শাহেদ মিজান, সিবিএন:

হঠাৎ করে আবার করোনার প্রকোপ বেড়ে গেছে। গত তিন ধরে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বেশ উর্ধ্বমূখী হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ সোমবার (১৫ মার্চ) একদিনে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৭৭৩ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। হঠাৎ করোনা এই উর্ধ্বমূখীতা বেশ আশঙ্কার সৃষ্টি করেছে। তাই নড়েচড়ে বসেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।

সারা দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে কক্সবাজারেও বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। কক্সবাজারের গত দিনের আক্রান্তের হার উর্ধ্বমূখী। পর্যটন কেন্দ্র হওয়ায় প্রথম ধাপের মতো এবারো অন্যান্য এলাকার চেয়ে কক্সবাজারের বেশ ঝুঁকির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ইতিমধ্যে তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। তার অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার জরুরী সভা ডেকেছে জেলা প্রশাসনের করোনা প্রতিরোধ কমিটি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, করোনার স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করতে আবার মাঠে নেমেছে ভ্রাম্যমান আদালত। মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব রাখাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে অভিযান শুরু করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।

সোমবার জেলা প্রশাসনের একটি বড় ভ্রাম্যমান আদালতের দল শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছে। মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে জনগণকে সচেতন করতে লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট ও কলাতলী পয়েন্টসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে সচেতনতামূলক অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাখন চন্দ্র সূত্রধর, সাদিয়া সুলতানা এবং সৈয়দ মুরাদ ইসলাম। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে ছিল জেলা পুলিশ, কক্সবাজার এবং ৩৯ আনসার ব্যাটালিয়ন।

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কক্সবাজারে আবারো ভয়াবহ সংক্রমণ হতে পারে আশঙ্কা রয়েছে। এই আশঙ্কার কথা জানালেন কক্সবাজারের মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ শাহজাহান নাজির। তিনি বলেছেন, গত বছরের চিত্র বিবেচনায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, আবারো করোনা মহা সংক্রমণ হতে পারে। গত বছর ঠিক এই সময় থেকে সংক্রমণ শুরু হয়েছিলো এবং এপ্রিল-মে’তে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিলো। বর্তমানেও সেই চিত্র দেখা যাচ্ছে। এখন ক্রমান্বয়ে সংক্রমণ বাড়ছে। এভাবে বাড়লে এপ্রিল-মে মাসে তা ভয়াবহ হতে পারে।

কক্সবাজারের প্রথম সারির সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ শাহজাহান নাজির বলেছেন, এখনই সচেতন না হলে বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। তাই সকল স্তরে স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে লকডাউনও করতে হবে।

তবে আশার কথা হলো এখন মানুষের অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা জানা আছে। নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হবে না। শুধু যার যার জায়গা থেকে সচেতন হয়ে করণীয়টা বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে ঢাকায় যে সব করোনা আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তার অধিকাংশই কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে গেছে। তবে কক্সবাজার ঘুরে যাওয়ার সংখ্যা বেশি। তাতে দেখা যাচ্ছে সংক্রমণের মূল জায়গা কিন্তু পর্যটন কেন্দ্রগুলো। তাই এখনই পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন মোঃ মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, গত তিন দিনে কক্সবাজারের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়মিতের চেয়ে বেড়েছে। তাই স্বাস্থ্য বিভাগের সকল স্তরের কর্মকর্তাদের সজাগ করে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, করোনার সংক্রমণ কমায় লোকজন স্বাস্থ্যবিধির কথা ভুলে গেছে। মাস্ক ব্যবহারতো একেবারে নেই। তার সাথে সামাজিক দূরত্ব অন্যান্য স্বাস্থ্য বিধির কোনো ধরণের বালাই নেই। কিন্তু এভাবে থাকলে আবারো বিপর্যয় আসছে। তাই ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত অভিযান জোরদার করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়েও একই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।