়া রোগ হয়েছে।এ রোগের জন্য চকরিয়া জমজম হাসপাতাল,ডুলাহাজারা মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রীষ্টান হাসপাতালের ডাক্তারও দেখিয়েছি।তাতেও কোন ভাল হয়নি।পরে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবদু রহমানকে হাসপাতালে ভর্তি দেয়।১৫দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর টাকার অভাবের কারণে আর চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হয়নি।পরিবারের যা ছিল এবং মানুষের কাছ থেকে ধার করে,ভিক্ষা নিয়ে কোন রখম তার চিকিৎসা করে ছিলাম।এরই পর থেকে আস্তে আস্তে শরীরের গুটিগুলো এখন বড় হয়েছে।
তিনি আরো বলেন,রহমানের পা-দুটোর গুটি এখন বড় হয়ে শক্ত মাংসপেশীতে পরিণত হয়েছে।ফলে রাতের বেলায় শুয়ে ঘুমাতে পারেন না তিনি। রাত্রে গুটিগুলোতে জ্বালাপোড়া শুরু হয়।তার জ্বালা যন্ত্রণার চিৎকারে আশ-পাশের লোকজনে ঘুম ভেঙ্গে য়ায়।রাতে বিছানায় ভাল করে শোয়া যায় না।গত ১৬বছর ধরে তিনি কাজ করতে পারেন না।এখন ভিক্ষা করে তার চিকিৎসা ও সংসার চলে।এমন অবস্থায়ও টানা ১৬বছর চিকিৎসা সেবা চালিয়ে আসছে তার পরিবার।
যুবক রহমানের রোগ নিয়ে কথা হয় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট(মেডিসিন)ডা: কবির আহমদের সঙ্গে।তার চিকিৎসা ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন,এই রোগটির নাম হচ্ছে ফাইলেরিয়া (গোদ) রোগ।এ রোগের ভাল চিকিৎসা পেলে তিনি সেরে উঠবেন।রোগটি ভাল হওয়ার জন্য ক্ষতস্থানে প্লাস্টিক সার্জারি করতে হবে।এরই পাশাপাশি নিয়মিত চিকিৎসা সেবা অব্যাহত থাকলে রোগটি থেকে যুবকটি ভাল হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।