ডেস্ক নিউজ: 
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘আমি তো প্রথমে বলেছি যে, বিচার বিভাগ ভারমুক্ত হলো। বিচার বিভাগের কোনও লোক যদি কোনোরকম দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকে, নৈতিক স্খলনের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে কোনও ক্রমেই তার বিচার বিভাগে থাকা উচিত নয়।’

রবিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলতে শুধু প্রধান বিচারপতিকেই বোঝায় না। সব ক’জন বিচারপতিকে এবং প্রধান বিচারপতিকে বোঝায়। যেদিন অন্য বিচারপতিরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একত্রে বসে মামলা নিষ্পত্তিতে অনীহা প্রকাশ করলেন এবং রাজি হলেন না, সেদিনই জিনিসটা ফয়সালা হয়ে গেছে। সেদিনই কিন্তু আমি বলেছিলাম, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলাম, প্রধান বিচারপতি হিসেবে ফিরে এসে দায়িত্ব গ্রহণ করা ওনার জন্য সুদূরপরাহত। আসলে পদত্যাগ করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। কারণ অন্য বিচারপতিরা যদি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে না বসতে চান, তাহলে তার অন্য কোনও পথ থাকে না।’

এতগুলো অভিযোগ সত্ত্বেও এসকে সিনহাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে দেওয়া, দেশের বাইরে থেকে তার পদত্যাগ এবং বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থার চিড় ধরানোর সুযোগ করে দেওয়ার মতো ঘটনায় সরকারের গাফিলতি কতটুকু–জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সরকারের কোনও গাফিলতি নেই। একজন ব্যক্তির ব্যাপারে যদি কোনও রকম অভিযোগ থাকে এবং সবচেয়ে বড় কথা, তিনি প্রধান বিচারপতি; তার ব্যাপারে তো সাধারণ আদালতে গিয়ে মামলা করা যায় না। এটা রাষ্ট্রপতির গোচরে গেছে, রাষ্ট্রপতি অন্য বিচারকদের এটা জানিয়েছেন। অন্য বিচারপতিরা তার (এসকে সিনহা) সঙ্গে বসতে রাজি হননি। এটিই হলো বাস্তব।’

মাহবুবে আলম বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে কোনোদিন এ ঘটনা ঘটেনি যে, সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এবং ওনার (প্রধান বিচারপতি) সঙ্গে না বসার কারণ দেখিয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে এখন যারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ নিয়ে নানা রকম বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাচ্ছে এবং নানা রকম বক্তব্য দিচ্ছে; এগুলো অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয় এবং শুধুমাত্র রাজনীতির খাতিরে তারা এ কথা বলছে।’

এখন এসকে সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে দুদক তদন্ত করতে পারবে কিনা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটি রাষ্ট্রপতির বিষয়। রাষ্ট্রপতি কী করবেন সেটি তিনিই জানেন।’

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগে কোনও সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনও শূন্যতা নেই। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এখনও সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রধান বিচারপতি। তার পদত্যাগ কার্যকর হয়েছে কিনা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আজ হোক,কাল হোক– এটা হয়তো ওয়েবসাইটে কারেক্ট হয়ে যাবে।’

পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটি রাষ্ট্রপতি হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে যায়। গেজেট প্রকাশ করতে হয়। সেগুলো বড় কথা নয়। আমাদের সংবিধানে আছে তিনি স্বহস্তে দরখাস্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে দিলে এটি কার্যকর হবে।’

যেসব রায় উনি দিয়েছেন সেগুলোর কী হবে জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘রায় তো উনি একা দেননি। আমি সে কথাই বারবার বলছি, আমাদের বিচার বিভাগে এককভাবে কোনও বিচারপতি বিচার করেন না। আপিল বিভাগে বিশেষ করে, বিচার যেগুলো করা হয়েছে, অন্য বিচারপতিরাও ওনার সঙ্গে ছিলেন। সুতরাং, ওইসব রায়ে কোনও প্রভাবই পড়বে না এবং রায়ের কার্যকারিতাও কোনোরকম ক্ষুণ্ন হবে না।’

রায়ে বিচারপতিদের স্বাক্ষরের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন,‘রায়টা যদি ঘোষিত হয়ে থাকে, তাহলে ওনার পক্ষে অন্য একজন স্বাক্ষর করবেন। যেটা আমাদের সুপ্রিম কোর্টের বিধান– একজন বিচারপতি যদি একটি মামলা শোনেন, হঠাৎ তিনি যদি পদত্যাগ করেন বা মারা যান, এটার রুলস-ই আছে, তার পক্ষে অন্য একজন সই করবেন।’

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউয়ের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি। এক্ষেত্রে বেঞ্চের কোনও পরিবর্তন হবে কিনা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘নিয়মটা হলো– যে কয়জন বিচারপতি একটি রায় দিয়েছেন, রিভিউ করতে হলে তত সংখ্যক বিচারপতি লাগে বা তার থেকে একজন বা দুজন বেশি লাগে।’ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দিয়েছিল সাত বিচারপতির বেঞ্চ। আপিল বিভাগে এখন আছেন পাঁচজন বিচারপতি।

এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘অন্য বিচারপতিরা সব মন্তব্য বা রায়ই সংশোধন,পরিবর্তন বা বাতিলও করতে পারবেন।’