সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও
ঘূর্ণিঝড় মোরা’র প্রভাবে কক্সবাজার সদরের পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলীর ক্ষতিগ্রস্থরা বাংলাদেশ সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলামের বিলীন হয়ে যাওয়া ২শ মিটার ভাঙ্গনকৃত বেড়িবাঁধ পরিদর্শনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এলাকাবাসী জানান, ঘূর্ণিঝড় মোরা’র প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় গোমাতলীর ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ গাছপালা। সে সাথে বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক তারেরও ক্ষতি হয়। যার ফলে এলাকায় ঐ দিন সন্ধ্যার পর এখনো বিদ্যুতের দেখা নেই। উপকূলীয় এলাকা পোকখালীর গোমাতলী বেড়িবাধ ভাঙ্গনের কারণে পাশ্ববর্তী এলাকা জুড়ে জোয়ার ভাটায় প্লাবিত হয়ে পড়ে গ্রামবাসী।

পোকখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিক আহমদ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোরা’র প্রভাবে তার ইউনিয়নের ৭, ৮ এবং ৯ ওর্য়াডের বিশালকার এলাকা ৩/৪ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ইউনিয়নের পশ্চিম গোমাতলীর হামিজ্জিঘোনা, দক্ষিন ঘোনা, সোজার ঘোনা, বিরাশি ঘোনা, বোরাকঘোনা, কাটাঘোনা, মেজর ঘোনা, আব্দুল্লাখানের ঘোনা, এ ব্লক, ডি ব্লক, ও সি ব্লক ঘোনা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে বাড়ি ঘর, গাছপালা। পানি বন্দী রয়েছে ২-৩ হাজার মানুষ।

গোমাতলীর বাসিন্দা হোছাইন জানান, টেন্ডার হওয়ার পরও রোয়ানুর আঘাতে ক্ষত বিক্ষত বেড়ীবাঁধটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত।

সরেজমিন এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ইউনিয়নের ১শ মিটার ভাঙ্গনকৃত বেড়ীবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় জোয়ার ভাটার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে গোমাতলী ইউনিয়নের শত শত পরিবার। যার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রয়েছে। উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় রয়েছে অভিভাবক মহল।

গত বছর ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে এলাকার ৬ নং ¯ুইস গেইটের বেড়ীবাঁধটি ভেঙ্গে যায়। সংস্কার না হওয়ায় পূর্ণিমার জোয়ারে লবণ মাঠ, চিংড়ি ঘের, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চলাচল রাস্তা তলিয়ে যায় প্রতিনিয়ত। শিক্ষার্থীরা যেতে পারে না স্কুল মাদ্রাসায়। ভেসে গিয়েছিল প্রায় দুই হাজার একর মাঠের লবণ। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল প্রায় কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ ¯ুইস গেইট দিয়ে জোয়ারের পানি নিয়মিত প্রবেশ করার কারণে বিস্তীর্ণ এলাকার ডি ব্লক, এ ব্লক, রিয়াইজ্যাকাটা ও বারডইল্যা ঘোনায় চলছে জোয়ার ভাটা। লবণাক্ত পানি ঢুকে মানুষের ঘরবাড়ি, ফসল, বীজতলা, চিংড়িঘের, লবণ মাঠ, মাছ ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। পরিকল্পিত বেড়ীবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ জনগণ বৃষ্টি ও আকাশের মেঘ কালো হলেই ভয়াবহ ঘুুর্ণিঝড়ের আতঙ্কে রীতিমত ভয়ে থাকেন। শীঘ্রই অরক্ষিত এ বেড়ীবাঁধ নির্মাণের জোর দাবী জানান স্থানীয়রা। ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া এ বেঁড়িবাধ ও স্লুইস গেইটসমুহ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে টেকসই কোন পরিকল্পনা গ্রহণ না করার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকার বিভিন্ন মহলের ধারনা। প্রতিদিনকার জোয়ার ভাটার কারনে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে অভ্যন্তরীন সড়ক উপ-সড়কসমুহ।

সরেজমিন আরো দেখা যায়, ইউনিয়নের গোমাতলী এলাকার ৬ নং স্লুইস গেইট এলাকা ভাঙ্গনের কারনে ওই পয়েন্ট দিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোরা’র পানি ঢুকে ফের তলিয়ে গেছে । এতে করে এলাকার বিপুল সংখ্যক চাষী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে জানান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।

রাজঘাট এলাকার ব্যবসায়ী জামাল উদ্দীন জানান, গত রোয়ানুর তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া বেঁড়িবাধটি দীর্ঘদিন মেরামত না করায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে জোয়ার ভাটায় চলছে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম।

গোমাতলী সমবায় কৃষি ও মোহাজের উপনিবেশ সমিতির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নুরুল আজিম জানান, জোয়ারের পানির কারনে ওই এলাকার উত্তর গোমাতলী, আজিমপাড়া, কাটাখালী ও রাজঘাট এলাকার কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছেনা। তিনি আরো জানান, প্রতিদিন জোয়ারের পানি উল্লেখিত এলাকার বসতঘর ও শিক্ষা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ছে। পাউবোর ৬৬/৩ নং পোল্ডার সংলগ্ন এলাকার ২০০ মিটার ভাঙ্গনটিই এলাকার লোকজনকে বেশী ভোগান্তিতে ফেলেছে বলে জানান সমিতির এ নেতা।

গোমাতলী সমবায় কৃষি ও মোহাজের উপনিবেশ সমিতির সম্পাদক মুসলেম উদ্দিন বলেন, পাউবো ভাঙ্গন এলাকা সংস্কার করার জন্য বাজেট প্রনয়ন করেছেন। দ্রুত ভাঙ্গন এলাকায় কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে।

পোকখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ জানান, গোমাতলীবাসীর দূর্ভোগ লাঘবে পাউবোর কাছে আবেদন করা হয়েছে। সম্প্রতি কউক চেয়ারম্যান কর্নেল অব: ফোরকান আহমদ ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সংস্কার করার জন্য জোর তাগিদও দিয়েছেন।

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করা হবে বলে জানান।