আরটিভি : চলতি মাসে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হচ্ছে না। কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনও ফল তৈরির নীতিমালা অনুমোদন দেয়নি। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ফল প্রকাশ হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যপক এস এম আমিরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল তৈরির নীতিমালা অনুমোদন হলে ফলাফল তৈরিতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। প্রায় একই কথা বলেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব তপন কুমার।
চলতি বছরে অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা মহামারি থাবায় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা বাতিল করে অটোপাশের ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর এসব শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, ডিসেম্বর পরীক্ষার ফল প্রকাশের সম্ভবনার কথা জানান। কিন্তু
পাশাপাশি অটোপাশের ফল তৈরিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের সমন্বয়ে আট সদস্যের গ্রেড মূল্যায়ন টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। চলতি মাসের শুরুতে কমিটি ফলাফল তৈরিতে জিপিএ গ্রেড নির্ণয়ের বেশ কয়েকটি প্রস্তাবের সমন্বয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় এইচএসসি পরীক্ষার ফল পিছিয়ে যাচ্ছে। তার অসুস্থার কারণে টেকনিক্যাল কমিটির প্রস্তাবিত গাইডলাইন অনুমোদন দেয়া সম্ভব হয়নি।
টেকনিক্যাল কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী, জেএসসি পরীক্ষার ফলে ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি পরীক্ষার ফলে ৭৫ শতাংশ নম্বর মূল্যায়ন করা হবে। তবে যারা জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি তাদের ক্ষেত্রে এসএসসির ফলকে কেন্দ্র করে নম্বর নির্ধারণ করা হবে। তবে আগের দুই পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও বিষয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ নম্বর না থাকলে সে ক্ষেত্রে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ থেকে অনেকে পিছিয়ে পড়তে পারে।
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল কিছু মানদণ্ডের ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে, যা নীতিমালা আকারে তৈরি করেছে টেকনিক্যাল কমিটি। এরপর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনুমোদনের পরই শুরু হবে ফল তৈরির কাজ।
এক সংবাদ সম্মেলনে ৭ অক্টোবর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। একইসময়ে তিনি এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে গ্রেড দেয়ার ঘোষণা দেন। এই পরীক্ষার্থীরা ২০১৫ সালে জেএসসি এবং ২০১৮ সালে এসএসসি পাস করেছে। এবার এইচএসসি ও সমমানে মোট পরীক্ষার্থী ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল তৈরি করতে গিয়ে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। এরমধ্যে প্রথমেই আসে যে দুই পরীক্ষার ভিত্তিতে গড় ফল তৈরি হচ্ছে সেটি। কেননা, জেএসসি পরীক্ষার সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকের বেশিরভাগ বিষয়েরই কোনো মিল নেই। বাংলা, ইংরেজি, আইসিটির মতো তিনটি বিষয়ের সঙ্গে যে মিল আছে, সেটা নিতান্তই প্রাথমিক পর্যায়ের। এটার সঙ্গে এইচএসসির তুলনা ও সম্পর্ক স্থাপন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। অপরদিকে এসএসসি ও দাখিল পাসের পর শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিভাগ পরিবর্তন করে। এ ক্ষেত্রে বিজনেস স্টাডিজ ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা মানবিক বিভাগে যায়। আবার মাদ্রাসায় দাখিল ও এসএসসি ভোকেশনাল পাসকরা অনেকে কলেজে ভর্তি হয়ে থাকে। বিভাগ এবং ধারা (মাদ্রাসা ও কারিগরি থেকে কলেজে) পরিবর্তনকারী শিক্ষার্থীদের ফল তৈরিও আরেক চ্যালেঞ্জ।
উল্লেখ্য, মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে নিয়মিত ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৭১ জন। অনিয়মিতদের মধ্যে এক বিষয়ে ফেলকরা ১৬ হাজার ৯২ জন, ২ বিষয়ে ফেলকরা ৫৪ হাজার ২২৪ জন, সব বিষয়ে ফেলকরা ৫১ হাজার ৩৪৮ জন, মানোন্নয়ন ১৬ হাজার ৭২৭ জন এবং প্রাইভেট পরীক্ষার্থী ৩৩৯০ জন। সাতটি বিষয়ে ১৩টি পত্রে পরীক্ষায় বসতে হয় শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যে বাংলা ও ইংরেজির দুটি এবং আইসিটির একটিসহ ৫ বিষয়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষাসহ সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হয়। বাকিগুলো বিভাগভেদে পছন্দমতো ঐচ্ছিক বিষয় থাকে।