হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ:
নাফ নদী নির্ভর কয়েক শত জেলে ও জেলেনী টেকনাফের নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্দ রাখার প্রতিবাদে অসহায় জেলেরা বিক্ষোভ করেছেন। বৃহষ্পতিবার ৩০ নভেম্বর দুপুর ১২টায় টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা এলাকার নাফ নদী নির্ভর জেলেরা সমবেত হয়ে নাফ নদীতে মাছ শিকারের অনুমতি দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এসময় তাঁরা একাধারে ৩ মাস নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্দ থাকায় উপকুলীয় জেলে পরিবারে দুর্দিন, অর্ধাহারে অনাহারে দিন যাপন করার কথা তুলে ধরে রেশন চালু করার দাবি জানান। তাছাড়া তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরে টেকনাফস্থ বিজিবি’র অধিনায়ক, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, টেকনাফ সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন। হ্নীলা জলদাস পাড়ার ২ শতাধিক জেলে পরিবারের পক্ষে দেয়া স্মারকলিপিতে দুঃখ-দুর্দশার কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে নাফ নদীতে মাছ শিকার করার অনুমতি অথবা জীবন রক্ষার্থে রোহিঙ্গাদের ন্যায় জলদাস পাড়ার সকল জেলেদের রেশন দেয়ার আবেদন জানানো হয়। টেকনাফ সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ দেলোয়ার হোসেন স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। এসময় হতাশাগ্রস্থ অনেক জেলে ও জেলেনী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। টেকনাফ সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ দেলোয়ার হোসেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের দায়িত্বে থাকা একাডেমিক সুপারভাইজার মোঃ নুরুল আবসার, মৎস্য কার্যালয়ের শহিদুল আলম অফিস থেকে বের হয়ে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ রত জেলেদের মাঝে গিয়ে শান্তনা দিয়ে সরকারী সিদ্ধান্তের বিষয়টি অবহিত করে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।

টেকনাফের হ্নীলা জলদাস পাড়া থেকে আসা জেলে মাস্টার চন্দ্র সেন জলদাস, রামপদ জলদাস, সঞ্জিত জলদাস, প্রকাশ জলদাস, কাসিমোহন জলদাস, মিলন জলদাস, বাবুল জলদাস, দুলাবাঁশী জলদাস, কালারাম জলদাস, ভাগ্যধন জলদাস, স্বপন জলদাস, সামপদ জলদাস, চন্দ্রনাথ জলদাস, নিশিরঞ্জন জলদাস, জেলেনী নীলমণি জলদাস, ললিতা জলদাস, যমুনা জলদাস, রুপালী জলদাস, শ্যামলী জলদাস, রিনা জলদাস, রেনুবালা জলদাস, মঞ্জু জলদাস বলেন ‘নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্দ থাকায় অর্ধাহারে অনাহারে জীবন কাটাচ্ছেন কয়েক হাজার জেলে পরিবার। এরপর ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ২৩ অক্টোবর থেকে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও সাগরে মাছ শিকার শুরু হলেও টেকনাফের নাফ নদীতে মাছ শিকার অঘোষিত বন্ধ রাখা হয়েছে। একটানা মাছ শিকার বন্ধ থাকার ফলে নাফ নদী নির্ভর জেলে পরিবারগুলোতে নেমে আসে দূর্দশা। জীবন কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে। বিকল্প কোন আয়ের উৎস না থাকায় জেলে পরিবারের মধ্যে চলছে হাহাকার। অনেকেই দু’বেলা খাদ্য যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। মাছ শিকার বন্ধ থাকায় নাফ নদীর পাশ্ববর্তী বাজার গুলোতে মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া টেকনাফে মিঠাপানির মাছ তুলনামুলকভাবে অনেক কম। ফলে নাফ নদী ও সাগরের মাছের উপর পুরো উপজেলা নির্ভরশীল। নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধের ফলে আয় রোজগার নেই। ফলে এক বেলা খেতে পারলেও আরেক বেলা খেতে খুব কষ্ট হচ্ছে’।

জেলে ও জেলেনীরা আরও বলেন ‘আদীকাল থেকে আমরা নাফ নদীতে মাছ ও কাঁকড়া শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। টাকার অভাবে কর্জ করে জাল ও নৌকা করতে হয়েছে। ৩ মাস ধরে নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্দ থাকায় একদিকে সংসারের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছেনা, অন্যদিকে কর্জ পরিশোধ করা যাচ্ছেনা। এভাবে নাফ নদীর উপর নির্ভর টেকনাফ উপজেলার প্রায় ৮ হাজার জেলে ও তাদের পরিবার ৩ মাস ধরে অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। টেকনাফ উপজেলা প্রশানের পক্ষ থেকে জেলেদের পুর্নবাসনের কথা বলা হলেও এপর্যন্ত কোন সাহায্য পাওয়া যায়নি’। এব্যাপারে টেকনাফ সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন ‘মিয়ানমারের সহিংসতা, ইয়াবা পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকারী নির্দেশে নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়েছে। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত উক্ত নির্দেশ নির্ধারিত ছিল। এরপর নতুন নির্দেশনা আসায় উক্ত নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। এ সময়ের জন্য তালিকাভুক্ত জেলেদেরকে বিশেষ কর্মসুচীর আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা চলছে। তাছাড়া বিষয়টি উর্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে’।