এম.এ আজিজ রাসেল:

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা। শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরসহ উপজেলার বৌদ্ধ বিহারগুলোতে ভীড় করেন পূজার্থীরা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিহারে গিয়ে বুদ্ধকে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শীলে অধিষ্ঠিত হয়। আজ থেকে তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস পালনের মাধ্যমে প্রত্যেক বিহারের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা শীলে অধিষ্ঠিত হয়ে একই বিহারে অবস্থান করবেন। বর্ষাবাস শেষে ভিক্ষুরা ধর্মপ্রচারে বেরিয়ে পড়বেন। এরপর প্রত্যেক বিহারে বিহারে অনুষ্ঠিত হবে কঠিনচীবরদান।

বিকেলে কেন্দ্রীয় মাহাসিংদোগ্রীর অগ্গমেধা, বড় ক্যাং, পিটাকেট, চেন্দামেজু, জাদিরাম ও মোহাজের পাড়া বিহার ঘুরে দেখা যায়, টানা তিন মাস বর্ষাবাসের ব্রতের প্রত্যয় নিয়ে আবাল বৃদ্ধা-বণিতা ধর্মীয় পোশাক পরিধান করে বিহারে আসে। সকলে একে অপরের সাথে কৌশল বিনিময় করেন। অনেকেই গ্রহণ করেন পবিত্র অষ্টশীল।

ধর্মীয় গুরুরা আষাঢ়ী পূর্ণিমার গুরুত্ব নিয়ে বিশদ আলোকপাত করেন। পরে সেখানে করোনা থেকে মুক্তিসহ দেশ ও জাতির শান্তি কামনায় করা হয়েছে বিশেষ প্রার্থনা। এসময় ছোট-বড় সকলের উৎসবমূখর পদভারে বিহার প্রাঙ্গণ মিলনমেলায় পরিণত হয়।

কক্সবাজার কেন্দ্রীয় মাহাসিংদোগ্রী বৌদ্ধ মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি উক্যথিন বলেন, আষাঢ়ি পূর্ণিমার তাৎপর্য তথাগত বুদ্ধের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে। তাই বৌদ্ধদের কাছে পূর্ণিমা আসে জীবনে পূর্ণতা সাধনের জন্য। শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা বৌদ্ধদের কাছে অতি পুণ্যময় তিথি। বৌদ্ধদের আত্মশুদ্ধি, ধ্যানসাধনা, সংযম ও বিনয় শিক্ষার ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রত শুরু। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই তিনমাস বিশেষ করে পূর্ণিমা, অমাবশ্যা ও অষ্টমী তিথিতে বৌদ্ধরা আত্মশুদ্ধির লক্ষ্যে ধ্যান-সাধনা, সংযম ও বিনয় শিক্ষার মাধ্যমে বিশুদ্ধ জীবন পালন করে।

শহরের জয়সুখ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমত জ্ঞানবংশ মহাথেরো বলেন, এ পূর্ণিমা তিথিতে রাজকুমার সিদ্ধার্থের মাতৃগর্ভে প্রতিসন্ধি গ্রহণ, গৃহত্যাগ, সারানাথের ঋষি পতন মৃগদাবে পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষুদের কাছে ভগবান বুদ্ধের ধর্মচক্র প্রবর্তনসূত্র দেশনা হয়েছিল। একই তিথিতে শ্রাবস্তীর গন্ডম্ব বৃক্ষমূলে প্রতিহার্য ঋষি প্রদর্শন, মাতৃদেবীকে ধর্মদেশনার জন্য তুষিতস্বর্গে গমন এবং ভিক্ষুদের ত্রৈমাসিক বর্ষাবাস আরম্ভও হয়।

তিনি আরও বলেন, স্মৃতি বিজড়িত শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে শুরু হওয়া বর্ষাব্রত আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথিতে সমাপ্ত হয়। দীর্ঘ তিনমাস ব্যাপী দান, শীল এবং ভাবনা নিবিড়ভাবে অনুশীলনের এক সুবর্ণ সুযোগ। সকলের উচিত এ সুযোগকে কাজে লাগানো।

কক্সবাজার কেন্দ্রীয় মাহাসিংদোগ্রী বৌদ্ধ বিহারে আসা কয়েকজন রাখাইন শিক্ষার্থী জানান, এ দিনে আমরা তিনমাস ব্যাপী বর্ষাবাসের শুভ সূচনা করি। বর্ষা বাস চলাকালে পরস্পরের প্রতি মন্দ কাজ পরিহার করে ভাল কাজের প্রতি অনুপ্রেরণা যোগায়। এ মাসে আমাদের নিয়মিত ধর্মকাজে উৎসাহ বাড়ে।

জেলার রামু, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ায় যথাযথভাবে পালন হয়েছে শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা।