মোঃ রেজাউল করিম, ঈদগাঁও, কক্সবাজার :

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন বলেছেন, সরকার বিদেশগামীদের দক্ষতা উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে। ইয়াবার মামলায় সকল ধরণের জামিন অযোগ্য করার চিন্তা করছে সরকার। আমাদের দেশ থেকে যারা বিদেশ যান তাদের দক্ষতা কম থাকায় দিন রাত পরিশ্রম করেও অন্য দেশের শ্রমিকদের তুলনায় অনেক কম মজুরী পান। অবৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়ার কারণে বিদেশে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। বৈধ ও সঠিক উপায়ে অভিবাসন সম্পন্ন হলে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বলতর হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তিবর্গকে দেশের স্বার্থে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি ২২শে জানুয়ারী সকালে কক্সবাজার জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘ইপসা- ফেয়ারার লেবার মাইগ্রেশন ইন বাংলাদেশ প্রজেক্ট’র আওতায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। ইপসার প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটিতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি, প্রশিক্ষণকেন্দ্র, স্বেচ্ছাসেবক কর্তৃক অভিবাসী লোকদের সহযোগিতা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় সেবাদানের লক্ষ্যে পারষ্পরিক মত বিনিময় হয়। ইউকেএইড এর বৃটিশ কাউন্সিল- প্রকাশ এর কারিগরী সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এ মত বিনিময়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ইপসার চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক খালেদা আক্তার ও কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ খোকা। উপস্থিত ছিলেন জেলা তথ্য অফিসার নাছির উদ্দীন। মতবিনিময়ে অংশ নেন কক্সবাজার নোঙ্গরের পরিচালক দিদারুল আলম রাশেদ, ঝিলংজা আ.লীগ সভাপতি সরওয়ার আলম চৌধুরী, ঈদগাঁওস্থ দুবাই প্রবাসী ফরিদুল ইসলাম প্রকাশ দুবাই ফরিদ, ঈদগাঁও সাংবাদিক শেফাইল উদ্দীন, সাংবাদিক মিছবাহ উদ্দীন প্রমুখ। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, কক্সবাজারের জীবনযাত্রা যেহেতু উন্নত সেহেতু শিক্ষার মানও উন্নত করার চেষ্টা করতে হবে। তিনি মাদকের সাথে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ জড়িত থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিশেষ অতিথি খালেদা আক্তার তার বক্তব্যে মিডিয়াকে ‘মোষ্ট পাওয়ারফুল’ উল্লেখ করে বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের নানাভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। বৈধ পথে বিদেশ গমনে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা রোহিঙ্গা ইস্যুকে প্রকট করে তুলছে। দেশের ইমেজ রক্ষার্থে মানব পাচার প্রতিরোধ ও ফেয়ার লেবার মাইগ্রেশনে সকলকে সহায়তা করতে হবে। আমাদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে। সকলের শুভ বুদ্ধি এবং দূরদৃষ্টির উদয় প্রয়োজন। অভিবাসন সম্পর্কিত তথ্যগুলো পরষ্পরের মধ্যে শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে আমাদেরকে পেশাগত সমাজকর্মী হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। সর্বক্ষেত্রে অসৎ লোককে মেনে নেয়া বাদ দিতে হবে। সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, ইপসা ১৯৮৫ সাল থেকে লক্ষিত জনগোষ্ঠির দারিদ্র বিমোচন ও অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ সমগ্র বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠির আইন ও অধিকার সংরক্ষণ, দারিদ্র দূরীকরণ, যুব ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের নেতৃত্ব বিকাশ ও দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ও পুষ্টি, এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ, প্রজনন স্বাস্থ্য, ম্যালেরিয়া, প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্য সেবা ও অধিকার নিশ্চিত করা, জলবায়ুগত কারণে ঝূঁকিপূর্ণ, জনগোষ্ঠিসহ সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, দূর্যোগ প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা, নারী ও শিশু পাচার রোধ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। উক্ত কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সরকারের সার্বিক সহায়তা গ্রহণ এবং সমন্বয়সহ স্বচছতা ও জবাব দিহিতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ঈদগাঁও ও ঝিলংজা ইউনিয়নে ২০১৭ থেকে মাইগ্রেশন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে অভিবাসনের প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে জনগণের নিকট পৌছানোর জন্য মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির জন্য লিংকেজ বৃদ্ধির কাজ করা হচ্ছে। যাতে বিদেশগামী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য রক্ষা, ন্যায্য প্রাপ্তি ও অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। অভিবাসন জনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রম অভিবাসীদের আইনী আশ্রয় ও সহায়তা প্রদানে স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করা ও রেফারেন্স ব্যবস্থাকে সহায়তা করতে একটি সেল গঠন করা। যাতে অভিবাসী লোকজন বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে স্থান, কর্মসংস্থান ও তার প্রাপ্যতা ইত্যাদি নিজেই নির্ধারণ করতে পারে। অনুষ্ঠানে ইপসার রিসার্চ এন্ড লার্নিং কর্মকর্তা মো. আবু তাহের, প্রজেক্ট কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম, ঈদগাঁওর সাংবাদিক মো. রেজাউল করিম, সমাজ সেবক নুরুল হুদা, গণমাধ্যম কর্মী নুরুল আজিম নিহাদ, ইপসা কর্মী রবিউল আলমসহ বিভিন্ন স্তরের লোকজন অংশ নেন।