বাংলাদেশ থেকে কাতারগামী যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে ছয়টি দেশের এয়ারলাইন্স। সন্ত্রাসবাদীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে  কাতারের সঙ্গে ৬টি দেশের সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো। এ কারণে ঢাকা থেকে কাতারগামী টিকিট বিক্রি বন্ধও করেছে এয়ারলাইন্সগুলো। যারা আগে থেকেই এসব এয়ারলাইন্সের টিকেট কিনেছিলেন সেসব  যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। অন্যদিকে, কাতারের এয়ারলাইন্সগুলোও এই ৬ দেশে যাত্রী নিতে পারবে না। ফলে কাতারের এয়ারলাইন্সগুলো থেকে টিকেট কেনা যাত্রীরাও পড়েছেন বিপাকে।

কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা দেশগুলো হচ্ছে: সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন, লিবিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন। পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক হলেও এর নেতিবাচক প্রভাব এড়াতে পারছে না এভিয়েশন খাত। কাতারের এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য এরইমধ্যে নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি আরব।  সৌদির অনুসরণে একই পদক্ষেপ নিয়েছে মিসর, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। অন্যদিকে এই ছয় দেশের এয়ারলাইন্সগুলোরও বন্ধ করে দিয়েছে কাতারগামী সকল ফ্লাইট।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে,  এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ থেকে কাতারগামী যাত্রী পরিবহনও বন্ধ করে দিয়েছে ওই ৬টি দেশের এয়ারলাইন্সগুলো। বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে কাতারের যাত্রী সব থেকে বেশি পরিবহন করে ৮টি এয়ারলাইন্স। এর মধ্যে সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স, এমিরেটস, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ, ফ্লাই দুবাই ও এয়ার এরাবিয়া ইতিমধ্যেই কাতারগামী সব ফ্লাইট বন্ধ করেছে।

এ প্রসঙ্গে আবুধাবিভিত্তিক ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপক আল মাহমুদ শামীম জানান, কাতারের দোহাগামী ফ্লাইট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি যাত্রীদের অবহিত করা হয়েছে।

একই রকমভাবে ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স। শাহজালাল বিমানবন্দরে এয়ারলাইন্সটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ঊর্ধ্বতনদের সিদ্ধান্তে  দোহা রুটে ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। সব যাত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরে কর্মরত এমিরেটস এর কর্মকর্তা সালাউদ্দিন বলেন, দোহা রুটে ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। যাত্রীদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। যেসব যাত্রীরা টিকেট কিনেছিলেন তাদের অন্য এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে যাওয়া ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে, আগের মতো স্বাভাবিক রয়েছে ঢাকা-দোহা রুটে কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইট। বাংলাদেশের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ঢাকা-দোহা রুটে সরাসরি ফ্লাইট আগের সূচি অনুযায়ী চলছে। তবে ৫টি এয়ারলাইন্স কাতারগামী যাত্রী পরিবহন বন্ধ করার চাপ বেড়েছে এসব এয়ারলাইন্সের ওপর।

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, কয়েকটি এয়ারলাইন্স কাতারগামী যাত্রীদের নিতে অনীহা প্রকাশ করায় যাত্রীদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। এমনকি কাতার এয়ারওয়েজের টিকিট কেনা যাত্রীরাও ভোগান্তির বাইরে নয়। কাতারে ট্রানজিট নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য গন্তব্যে যেতে চাওয়া যাত্রীদের আবার ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে। দোহাগামী যাত্রীরা চাইলে এখন বিমানকে বেছে নিতে পারেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রয়াত্ত এয়ারলাইনস সংস্থাটি ঢাকা থেকে ৪১৯ আসনের বোয়িং- ৭৭৭ উড়োজাহাজে সরাসরি দোহায় সপ্তাহে ৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

এদিকে সম্প্রতি ঢাকা-মাস্কাট রুটের ফ্লাইট বন্ধ হলেও চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট রয়েছে ওমানের রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা ওমান এয়ারের। সংখ্যায় কম হলেও এয়ারলাইন্সটির মাস্কটে ট্রানজিট দিয়ে দোহাগামী বাংলাদেশী যাত্রী পরিবহন করে। এ প্রসঙ্গে ওমান এয়ারের বাংলাদেশ কান্ট্রি ম্যানেজার খন্দকার এ কবির বলেন, কাতারে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে। তবে তাদের খুব কম অংশই চট্টগ্রাম অঞ্চলের। এ কারণে চট্টগ্রাম থেকে কাতারগামী যাত্রীর সংখ্যাও কম। এ কারণে কাতারগামী যাত্রী চাহিদার প্রভাব ও মান এয়ারের চট্টগ্রাম মাস্কাট রুটে এখনও পড়েনি।

সৌদিআরবসহ বিশ্বের যে ৬টি দেশ কাতারকে নিষিদ্ধ করেছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়টির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনও সম্পর্ক নাই। সৌদি আরব ও কাতারের সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশের সম্পর্ক চমত্কার। বর্তমানেও এ সম্পর্ক অত্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে।