ইমাম খাইর, সিবিএন
কক্সবাজারে শুরু হওয়া ৫ দিনব্যাপী আয়কর মেলায় করদাতাদের মাঝে প্রচুর সাড়া পড়েছে। শুক্রবার বন্ধের দিন হওয়ায় সকাল থেকে প্রচুর করদাতা লক্ষ্য করা গেছে। কার আগে কে করের অর্থ জমা করবে সে প্রতিযোগিতা। আর আয়োজকরাও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন কর প্রদান করতে আসা লোকদের।
কর দিতে আসা চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা কলেজের ইংরেজি শিক্ষক নুরুল আলম জিকু বলেন, আমি চতুর্থ বারের মতো আয়কর দিতে আসলাম। নিজের আয়ের উপর কর দিতে পেরে খুব ভাল লাগছে। সাগ্রহে প্রতি বছর আমি আয়কর পরিশোধ করে থাকি। গত বছরও ৯৫৩০ টাকা আয়কর দিয়েছি।
শাহাদাত হোসাইন চৌধুরী নামের আরেক করদাতা বলেন, বিগত ৪ বছর ধরে আয়কর দিচ্ছি। এবারও ৯৮৮০ টাকা প্রদান করেছি। একজন সুনাগরিক হিসেবে নিজ দায়িত্ববোধ থেকে আয়কর প্রদান করেছি।
তবে, আয়কর মেলায় ঢুকার পথে বেশ সুন্দর আয়োজন চোখে পড়লেও মেলাঙ্গনে বসার পর্যাপ্ত করা হয়নি বলে সমালোচনা করেন এই করদাতা। শাহাদাত হোসাইন চৌধুরী ট্রাস্ট ব্যাংকের রামু শাখার কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের খুরুশকুল সড়ক সংলগ্ন এস.কে টাওয়ারস্থ আয়কর অফিস প্রাঙ্গনে ৫ দিনব্যাপী আয়কর মেলা উদ্বোধন করেন কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। মেলা শেষ হবে ৬ নভেম্বর। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত করদাতা ও সর্ব সাধারণের জন্য মেলা উম্মুক্ত থাকবে।
কক্সবাজার আয়কর অফিসের সহকারী কর কমিশনার মোঃ জাকারিয়া হোসেন জানান, আয়কর মেলার প্রথম দিনে ৮ লাখ ২৯ হাজার ৮৫ টাকা আয়কর আদায় হয়েছে। রিটার্ন জমা পড়েছে ৩৩৭টি। টেক্সকার্ড প্রদান করা হয় ১৬৩। নতুন ই-টিআইএন গ্রহণ করেছে ১১ জন।
৫ নভেম্বর পর্যন্ত (চার দিন) মেলা চলবে কক্সবাজার সার্কেল-৮৪, ৮৫ ও ৮৬ তে। ৫ নভেম্বর সার্কেল-৮৭ টেকনাফ ও রামু উপজেলায়। ৬ নভেম্বর সার্কেল-৮৮ চকরিয়াতে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় তথ্য সেবা প্রদান, আয়কর রিটার্ন পূরণে সহায়তা, কর প্রদানের জন্য চালান সরবরাহ, আয়কর রিটার্ন গ্রহণ, ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন/রি-রেজিস্ট্রেশন এবং আনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের নির্দেশনা প্রদান করা হবে।
মেলার উদ্বোধনী সভায় এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বলেছেন, আয়কর দেশের উন্নয়নের অন্যতম চালিকা শক্তি। আয়করদাতারা দেশের সম্পদ। আমরা আয়কর না দিলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উন্নয়ন বঞ্চিত হবে। দেশের উন্নয়নের যাত্রায় নিজেকে শরিক করতে যে যার মতো আয়কর দিতে অভ্যস্ত হই। সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের আয়কর দিয়ে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করা দরকার।
তিনি আরো বলেছেন, যখন বাংলাদেশ সৃষ্টি হয় তখন পাকিস্তানীরা আমরা না খেয়ে থাকব বলে প্রচার করে। কিন্তু অল্প সময়ে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর ১৯৪টি দেশর মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়। মানুষের মাঝে আয়কর প্রদানে সচেতনা বেড়েছে। আমাদের রিজার্ভ বেড়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত আয়ের দেশে পরিণত হবে।কর অঞ্চল-৪ এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মুহাম্মদ মফিজ উল্যাহর সভাপতিত্বে আয়কর মেলার প্রথম দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম রহিমুল্লাহ, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল কুদ্দুস, কক্সবাজার কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট ছৈয়দুল হক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহকারী কর কমিশনার জ্ঞানেন্দ্র বিকাশ চাকমা।
এর আগে মেলায় আগত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বরণ করেন কক্সবাজার আয়কর অফিসের সহকারী কর কমিশনার মোঃ জাকারিয়া হোসেন, ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আমান উল্লাহ, গোলাম কিবরিয়াসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লোকজন। অতিথিদের সারিবদ্ধ হয়ে অভ্যর্থনা জানায় কক্সবাজার শহরের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে কক্সবাজার আয়কর অফিসের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৬-২০১৭ অর্থ সালে ১০১৮৯ রিটার্নের বিপরীতে ৭৪ কোটি ৪ লাখ টাকা আয়কর আদায় হয়েছে। যা গেল গেল অর্থ বছরের চেয়ে প্রায় ৯ কোটি টাকা বেশী। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। জেলায় মোট করদাতা সংখ্যা ১৭ হাজার ৬২২ জন।
২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে কর অঞ্চল-৪ এর অন্তর্ভুক্ত কক্সবাজার এর ৫টি সার্কেলে মোট আয়কর আদায় হয়েছিল ৬৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। ওই বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮ কোটি ৪ লাখ টাকা। এর আগের অর্থ বছর ৪২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয়কর আদায় হয় ৪৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। মূলতঃ করদাতাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দিন দিন আয়কর আদায় বাড়ছে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিদর্শী রেঞ্জ-৪ (কক্সবাজার) ৫টি সার্কেলের মধ্যে সার্কেল-৮৪, ৮৫ ও ৮৬ (বৈতনিক শাখা) কক্সবাজার শহরের খুরুশকুল রোড় সংলগ্ন এস.কে টাওয়ারে। সার্কেল-৮৭ টেকনাফের বিজিবি রোড়স্থ জাকারিয়া ম্যানশনে এবং সার্কেল-৮৮ চকরিয়া থানা রোড় এলাকার প্রমিলা ভবনে অবস্থিত।