শাহেদ মিজান, সিবিএন

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মিয়ানমার সরকার জাতিগত নিধন করার জন্য রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালাচ্ছে। এটা চরম মানবিক বিপর্যয়। রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয় আমরা বাংলাদেশে জাতীয় ঐক্য চাই। কিন্তু দু:খজনকভাবে সরকারের কাছ থেকে আমরা কোনো সাড়া পায়নি। আমরা এখনো মনে রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশের সকল মানুষের ঐক্য দরকার। বৃহস্পতিবার কক্সবাজার জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো বিষয় নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা বিতর্ক সৃষ্টি করছে। এসব না করে দরকার রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দিয়ে তাদেরকে নাগরিকত্ব সহকারে ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এটা এই সময়ে জন্য প্রধান বিষয়। কিন্তু তারা এমন কথা বলছে যার জন্য আমরা অত্যন্ত দু:খিত হচ্ছি; দেশের মানুষ দু:খিত হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, মিয়ানমার সরকার ও বার্মিজদের গণহত্যা ও ঘরবাড়ি ধ্বংস ও অহরহ ধর্ষণের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে সীমান্তে পালিয়ে আসলে সরকার নিষ্ঠুভাবে তাদের বাধা প্রদান করেছে। বিজিবি প্রধান ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘কোনো রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না।’ এটা বিশ্ব মিডিয়া ফলাও করে প্রচার হয়েছে। সারি সারি লাশ নদীতে ভাসতে দেখেও বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছে। এর মধ্যে ২৮ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা পালিয়ে রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দেয়া এবং তাদের ফিরিয়ে দিতে কূটনৈতিকভাবে প্রচেষ্টা চালাতে সরকারের প্রতি দাবি জানান। তিনি মিয়ামান সরকারের গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। খালেদার জিয়ার বিবৃতির পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়; বিশ্ব সম্প্রদায় এগিয়ে আসে। এরপরই সরকারের টনক নড়ে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের আগমণের শুরু থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় নেমে পড়েন। তারা রোহিঙ্গাদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেন। ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে আসে কেন্দ্রীয় বিএনপি। কিন্তু অত্যন্ত দু:খজনকভাবে বলতে হচ্ছে সরকার বিএনপির ২২ট্রাক ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে দিয়ে বিএনপিকে ত্রাণ দিতে দেয়নি। এরচেয়ে ঘৃণ্য কাজ আর কি হবে পারে। কিন্তু দেশের মানুষ এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। সরকারের বাধার মুখেও বিএনপি নেতারা স্থানীয়ভাবে ত্রাণ কার্র্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকার মানুষের দেয়া ত্রাণ বিতরণ করে বাহবা নেয়ার চেষ্টা করছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু বিএনপি যে জাতীয় ঐক্যের প্রস্তাব তা শুধু মাত্র বাংলাদেশের স্বার্থে। কিন্তু সরকার এতে কোনো ধরণের সাড়া দিচ্ছে না। এতে করে বাংলাদেশ ঝুঁকির মুখে রয়েছে। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

তিনি বলেন, জাতি সংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায় রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিবাদ ও বিবৃতি দিলে সরকার নড়ে উঠে। এরপর থেকে সরকার বর্তমান চালাচ্ছে। এতে ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে যেমন জাতীয় ঐক্য জরুরী। ঠিক তেমনিভাবে তাদের নাগরিকত্বসহ ফেরত পাঠাতেও মায়ানমারে উপর চাপ সৃষ্টি করতে জাতীয় ঐক্যের দরকার হবে। একই সাথে যে সমস্ত দেশ বা সম্প্রদায় গণহত্যায় মিয়ানমারকে সমর্থন জানিয়েছে তাদের সাথে অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈকিত যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। রাশিয়া এবং চীনের সাথে আরো অনেক কূটনৈতিক যোগাযোগ জোরদার করতে হবে। এই জন্য বিশেষ দূত পাঠাতে হবে। প্রয়োজনের প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপত্তা পরিষদের যেতে হবে।

তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের গণহত্যার প্রাক্কালেও বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে চাল আমদানি করেছে। না করলেও পারতো। প্রয়োজনে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া থেকেও চাল আমদানি করা যেতো।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আবদুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব মুজিবুর রহমান সরওয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশীদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, শরীফুল আলম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল, জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস ইউং এর সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খান, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুপ বদরী, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি পৌর প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মু. আলী প্রমুখ।