মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

পেকুয়ার চালবাজি নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রামে রোববার ১০মে চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালকের কার্যালয়ে ৭ জনের জবানবন্দি নিয়েছেন। গত ৪মে পেকুয়া উপজেলা পরিষদ ভবনে তদন্ত কমিটির সামনে এ ৭জন প্রথম জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তদন্তের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশ্বস্ত একটি সুত্র সিবিএন-কে বিষয়টি জানিয়েছেন।

১০মে নেওয়া জবানবন্দীতে এ ৭জনের বক্তব্যের বিপরীতে আরো কিছু বক্তব্য থাকায় সেগুলো জেনে নেওয়া হয়েছে। সে ৭ জনের বক্তব্যের অমিল ও স্পর্শকাতরতা থাকার কারণে জবানবন্দিদাতাদের সামনাসামনি বসিয়ে ক্রস বক্তব্যের মাধ্যমে সেগুলোর অস্পষ্টতা দূর করে প্রদত্ত জবানবন্দি সুস্পষ্ট ও দৃঢ় করা হয়।

১৫ টন চাল আত্মসাতের প্রাথমিক তদন্ত কর্মকর্তা কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব-উপসচিব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসারকে ১০মে’র তদন্ত কমিটির সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি স্বশরীরে তদন্ত কমিটির সভায় গত রোববার যাননি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব উপসচিব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার তাঁর ২৭ এপ্রিল প্রদত্ত প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনই তাঁর বক্তব্য বলে উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদনটি তিনি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির কাছে চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে সিবিএন-কে জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব-উপসচিব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার।

এাছাড়া, টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী চাল মামলার পলাতক আসামি থাকায় তিনি বাহক মারফত তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন বলে সুত্রটি জানিয়েছে।

পেকুয়ার ১৫ টন চাল আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক গত ২৯ এপ্রিল গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির আহবায়ক হলেন, স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক (জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত সচিব) দীপক চক্রবর্তী, কমিটির অন্য ২ জন সদস্য হচ্ছেন, কক্সবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (উপসচিব) শ্রাবস্তী রায় ও কক্সবাজার জেলা ত্রান ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল আলম।

যে ৭কর্মকর্তা ও কর্মচারী গত রোববার ১০মে অনুষ্ঠিত তদন্ত কমিটির বৈঠকে হাজির হয়ে পূণ জবানবন্দি দিয়েছেন, তারা হলেন-পেকুয়া’র ইউএনও সাঈকা সাহাদত, পেকুয়ার উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ও ট্যাগ অফিসার কামাল পাশা, পেকুয়ার বর্তমান পিআইও মোঃ আমিনুল ইসলাম এবং সাবেক পিআইও সৌভ্রাত দাশ (বর্তমানে কক্সবাজার সদর উপজেলায় কর্মরত), টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবদুল আলিম, পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মচারী মোহাম্মদ রাজিব এবং পেকুয়া পিআইও অফিসের ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্ট মোহাম্মদ শামীম।

স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক, (জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত সচিব) দীপক চক্রবর্তী সহ কমিটি সকলের জবানবন্দি, ক্রস জবানবন্দী গ্রহনের পর কমিটির অন্য ২ জন সদস্য কক্সবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (উপসচিব) শ্রাবস্তী রায় ও কক্সবাজার জেলা ত্রান ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল আলম সহ তাঁরা একান্তে বৈঠক করেন। তাঁরা সকল জবানবন্দি পর্যালোচনা, ফাইলপত্র সহ সব ডকুমেন্টস দেখে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন ও করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ মালা খসড়া তৈরি কাজ শুরু করে দিয়েছেন বলে জানান সুত্রটি। এজন্য আগে সংগৃহীত ও পূর্বে তদন্তকালীন সময়ের প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্তও তাঁরা পর্যালোচনা করছেন। তদন্ত প্রতিবেদন ও করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ মালা খসড়া তৈরি হলে কমিটি পুণরায় বসে সেটি আরো বিস্তারিত দেখে চুড়ান্ত করবেন বলে জানান সুত্রটি। সুত্র মতে, এজন্য কমিটি তৃতীয় দফায় আবারো বসতে পারেন। কমিটির সদস্যদ্বয় কক্সবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (উপসচিব) শ্রাবস্তী রায় ও কক্সবাজার জেলা ত্রান ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল আলম গত ১০মে রাত্রেই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার চলে এসেছেন।

কক্সবাজারের বহুল আলোচিত পেকুয়া উপজেলার ত্রাণের ১৫ টন চাল আত্মসাতের ঘটনা তদন্তের বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিটি গঠন হওয়ার ১৫ কার্যদিবস অর্থাৎ আগামী ১৯ মে’র মধ্যেই স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে জমা দেওয়া হবে বলে জানান সুত্রটি।

এর আগে গত ৪ মে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রধান, স্থানীয় সরকার বিভাগ, চট্টগ্রামের পরিচালক (জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত সচিব) দীপক চক্রবর্তী সহ কমিটির অপর ২ সদস্য পেকুয়া উপজেলা পরিষদ ভবনে এসে ১৫ টন চাল আত্মসাতের ঘটনায় বিভিন্নজনের জবানবন্দি গ্রহণ করেছিলেন।

প্রসঙ্গত, পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন থেকে গত ৩১ মার্চ টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর নামে বরাদ্দকৃত ১৫ টন ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগে এনে গত ২৮ অক্টোবর তাকে একমাত্র আসামি করে পেকুয়ার বর্তমান পিআইও মোঃ আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে পেকুয়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। পরদিন স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এক আদেশে জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।

পরে গত ৩০ এপ্রিল একই ঘটনার রেশ ধরে পেকুয়া’র ইউএনও সাঈকা সাহাদাত’কে বদলী করা হয়। আবার ২৪ ঘন্টা পার না হতেই ১মে পেকুয়ার ইউএনও সাঈকা সাহাদাত’কে পেকুয়া থেকে ৩০ এপ্রিলের বদলী আদেশ স্থগিত করা হয়। ১৫ টন ত্রাণের চাল আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে বর্ণিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গত ২৯ এপ্রিল গঠন করা হয়। এটি সমসাময়িক সময়ে কক্সবাজারের সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়।