১৩ দিনে স্মার্ট কার্ড পেলো পৌরসভার ৩০ হাজার ভোটার
ইমাম খাইর, সিবিএন:
২০১৮ সালের জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহেই কক্সবাজার সদরের ১০ ইউনিয়নের ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৪১ ভোটারের মাঝে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের স্মার্ট কার্ড জেলা নির্বাচন অফিসে পৌঁছেছে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ সদরের সব ভোটারের স্মার্ট কার্ড এসে পৌঁছাবে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা সিবিএনকে জানান, প্রাথমিকভাবে স্মার্ট কার্ড বিতরণের সিডিউল তৈরী করা হয়েছে। ২ জানুয়ারী ইসলামপুর ইউনিয়নে স্মার্ট কার্ড বিতরণের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, চূড়ান্ত সময়সূচি জানতে আরো দু’য়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার পৌরসভায় ‘স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র’ তথা ‘স্মার্ট কার্ড’ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। শেষ হবে ২৯ ডিসেম্বর। বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ১৩ দিনে পৌর এলাকার প্রায় ৩০ হাজার ভোটার স্মার্ট কার্ড পেয়েছে। ৬ নং ওয়ার্ড পর্যন্ত স্মার্ট কার্ড বিতরণ শেষ হয়েছে। এ সময় নির্বাচন কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার কারণে স্মার্ট কার্ড নিতে প্রচুর লোকজনের সাড়া লক্ষ্য করা গেছে। যতটুকুন সম্ভব সহজ নিয়মেই স্মার্ট কার্ড জনগণের হাতে তুলে দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
তবে, ৭ নং ওয়ার্ডে ১৪ ডিসেম্বর স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হলেও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কার্যক্রম দুই দিন (১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর) বন্ধ। ১৭ ডিসেম্বর যথাস্থানে (কক্সবাজার কেজি এন্ড মডেল হাই স্কুল) স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হবে। এরপর ৮ নং ওয়ার্ড ১৮-১৯ ডিসেম্বর, ৯ নং ওয়ার্ড ২০-২১ ডিসেম্বর, ১০ নং ওয়ার্ড ২৩-২৪ ডিসেম্বর, ১১ নং ওয়ার্ড ২৬-২৭ ডিসেম্বর এবং ১২ নং ওয়ার্ডে ২৮-২৯ ডিসেম্বর স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হবে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের দেয়া তথ্য মতে, সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৪১ জন। যারা স্মার্ট কার্ডের আওতায় পড়েছে।
২০১৭ সালে হালনাগাদ বাদে সদরের ইসলামপুরে ১১৩৫৪, ইসলামাবাদে ১৬০০৭, ঈদগাঁওতে ১৯৪৮৫, জালালাবাদে ৯৬৬৩, পোকখালীতে ১৩১৩০, ভারুয়াখালীতে ১৩৪৫৯, পিএমখালীতে ২০৫১৬, চৌফলদন্ডিতে ১৭৬১২, খুরুশকুলে ২৬৩৭৭ এবং ঝিলংজায় ২১৩৩৮ ভোটার রয়েছে। গত জানুয়ারীতে ‘রিভাইসিং অথরিটি’র মাধ্যমে নিবন্ধিত ভোটাররাও স্মার্ট কার্ডের অন্তর্ভুক্ত।
হালনাগাদ বাদে কক্সবাজার জেলায় বিদ্যমান ভোটার (হালনাগাদের পূর্বে) সংখ্যা ১৩ লাখ ২৬ হাজার ৪৩৯ জন। সেখানে সদরে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৬৩, রামুতে ১ লাখ ৫১ হাজার ৩০৬, উখিয়ায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৩২২, টেকনাফে ১ লাখ ৪৪ হাজার ১৫৭, চকরিয়ায় ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৫৩, পেকুয়ায় ১ লাখ ৪ হাজার ২২৩, মহেশখালীতে ২ লাখ ৪ হাজার ৯৪৩ এবং কুতুবদিয়ায় ৮৫ হাজার ৫৭২ জন ভোটার।
সুত্র জানায়, ২০১৫ সালের আগে যারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তারাই মূলতঃ ‘স্মার্ট কার্ড’-এর আওতায় পড়েছে। তবে এই স্মার্টকার্ড নেওয়ার সময় নাগরিকদের পুরনো কার্ড জমা দেওয়ার পাশাপাশি ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের মণির ছবি দিতে হবে। এক্ষেত্রে কারও কার্ড হারিয়ে গেলে প্রথমে পুরনো কার্ডটি তুলে তা জমা দিয়ে স্মার্ট কার্ড নিতে হবে।
নির্বাচন অফিস জানিয়েছে, স্মার্টকার্ড নেওয়ার সময় ভোটারদের নতুন করে কোনও ছবি তুলতে হবে না বা কোনও তথ্য দিতে হবে না। নির্বাচন কমিশনে প্রত্যেক ভোটারের যে ছবি ও অন্যান্য তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে, তারই ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে স্মার্ট কার্ড। অর্থাৎ ভোটারদের হাতে বর্তমানে যে লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে, তার ছবি ও অন্যান্য তথ্যযুক্ত থাকবে নতুন স্মার্ট কার্ডে। তবে, কোনও ভোটার স্মার্ট কার্ড তৈরি হওয়ার আগে ছবি পরিবর্তন বা অন্যান্য তথ্য সংশোধন করে থাকলে স্মার্ট কার্ডে নতুন ছবি পাবেন।
স্মার্ট কার্ড পাওয়ার পরও ভোটারদের ছবি বা অন্যান্য তথ্য সংশোধন/হালনাগাদের সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি জমা দিয়ে তাদের নিজ নিজ নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে। সংশোধিত নতুন স্মার্টকার্ড তৈরি হলে ভোটারের মোবাইলে এসএমএস’র মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। পরে তারা উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে তা সংগ্রহ করবেন।
পুরনো কার্ড জমা না দিয়ে নতুন কার্ড নয়:
প্রত্যেক ভোটারকে স্মার্ট কার্ড নেওয়ার সময় তাদের কাছে থাকা কার্ডটি জমা দিতে হবে। পুরনো কার্ড না দিয়ে নতুন কার্ড পাওয়া যাবে না। কারও কার্ড হারিয়ে গেলে কেবল পুলিশি ডায়রির কপি বা অন্য কোনও অঙ্গীকারনামা দিলেও হবে না। এক্ষেত্রে জিডি করে ভোটারকে ইসির নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে আগে পুরনো কার্ড তুলতে হবে। এরপর সেই কার্ড জমা দিয়ে স্মার্ট কার্ড নিতে হবে।
নতুন ভোটাররা পাবেন জমা স্লিপে স্মাট কার্ড:
গত ২০১৪ ও ২০১৫ সালে নির্বাচন কমিশন ভোটার হালনাগাদ করলেও এই দ্ইু বছরে যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তাদের এখনও কোনও কার্ড সরবরাহ করা হয়নি। এসময়ে নতুন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সময় যে স্লিপ দেয়া হয়েছে, তা জমা দিয়ে স্মার্ট কার্ড নেবেন। তবে, জরুরি প্রয়োজনে এসব নতুন ভোটারের মধ্য থেকে কেউ লেমিনেটেড জাতীয় পরিচত্রপত্র নিয়ে থাকলে স্মার্ট কার্ড নেওয়ার সময় সেই কার্ড ফেরত দিতে হবে।
কেন ১০ আঙ্গুল ও চোখের মণির ছবি:
এনআইডির তথ্যভান্ডারে নাগরিকদের হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল ও তর্জনির ছাপ রয়েছে। ২০০৮ সালে এই ছাপ সংগ্রহে অনেক ত্রুটি ছিল। এছাড়া বয়স বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে আঙ্গুলের ছাপে পরিবর্তন হতে পারে। এমনটা চিন্তা করে ইসি নতুন করে দুই হাতের ১০ আঙ্গুলের ছাপ চোখের মণির (আইরিশ) ছবি সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০-এ বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়ের জন্য একজন নাগরিকের বায়োমেট্রিক ফিচার যথা আঙ্গুলের ছাপ, হাতের ছাপ, তালুর ছাপ, আইরিশ বা চোখের কণিকা, মুখাবয়ব, ডিএনএ, স্বাক্ষর ও কণ্ঠস্বর সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু এ কাজের অনেকটাই বাকি রয়ে গেছে।
স্মার্টকার্ড এর বিস্তারিত:
জালিয়াতি রোধে জাতীয় পরিচয়পত্রকে আধুনিকভাবে তৈরি, যন্ত্রে পাঠযোগ্য জাতীয় পরিচয়পত্রকেই ‘স্মার্ট কার্ড’ বলে। একে ভোটার আইডি বলেও অভিহিত করা হয়। বর্তমানে যে পরিচয়পত্র বা কার্ড চালু রয়েছে তা সাধারণ পাতলা কাগজে প্রিন্ট করে লেমিনেটিং করা। যার প্রথম পৃষ্ঠায় নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ ও আইডি নম্বর এবং অপর পৃষ্ঠায় ঠিকানা দেওয়া। ফলে এই কার্ডটি সহজেই নকল করা সম্ভব। অসাধু ব্যক্তিরা এটি সহজেই নকল করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে।
নাগরিক ভোগান্তি ও হয়রানি রোধ করতেই স্মার্ট কার্ড তৈরির প্রকল্প হাতে নেয় ইসি। এটি যন্ত্রে পাঠযোগ্য। অসাধু ব্যক্তিরা সহজেই নকল করতে পারবে না। ভোটারের বা পরিচয়পত্রধারীর আইডি নম্বর ঠিকানাসহ যাবতীয় তথ্য এই আইডিতে সংরক্ষিত থাকবে। শুধুমাত্র যন্ত্রের সাহায্যে এসব তথ্য পাঠ করা যাবে। টেকসই ও সুন্দর অবয়বে এ কার্ড বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় তা সাধারণভাবে স্মার্টকার্ড হিসেবেই বিবেচিত হবে। স্মার্টকার্ডে প্রায় ২৫ ধরনের নাগরিক সেবা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে ই-পাসপোর্ট এবং ইমিগ্রেশন সেবাসহ বহুবিধ কাজে এই কার্ড ব্যবহার করা যাবে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, স্মার্টকার্ড হবে মেশিন রিডেবল, যা কার্ড জালিয়াতির হাত থেকে বাড়তি নিরাপত্তা প্রদান করবে। পরপর দুবার হারালেই কার্ড সংগ্রহে ভোটারকে জরিমানা দিতে হবে দুই থেকে চার হাজার টাকা।