ইমাম খাইর :
চকরিয়া উপজেলার হারবাংয়ে গরুচোর ধরার নামে মা-মেয়েকে এক রশিতে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনার পর থেকে বড় বেকায়দায় পড়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরান।

দীর্ঘদিন ধরে বিচার বঞ্চিতদের চরম ক্ষোভ ও দলীয় কোন্দল তো আছেই। এরই মাঝে যোগ হয়েছে দিনদুপুরে মা-মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনা। যে ঘটনায় ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান মিরানসহ চারজনকে আসামী করে চকরিয়া থানায় মামলা হয়েছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেল, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম মিরাজের সাথে সভাপতি মিরানুল ইসলাম মিরানের মানসিক দূরত্ন দীর্ঘদিনের। সভাপতি ও সম্পাদকের মধ্যে মৌখিক কথা হলেও বাস্তবে মিল নেই। যে কারণে গরু চুরির ইস্যুটি কঠোরভাবে সামনে এনে ফায়দা লুটাতে সক্রিয় চেয়ারম্যানের বিরোধীপক্ষ।

এলাকাবাসী বলছে- বালু মহাল, পাহাড় দখলসহ নানা সুবিধা পাওয়া না পাওয়া নিয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।

সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম মিরাজ কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করেন। যেখানে রয়েছে চারশতাধিক সদস্য। দুই নেতার আধিপত্য বিস্তার ও আগামী নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইস্যুটি সামনে এনে ঘোলাটে পরিস্থিতিতে মিরান বিরোধী পক্ষ কাজ করছে।
কারণ, বিগত সময়ে এলাকায় অসংখ্য গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। অনেক ঘটনার সঠিক সুরাহা দিতে পারেন নি চেয়ারম্যান। অনেকের অভিযোগের পাত্তাও দেন নি। তাই এই ইস্যুকে সঠিকমাত্রায় কাজে লাগিয়েছে চেয়ারম্যান বিরোধীরা।

সব কথার মূল কথা হলো, মা-মেয়ের কোমরে রশি বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় গঠিত দুইটি তদন্ত কমিটি কি প্রতিবেদন দেয়, তার অপেক্ষায় এখন হারবাংয়ের বাসিন্দারা।

এদিকে, মা ও যুবতি মেয়েসহ ৫ জনকে নির্যাতনের ঘটনার জন্য চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরানকে দুষছে এলাকাবাসী। তবে প্রভাবশালী হওয়ায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সহজে মুখ খুলছেনা কেউ।

সোমবার (২৪ আগস্ট) সরেজমিন গিয়ে অনেকের সাথে কথা বলেন প্রতিবেদক।

এ সময় অনেকে সত্য কথা বলতে এগিয়ে এলেও চেয়ারম্যানের সমর্থকদের দেখে আর মুখ খুলে নি। মুঠোফোনেও কথা বলতে রাজি হন নি।

মহিলাদের কোমরে প্রকাশ্য দিবালোকে রশি বেঁধে সড়কে হাঁটিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি কেউ সমর্থন করছে না।

ঘটনার জন্য চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ) আমির হোসেন, নুরুল আমিন ও আবুল হোসেনকে দোষারুপ করছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।

আবার অনেকে বলছে, তারা চেয়ারম্যানের নির্দেশ পালন করেছেন মাত্র। ন্যাক্কারজন ঘটনায় চেয়ারম্যান কোনভাবে দায় এড়াতে পারে না।

তবে ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, একদফা মা-মেয়ের ওপর নির্যাতন চলার পর হারবাং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরান চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ) পাঠিয়ে তাদেরকে রশিতে বেঁধে তার কার্যালয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করেন। উপর্যুপরি নির্যাতন শেষে চেয়ারম্যানের লোকেরাই মা-মেয়েকে মুমূর্ষু অবস্থায় পুলিশের হাতে তুলে দেন। সকালের ঘটনায় চেয়ারম্যান উপস্থিত না থাকলেও দ্বিতীয় দফায় পরিষদের কক্ষে আটকিয়ে রেখে ৫ জনকে মারধর করেন চেয়ারম্যান মিরান। যা অনেকে প্রত্যক্ষ করেছে।

এদিকে, শ্লিলতাহানি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনাটি এখন সবার মুখেমুখে। ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট আ জ ম মইন উদ্দিন। তিনি বলেছেন, মা-মেয়েকে এক রশিতে বেঁধে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। অপরাধ করলেও সভ্য সমাজে এমন কোন বিচার হতে পারে না। সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

আ জ ম মইন উদ্দিন বলেন, গরুর চুরির ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে কারান্তরীন ৫ জনের জন্য সোমবার চকরিয়া আদালতে স্বপ্রণোদিত হয়ে আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। আদালত মা ও দুই মেয়েকে জামিন দিয়েছেন। প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধানে কাজ করবেন বলেও জানান জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি।
তবে, চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরান বরাবরই ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন। দাবী করেন নিজে নির্দোষ।