মো. ফারুক, পেকুয়া: 
পেকুয়া উপজেলা টইটং ইউনিয়নের পূর্ব টইটং জনখোলার ঝুম মৃত টুনু এলাকার মিয়া মিস্ত্রির পুত্র বোরহান উদ্দিন (১৮)। তিন ভাই তিন বোনের টকবগে কিশোরটি ছিল পিতা মাতার আদরের সন্তান ও অপর ভাই বোনের চোঁখের মনি। সারাদিন ব্যস্থ থাকতো ফেসবুক আর ক্রিকেট আর ফুটবল খেলায়। আর সেই কিশোরটি জীবনের কিছু বুঝে ওঠার আগেই চলে গেল পরপারে। দালালের খপ্পরে পড়ে করুণ মুত্যুর শিকার হয়ে বান্দরবান গহিন পাহাড় থেকে তার লাশটি উদ্ধার পরবর্তি ১৩ অক্টোবর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরিবার ও আত্ত্বীয় স্বজন শোকে শোকাচ্ছন্ন। প্রতিবেশি আর বন্ধুরা কিছুতেই মানতে পারছেনা বোরহান উদ্দিন আর তাদের মাঝে নাই।

কিভাবে দালালের খপ্পরে পড়ে জীবন গেল কিশোর যুবক বোরহান উদ্দিনের। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে টইটং পুরাডিয়া এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের পুত্র মঞ্জুর আলম ও রহিম উল্লাহ বান্দরবান থানচিসহ আশেপাশের গহিন অরণ্যে থেকে গাছ কেটে পাচার করার অবৈধ ব্যবসায় জড়িত রয়েছে। যা এলাকায় তারা গাছ কাটার দালাল হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত। আবার তারা লোক জোগান দিত স্বীকৃত গাছ পাচারকারীদের। ওখানে তারা গাছ কাটার লোক ম্যানেজ করতে গিয়ে বলত মোটা টাকা দিব। সঙ্গুতে গাছ কাটতে চল। এর আগেই পেকুয়ার অনেক লোক মৃত্যু ও আর নিখোঁজ হওয়ায় সহজে লোক ম্যানেজ করতে গিয়ে তাদের তার্গেট ছিল কিশোর বয়সের ছেলে। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে জীবন প্রদীপ নিভে গেল কিশোর বোরহান উদ্দিনের।

অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্যও পাওয়া গেছে। এ লোকগুলো ২ মাসের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। বেতন বাবদ দেওয়া হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সিন্ডিকেট প্রধান থেকে দালাল সিন্ডিকেট লোক প্রতি নেয় ১লাখ টাকা করে। এখানে দূর্ঘটনা হলে অনেক সময় তাদের লাশ গুম করে ফেলে। মাঝে মধ্যে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে লাশ সনাক্ত হলেও তাদের দেওয়া হয়না কোন ধরণের ক্ষতি পুরুণ। তাদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে অভিযোগ দেওয়ার সাহসও হয়না ভুক্তভোগি পরিবারের। অথচ সিন্ডিকেট প্রধান থেকে প্রতি মৃত্যুতে ২লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় দালাল সিন্ডিকেট। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে মিথ্যা মামলার হুমকি ও অস্ত্রের ভয়ে ভীত থাকে নিরহ ভুক্তভোগিরা। ইতিমধ্যে প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আরো বেশি ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা।

স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মঞ্জুর আলম দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এ অবৈধ গাছ পাচারের সাথে জড়িত। তার সাথে যোগ দিয়েছে তার ভাই রহিম উল্লাহ। ৫০/৬০ দিনের জন্য ১৮/২০ জনের একটি দল নিয়ে যায় বান্দরবান গহীন পাহাড়ে। প্রতিজনকে দেয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে। যা অগ্রীম দেওয়া হয়। এরই মধ্যে ওই দু’দালাল কিশোর বোরহান উদ্দিনসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে গত ১৯দিন আগে তারা চলে যায় বান্দবান থানছি বরিয়ারী ছোট মধু এলাকার নামের একটি গহীন পাহাড়ে। গাছ পাচারের এক পর্যায়ে গত ১২ অক্টোবর রাতে দূর্ঘটনায় তার করুণ মৃত্যু হয়। থানচি থানায় লাশটি হস্তান্তর হলে ১৩ অক্টোবর পরিবার ও দালাল সিন্ডিকেট গিয়ে তাকে পেকুয়ায় নিয়ে আসে। এর আগেও তাদের হাতে ৩০জনের মত লোক মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে কাচারী পাহাড় এলাকার রুহুল কাদের(৩৭), নাপিতখালী এলাকার মো: হোসেন, দরগা মোড়ার নুরুল আবছার, মধুখালীর বাবুল প্রকাশ বাইল্যা, গুধিকাটার ছাদেক হোসেন, বটতলি মালঘারা এলাকার জমির হোসেন, বারবাকিয়া পাহাড়িয়াখালীর জাকের হোসেন, রাজাখালী এক প্রবাসী নিখোঁজ। এখন পর্যন্ত তার লাশটি পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসীর দাবী দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কর্তৃক ব্যবস্থা নেওয়া হউক।