ইমরান হোসাইন, পেকুয়া:
পেকুয়ায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন স্টেশন নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণকৃত সংরক্ষিত সরকারী জমিতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে লবণ চাষ করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। চলতি মৌসুম শুরুর দিকে চক্রটি এসব জমিতে অনুপ্রবেশ না করলেও সম্প্রতি প্রায় ১০০ একর জমিকে লবণ উৎপাদন উপযোগী করছে তারা। যার নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য জায়েদুল হক, আশু মাঝি, বাদশা মাঝি ও সাবেক ইউপি সদস্য শাহ আলম, সলিম, মনির, বেলাল, হবিব, নুর আহম্মদ, আকতার, গিয়াস উদ্দিন ও আবুল হোসেন। তারা প্রত্যেকেই ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াসিমের অনুসারী বলে পরিচিত।

জানা গেছে, নৌবাহিনীর সাবমেরিন স্টেশন স্থাপনের জন্য পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে ৪১৯.৮৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে বাংলাদেশ সরকার। যার ক্ষতিপূরণ ইতিমধ্যে স্ব স্ব জমির মালিকদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

কিন্তু সাবমেরিন স্টেশন স্থাপন কাজ শুরু না হওয়ার সুযোগে এসব জমিতে আবাদ শুরু করেছে প্রভাবশালীরা। এতে সরকারী এসব মূল্যবান জমি বেদখল হওয়ার আশংকা রয়েছে। অধিগ্রহণ করা মোট জমির মধ্যে চাষাবাদ যোগ্য জমি রয়েছে ৩১৩ একর। যার প্রায় এক হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। তাই এসব জমির উপর লোলুপ দৃষ্টি প্রভাবশালীদের।

স্থানীয়রা জানান, চাষাবাদ যোগ্য এসব জমি চলতি মৌসুমে লিজের জন্য জমির মালিকসহ প্রভাবশালীদের বেশ কয়েকটি পক্ষ কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু জেলা প্রশাসক তা নাকচ করেন। একইভাবে লিজের জন্য নৌবাহিনীর কাছে আবেদন করা হলে সেখানেও লিজ আবেদন নাকচ করা হয়।

আবেদনকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, চকরিয়া-পেকুয়ার সাংসদ হাজী মোঃ ইলিয়াছ, পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু, মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা শরাফত উল¬াহ ওয়াসিম, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য আবু হেনা মোস্তাফা কামাল, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা রুস্তম আলী, মগনামা ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সোলতান মাহমুদ রিপন, চকরিয়ার ঢেমুশিয়া ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আজম উদ্দিন, বিএনপি নেতা রিদুয়ানুল হক, জমির মালিক তানভীর হাসান চৌধুরী, কাজের মোঃ কাইছার, মইন উদ্দিন প্রমূখ।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, লিজ আবেদন নাকচ হওয়াতে অধিকাংশ আবেদনকারী জমিতে লবণ আবাদ থেকে সম্পূর্ণ সরে গেলেও সরকারী এসব সম্পত্তির ১৫০ একর জমি অবৈধভাবে লাগিয়ত দিয়েছেন মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল¬াহ ওয়াসিম। বর্তমানে যারা নৌবাহিনীর এসব জমিতে লবণ চাষে নেমেছেন তারা সবাই চেয়ারম্যান ওয়াসিমের লোকজন।

ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী, অধিগ্রহণ করা জমিতে নিদিষ্ট প্রকল্প কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত ভূমির মালিক সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে চাষাবাদ করতে পারবেন। কিন্তু এসব আইনকে বৃদ্ধাংগুলি প্রদর্শন করে এসব জমিতে জোরপূর্বক অনুপ্রবেশ করেছে চেয়ারম্যান ওয়াসিমের লোকজন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জায়েদুল হক বলেন, জমির পূর্বের মালিকদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কিছু চাষী নৌবাহিনীর জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিতে লবণ উৎপাদনে নেমেছিল। কিন্তু নৌবাহিনী কর্তৃপক্ষের বাঁধার মুখে তাঁরা সরে এসেছে।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের এই অপকর্মের বিরুদ্ধে যাতে কেউ সোচ্চার হতে সাহস না পায়, সেজন্যে পুরো মগনামা জুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে চেয়ারম্যান ওয়াসিমের নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র বাহিনী। তারা প্রত্যেক রাতেই ফাকা গুলিবর্ষণ করে ভীতি ছড়াচ্ছেন মগনামায়। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাখায় এই সন্ত্রাসী গ্রুপের বিরুদ্ধে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তারা।

কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য ও পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, লবণ মাঠ ও চিংড়ি ঘের জবর দখল করতে মগনামা ব্যাপক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ করেছে চেয়ারম্যান ওয়াসিম বাহিনী। তারা পুরো মগনামাবাসীকে জিম্মি করে রেখেছে। এব্যাপারে আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি। মগনামার এসব অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র অতিদ্রুত উদ্ধার করা হোক।

পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু বলেন, বৃহত্তর স্বার্থ না থাকলে জমিগুলো পতিত না রাখায় ভালো। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমার দাবি থাকবে, মধ্যস্তত্বভেীদের না দিয়ে জমির প্রকৃত মালিকদের চষাবাদের অনুমতি দেয়া হোক। এতে তারা উপকৃত হবে।

এব্যাপারে জানতে নৌবাহিনীর কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায়নি।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল করিম বলেন, আমি শুনেছি কিছুদিন আগে অধিগ্রহণকৃত এসব জমিতে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে স্থানীয় কিছু মানুষ লবণ চাষের চেষ্টা চালায়। এসময় তাদের সরিয়ে দেয় নৌবাহিনী। তবে এসব জমির দেখভালের দায়িত্ব নৌবাহিনী কর্তৃপক্ষের। বর্তমান পরিস্থিতি সর্ম্পকে আমি খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।