ব্র্যাকের ৫৬ শিশুবান্ধব কেন্দ্র: ৬ হাজার ৩৬৬ ল্যাট্রিন ১ হাজার ৪০ টিউবওয়েল স্থাপন

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০৩:২১ , আপডেট: ১৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০৩:২৯

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


প্রেসব্রিফিং-এ বক্তব্য রাখেন ব্রাকের সিনিয়র পরিচালক আসিফ সালেহ। পাশে উপস্থিত আছেন নির্বাহী পরিচালক ডাঃ মুহাম্মদ মুসা।

ইমাম খাইর, সিবিএন:
রোহিঙ্গা শিশুদের মানসিক চাপ কমাতে ৫৬টি শিশুবান্ধব কেন্দ্র স্থাপন করেছে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা-ব্র্যাক। এসব কেন্দ্রে ৫ হাজার ১৪০ জন শিশু নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য চালু করেছে ১০ মাতৃসেবাকেন্দ্রসহ ৭০টি মেডিকেল ক্যাম্প। সেখানে ১০টি স্থায়ী ও ৫০টি ভ্রাম্যমান ক্যাম্প রয়েছে। এসব মেডিকেল ক্যাম্পে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার ৭৯০ জন স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছে। ৬ হাজার ৩৬৬টি ল্যাট্রিন এবং ১ হাজার ৪০ টিউবওয়েল স্থাপন করেছে। আড়াই লাখের বেশী মানুষ এর মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ডাঃ মুহাম্মদ মুসা এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা অসহায় মানুষের জরুরী স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশন এবং শিশুদের নিরাপত্তা-এই তিনটি বিষয়ে কাজ চলছে। খেলাধুলা ও গল্প বলার মাধ্যমে শিশুদের বিনোদনমূখী করতে ৫৬টি শিশুবান্ধবকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
দেশের ৫টি শিল্প কারখানার সাথে সমন্বয় করে শিশুদের জন্য প্রায় ৮৩ হাজার নতুন কাপড় বিতরণ করা হয়েছে। ঠান্ডা থেকে রক্ষা ও বসবাসের জন্য ২৭ হাজার ৯০০ পরিবারকে মাদুর দেয়া হয়েছে। সারাদেশ থেকে ৭’শ এর বেশী ব্র্যাকের কর্মী এই মানবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক জানান, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), ইউনিসেফ, ডব্লিউএফপি, অসএইড, ডিএফআইডি এবং গ্লোবাল ফান্ড সেবা কার্যক্রমে সমন্বয় ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানাতে ১১ অক্টোবর রাতে প্রেস ব্রিফিং আয়োজন করে ব্র্যাক।
এতে নির্বাহী পরিচালক ডাঃ মুহাম্মদ মুসা, সিনিয়র পরিচালক আসিফ সালেহ, সিনিয়র ব্যবস্থাপক (কমিউনিকেশন এন্ড আউটরিচ) সারারাত ইসলাম, মানবিক সংকট ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের প্রধান আবদুস সালাম, ব্র্যাকের জেলা প্রতিনিধি অজিত নন্দি প্রমুখ।ওখানে জানানো হয়, উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের ঝুঁকিমুক্ত করতে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে কাজ করছে ব্র্যাক। অক্টোবর নাগাদ শিশুদের জন্য ৫০ টি সেফজোন ও ১৫ হাজার ল্যাট্রিন স্থাপনের পরিকল্পনা তাদের।
৩ লাখ জনগোষ্টির সেবার টার্গেট করে নতুন করে আরো ৬ মাসের কর্মপরিকল্পনার কথা জানানো হয় সাংবাদিকদের।
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগষ্ট দিবাগত রাতে মিয়ানমারের সেনা ও পুলিশের চৌকিতে রোহিঙ্গা জঙ্গি হামলার অভিযোগে আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন শুরু করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। হত্যা, ধর্ষণের পাশাপাশি গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সাড়ে ৬ লাখের বেশী রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, বাহারছরা শামলাপুর, উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অংসান সুচির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে প্রায় ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। এজন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে গণহারে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় পর্যন্ত কত মানুষ মারা গেছে তার কোন হিসাব নেই। তবে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এ সংখ্যা ৫০ হাজারের কম নয় বলে দাবী করেন। আর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আসার পথে সাগরে নৌকা ডুবে শতাধিক রোহিঙ্গা মারা গেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকান্ড শুরু করে।