সিবিএন ডেস্ক:
চট্টগ্রামে করোনা পজিটিভ হওয়া সিএমপির ১১ পুলিশ সদস্যের একজন করোনামুক্ত হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। ১৪ দিনে করোনা জয় করে ফেরা সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের এই সদস্য বলছেন, মনোবল না হারিয়ে সাহস নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়াটা সবচেয়ে জরুরি।

সিএমপির ১১ সদস্যের মধ্যে প্রথম সুস্থ হওয়া অরুণ চাকমা (৪০) নামের এই ট্রাফিক কনস্টেবল আক্রান্ত হয়েছিলেন চতুর্থ জন হিসেবে। অরুণ রোববার (৩ মে) চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ব্যারাকে ফিরে যান। এ সময় তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন নগর পুলিশের কর্মকর্তারা।

আরও দুজন পুলিশ সদস্যের এক দফা রি-টেস্টের নেগেটিভ ফলাফল এসেছে রোববার (৩ মে)। তাদের নমুনা আবারও পাঠানো হয়েছে। এটিও নেগেটিভ এলে দু-একদিনের মধ্যে সেই দুজনও ফিরবেন সুস্থ হয়ে।

১২ এপ্রিল সিএমপির প্রথম যে ট্রাফিক কনস্টেবলের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল, তার সঙ্গে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে একসাথে নগরীর জিইসি মোড়ে দায়িত্ব পালন করেছিলেন অরুণ।

১০ এপ্রিল তাদের দুজনের একসাথে করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। তার মধ্যে প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর ছিল বেশি। অন্যদিকে অরুণের জ্বর সেরে যায় প্রথম দিনেই। তাই প্রথমে ১১ এপ্রিল একজনের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়। আর অরুণকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মনসুরাবাদ পুলিশ লাইনে। ১২ এপ্রিল অরুণের সাথের জন করোনা পজিটিভ হওয়ায় অরুণেরও করোনা টেস্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ততদিনে অরুণ অনেকটা সুস্থ। এ সময় সামান্য কাশি ছিল তার। এজন্য ১৬ এপ্রিল তাকে ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে পাঠানো হয় টেস্ট করাতে। ১৯ এপ্রিল অরুণের করোনা পজিটিভ রেজাল্ট আসে।

সিএমপিতে শনাক্ত হওয়া চতুর্থজন হলেও, অরুণ আর সিএমপির আক্রান্ত প্রথম করোনা রোগী এক সাথেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানান ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ।

১৯ এপ্রিল রাতেই অরুণকে জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে যাওয়ার সময় মনোবল চাঙ্গা রাখাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন জানিয়ে অরুণ বলেন, ‘রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার পর রাত আড়াইটার দিকে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে। আমার শুরু থেকেই মানসিক প্রস্তুতি ছিল। আমি বিষয়টাকে সহজভাবে নিয়েছি।’

যে কেউই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে মন্তব্য করে অরুণ বলেন, ‘শুরু থেকে আমার মাথায় ছিল যে, মনোবল হারানো যাবে না। আমি সেটাই করেছি। নিজের মানসিক অবস্থা ঠিক রাখতে প্রতিদিন পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তাদেরকেও সাহস দিয়েছি। বলেছি সব ঠিক হয়ে যাবে। যাতে মনোবল না হারায়।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থার বর্ণনা দিয়ে অরুণ বলেন, ‘হাসপাতালে যাওয়ার সময় একটা ইলেকট্রিক কেটলি নিয়ে যাই আমি। কেটলিতে পানির সাথে এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, আদা, রসুন দিয়ে গরম করে ভাপ নিয়েছি নিয়মিত। এটা একটা বিশেষ কাজ দিয়েছে বলে আমার ধারণা। আমার দেখাদেখি অনেকেই এখন এই চিকিৎসা নিচ্ছে।’

হাসপাতালে থাকা বাকি ১০ সহকর্মীর সবাই স্থিতিশীল অবস্থায় আছে জানিয়ে অরুণ বলেন, ‘আমাদের বাকি যে ১০ জন হাসপাতালে আছেন তারা সবাই মোটামুটি সুস্থ। একজনের শুধু মাঝে মাঝে পেটে ব্যাথা হয়। বাকিদের কারো কোন সমস্যা নেই। দুজনের এর মধ্যে একটা করে টেস্ট নেগেটিভ এসেছে। তাদের আরও একটা নমুনা নেওয়া হয়েছে। আশা করছি কাল পরসুর মধ্যে তারাও ফিরতে পারবে।’

গত ১৯ এপ্রিল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ২৭ এপ্রিল অরুণের দ্বিতীয়বার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দুই দিন পর জানানো হয় রিপোর্ট নেগেটিভ। ৩০ এপ্রিল পুনরায় নমুনা সংগ্রহ করে শনিবার রাতে তাকে জানানো হয় পরপর দুটো নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল এসেছে তার।

ফলে রোববার দুপুরে অরুণকে সুস্থ ঘোষণা করে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।এদিন দুপুরে অরুণকে জেনারেল হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ। কোতোয়ালী থানা পুলিশের সদস্যরাও তাকে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

পরে জেনারেল হাসপাতাল থেকে অরুণকে নিয়ে যাওয়া হয় দামপাড়া নগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে। সেখানে সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তাকে পুনরায় ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।

আপাতত অরুণ সিএমপি পুলিশ লাইনে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। এর পর থেকে নিয়মিত ডিউটিতে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন উপ কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ্।