হাতির আকুতি!

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর, ২০১৭ ০৯:০২

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


আজিম নিহাদ
এক সময় মানুষ আর প্রাণীর পাশাপাশি বসবাস ছিল। হাতিও ছিল অসংখ্য। হাতি আর মানুষের মধ্যে কোন সংঘর্ষ ছিল না। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে সে দৃশ্য পাল্টে যায়। নির্বিচারে বন উজাড় শুরু করে মানুষ। ধীরে ধীরে হাতি হারাতে থাকে তাঁর আবাসস্থল। অস্থিত্ব সংকটে পড়ে প্রতিশোধের নেশায় হাতিও হিংস্র হয়ে উঠে। বাড়তে থাকে মানুষ আর হাতির মধ্যে সংঘর্ষ।
বেঁচে থাকার লড়াই চালাতে গিয়ে এক সময় পরিবেশ বিধ্বংসী মানুষের কাছে হার মেনে যায় এই প্রাণী। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা পড়ে সবচেয়ে বড় হাতিটি। বাস্তব ঘটনা মনে হলেও এটি ছিল একটি প্রদর্শনী।
কক্সবাজারের হিমছড়ির পেঁচারদ্বীপে অবস্থিত পরিবেশ বান্ধন পর্যটন স্পট ‘মারমেইড ইকো রিসোর্টে’ প্রথমবারের মত শুরু হয়েছে হাতি প্রদর্শনী। এটি চলবে আগামি ছয় মাস পর্যন্ত। গতকাল সকাল ৯টায় ছিল হাতি প্রদর্শনীর উদ্বোধনী। প্রথমদিনের প্রদর্শনীতে ‘হাতি আর মানুষের দ্বন্দ্বের’ এই দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। প্রদর্শনীর সঙ্গে সঙ্গে হাতির এই গল্প কণ্ঠ মিলিয়ে তুলে ধরেন শাহানা আক্তার। তিনি ভুমিকা নেন একজন বন কর্মকর্তার। এতে তিনটি হাতি প্রদর্শন করা হয়।
শিশু ও নারী-পুরুষেরা এই প্রদর্শনীতে অংশ নেন। প্রদর্শনীর শেষ পর্যায়ে যখন হিংস্র মানুষের গুলিতে পরাজয় মেনে নিয়ে হাতি প্রাণ হারিয়ে মাটিতে লুটে পড়ে তখন উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে মর্মষ্পর্শী পরিবেশ সৃষ্টি হয়। হাতির সাথে মানুষের এত দ্বন্দের কারণ তুলে ধরা হয় ১৫ মিনিটের এই প্রদর্শনীতে। পরিবেশ ও প্রাণীকূলের প্রতি মানুষের অন্যায়-অত্যাচার ঘটনা সেখানে ফুটে উঠে। হাতিরা জানান দিয়ে চায়, মানুষ তাদের শত্রু নয়। কিন্তু বসবাসের জায়গা হারিয়ে তারা লোকালয়ে হামলে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। এর জন্য মানুষই দায়ী। তাই এখনই বন-পরিবেশ রক্ষা করে আবাসস্থল টিকিয়ে রাখার আবেদন হাতির।
প্রদর্শনী শেষে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস রানা তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, হাতি কেন মানুষ মারে এটা না বলে মানুষ কেন এত নিষ্ঠুর বললে যথার্থ হয়। হাতির যে বাঁচার আকুতি তা প্রদর্শণীটি না দেখলে বলা মুশকিল-মানুষ আসলে কত নিষ্ঠুর। তিনি হাতির জন্য সবুজ পরিবেশ গড়ে তুলে হাতিকে সুন্দর ভাবে বাঁচতে দেয়ার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বঙ্গোপসাগরের মোহনায় রেজু নদী পাড়ে মেরিনড্রাইভ সড়কের সাথে লাগোয়া মনোরম পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে ‘মারমেইড ইকো রিসোর্ট’। পর্যটকদের রাত্রিকালিন বিনোদন ও হাতি রক্ষা এবং তাদের সম্পর্কে মানুষকে বিশেষ করে শিশুদেরকে ধারণা দেওয়ার জন্য এই প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্টানটি। প্রদর্শনীতে সহযোগী হিসাবে রয়েছে ইসাবেলা ফাউন্ডেশন।
গতকাল সকাল ৯টায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কবির বিন আনোয়ার। তিনি বলেন, যে গল্পের উপর ভিত্তি করে হাতি প্রদর্শনী করা হয়েছে তা অসাধারণ এবং শিক্ষনীয়। এই প্রদর্শনী মানুষ আর হাতির মধ্যে যে ভালবাসার বন্ধন সেই শিক্ষা তুলে ধরে। প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালবাসা জাগিয়ে তুলে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মত আয়োজিত এই প্রদর্শনী মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারের মত পর্যটননগরীতে রাত্রিকালিন কোন বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। তাই এই ধরণের আয়োজন পর্যটনশিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করবে। নির্মল বিনোদনের পাশাপাশি কিভাবে পরিবেশ অক্ষুন্ন রেখে পর্যটনের উন্নয়ন করা যায়, অর্থনীতি সমৃদ্ধ করা যায়, সেই শিক্ষা পাবেন পর্যটকেরা।
মারমেইড ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ বলেন, সারাদিন সময় কাটানোর পর রাত্রিকালিন সময়ে শিশু ও পরিবারের নির্মল বিনোদনের জন্য সাগরপাড়ে তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। পরিবারের সবাইকে নির্মল বিনোদন দেওয়ার জন্য এই প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সাথে শিশুদের মধ্যে হাতি সম্পর্কে জ্ঞান আহরণেরও সুযোগ রয়েছে এই প্রদর্শনীতে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাজান আলী। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজি আব্দুর রহমান, কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. আলী কবির, কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আয়াছুর রহমান।