মোহাম্মদ শফিক:
কক্সবাজার শহরের পানবাজার ও হাসপাতাল সড়কের বিভিন্ন ফার্মেসি ও ডেন্টাল ক্লিনিকে যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে বিভিন্ন দোকানকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা জমিরানা এবং ২ ভুঁয়া ডাক্তারসহ ৫ জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন কর্মকর্তা মোঃ সরওয়ার আলম।
দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়ায় সিলগালা করা হয়েছে ৫ টি ডেন্টাল ক্লিনিক। জেলা প্রশাসন, র‌্যাব ও ওষুধ প্রশাসনের এ অভিযান বুধবার দুপুর থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৫টার দিকে সমাপ্তি হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাব-৭ এর কক্সবাজার ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোঃ রুহুল আমিন। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ হাসান মোস্তফা, কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের ডাঃ মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর, ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক প্রিয়াংকা দাশ গুপ্তা, র‌্যাবের অতিক্তি পুলিশ সুপার হাসান মোস্তফা স্বপন প্রমূখ।
তবে, অভিযানে জরিমানা ও সাজাকে অযৌক্তিক বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ডেন্টাল চিকিৎসক। তাদের দাবী, ডেন্টাল চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র দেয়ার স্বীকৃতি রয়েছে। এ বিষয়ে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ হয়েছে বলে তারা দাবী করেন।
র‌্যাব-৭ এর কক্সবাজার ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোঃ রুহুল আমিন জানান, অনুমোদনহীন ও আমদানি নিষিদ্ধ ওষুধ মজুদ ও বিক্রি, ক্লিনিক্যাল ফ্রিজে যথাযথ তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষন না করা, স্যা¤পলের জন্য প্রদত্ত ওষুধ মজুদ ও বিক্রির অভিযোগে শহরের পানবাজার সড়কের খাঁন মার্কেটের আশা মেডিকেল হলকে ৭৫ হাজার জরিমানা, একই দোকানের ভূঁয়া চিকিৎসক কমল কান্তি ভট্রাচার্যকে ২ বছরের সাজা দিয়েছে অভিযানকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
শ্যামলী প্লাস ফার্মেসীতে ভেজাল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ রাখার দায়ে ভাস্কর দাশ ও সাগর দাশ নামের আরো ২ জনকে ৬ মাস করে সাজা দেওয়া হয়। ওই মার্কেটের রুস্তুম মেডিকোকে ৭৫ হাজার টাকা, ঝিনুক ফার্মেসীকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অন্যদিকে হাসপতাল সড়কের ওরাল ডেন্টাল কেয়ারের ভূঁয়া ডাঃ শাখাওয়াত হোসেন রাব্বিকে দেড় বছর এবং কর্মচারী নূর মোহাম্মদ ও আশরাফ উদ্দিনকে ৩ মাস করে সাজা দেওয়া হয়।
পরে ওরাল ডেন্টাল কেয়ারের কোন বৈধ কাগজপত্র না থাকায় দোকান সিল গালা করা হয়। একই সড়কের ফেমাস ডেন্টাল কেয়ারের ডাঃ নজরুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ বছর সাজা দেয়া হয়। ডিজিটাল ডেন্টাল সার্জারীর টেকনিশিয়ান বায়েজিদ রহমানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
র‌্যাবের অভিযান টের পেয়ে ডাক্তার পালিয়ে যাওয়ায় ওরাল ডেন্টাল কেয়ার, কক্স ডেন্টাল সার্জারী, প্যাশেন্ট গ্যালারী, ডেন্টাল ক্লিনিক ও ফ্যামিলি ডেন্টাল সার্জারী, পপুলার ডেন্টাল সার্জারী ক্লিনিক সিলগালা করা হয়।
র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন কর্মকর্তা মোঃ সরওয়ার আলম জানান, ওষুধ প্রশাসনের ১৮/২৭ ধারা ও ২০১০ সালের ভোক্তা অধিকার আইনের ৫২ ধারায় ভেজাল, মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং ভূয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
র‌্যাব জানায়, শুধুমাত্র মানবিকে এসএসসি পাশ করে এমবিবিএস, এমডি পরিচয় দিয়ে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার আশা মেডিকেল হলে রোগী দেখছেন ভুয়া ডাঃ কমল কান্তি ভট্টাচার্য। তিনি নিয়মিত রোগী দেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করার জন্য শহরের ডক্টর চেম্বার এ তার রোগী পাঠান। সেখানে রোগীদের বিভিন্ন ধরনের প্যাথলজিক্যাল টেস্ট রিপোর্ট দেখে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত এ ধরনের কর্মের সাথে জড়িত। ভ্রাম্যমান আদালত তাকে দুবছরের কারাদন্ড দেন।
অপরদিকে হাসপাতাল রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেখা যায় মানবিক/বাণিজ্য বিভাগে এসএসসি পাশ করা লোক নিজেদেরকে বিভিন্ন ডিগ্রিধারী দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করছে।
ফ্ল্যাশব্যাক
কক্সবাজার শহরের হাসপাতাল সড়ক। দু’পাশের বাহারী ডিগ্রীধারী দাঁতের ডাক্তারদের আলিশান চেম্বারগুলোর শান-শওকত ছিল চোখে পাড়ার মতই। থাই গ্লাসের ডেকেরেশন, ডিজিটাল নিয়ন সাইন বোর্ড, এয়ারকন্ডিশন ডক্টর রুম ও সার্জারী রুম, রকমারী যন্ত্রপাতি, কম্প্রেসার মেশিন ও অপারেশন থিয়েটার সব মিলিয়ে এলাহী কান্ড। ডাক্তার মহাশয়রাও ইতিমধ্যেই ডজন ডজন ডিগ্রী নিয়ে ফেলেছেন। আর সাইনবোর্ড জুড়ে সেসব ডিগ্রীর হা-বিতং বর্ননা! রোগীদের আনাগোনাও ছিল চোখে পড়ার মতই। সব মিলিয়ে ভালই পাশার জমিয়ে বসেছিলেন তারা। কিন্তু বিপত্তি বাঁধল বুধবার দুপুরে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, র‌্যাব-৭ ও কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তারা ততক্ষনে যৌথ অভিযান শুরু করেছেন। আর অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে পালাতে শুরু
করেছেন এতদিনের দাপুটে দাঁতের ডাক্তারগণ ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। তাড়াহুড়া করে পালাতে গিয়ে চেম্বার বন্ধ করার সময়ও পাননি কেউ কেউ। কিন্তু ততক্ষনে আটক করা হয়েছে অনেককে। এতদিনের বিশেষজ্ঞ দন্ত চিকিৎসকরা কেউ এসএসসি আবার কেউ এইচএসসি অথবা আর কেউ নাম মাত্র প্রশিক্ষিত। এ নিয়েই তারা রোগীদের দাঁত বাঁধানো, তোলা, রুট ক্যানাল ও ডেন্টাল সার্জারী করে আসছিলেন এতদিন। রেজিষ্ট্রারে উল্লেখিত ডাক্তার ফি, রোগীদের বর্ণনা ও দৈনিক আয় দেখে অভিযানকারী ও উপস্থিত সাংবাদিকরা হতবাক।