কালেরকন্ঠ : করোনাভাইরাস সংক্রমণে পুলিশের আরো দুই সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত তিন পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করলেন।

আজ বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া দুইজনের একজন হলেন ডিএমপির পুলিশ অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) দক্ষিণে কর্মরত এএসআই আব্দুল খালেক (৩৬)। আরেকজন ঢাকা মহানগর ট্রাফিক উত্তরের এয়ারপোর্ট এলাকায় কর্মরত কনস্টেবল আশেক মাহমুদ (৪২)।

মাসুদুর রহমান জানান, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বুধবার রাতে মারা যান ওই দুই পুলিশ সদস্য। এর আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান জসীম উদ্দিন (৪০) নামের এক পুলিশ কনস্টেবল। তিনি রাজধানীর ওয়ারী পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। ফকিরাপুলের একটি আবাসিক হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর।

ডিএমপি সূত্র জানায়, কনস্টেবল মো. আশেক মাহমুদের করোনা উপসর্গ দেখা দিলে বিএসএমএমইউ ওইদিনেই তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে। ২৭ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষা রিপোর্টে তাঁর কোভিড-১৯ পজেটিভ আসে। এরপর থেকে তাঁকে সিদ্ধেশ্বরী স্কুল অ্যান্ড কলেজে আইসোলেশনে রাখা হয়। বুধবার সন্ধ্যায় তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে (সিপিএইচ) আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

করোনা সংকট মোকাবেলায় সম্মুখ যুদ্ধের অগ্রভাগে থাকা বাংলাদেশ পুলিশের এই সদস্য জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার ইন্দ্রবাড়ি গ্রামে ১৯৭৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৃত. আয়েজ উদ্দীন। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টবল পদে যোগদান করেন তিনি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই পুত্রসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

এদিকে পিওএম দক্ষিণ বিভাগের এএসআই আব্দুল খালেকের ২৮ এপ্রিল করোনা উপসর্গ দেখা দিলে আইইডিসিআর ওই দিনেই তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে এবং ২৯ এপ্রিল তাঁরও নমুনা টেস্ট রিপোর্টে কোভিড-১৯ পজেটিভ আসে। এরপর থেকে তাঁকে আরামবাগ হোটেOKলে আইসোলেশনে রাখা হয়। বুধবার দিবাগত রাতে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে (সিপিএইচ) আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোরের দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বাংলাদেশ পুলিশের এই সদস্য বরগুনা জেলার বেতাগী থানার ঝোপখালী গ্রামে ১৯৮৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৃত. আজিজ মৃধা। তিনি ২০০৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টবল পদে যোগদান করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই কন্যা ও এক পুত্রসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

আজ দুপুর ১২ টায় রাজারবাগ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে তাঁদের জানাযা শেষে পুলিশি ব্যবস্থাপনায় স্ব স্ব জেলায় পাঠানো হয়েছে।

এদিকে তাঁদের এই অকাল প্রয়াণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছে এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। সেই সঙ্গে পুলিশের এই বীর সদস্যরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত সম্মানিত নগরবাসীর নিরাপত্তার জন্য কাজ করে গেছেন। দেশমাতৃকার সেবায় তাঁদের এ আত্মত্যাগে বাংলাদেশ পুলিশ গর্বিত।