ফাইল ছবি

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ অবদান, দৃষ্টান্তমূলক সেবার স্বীকৃতি স্বরূপ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক বিপিএম (বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল) পদক এর জন্য আবারো চুড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন। ‘সেবা’ ক্যাটাগরীতে বিপিএম পদকের জন্য তাঁকে মনোনীত করা হয়।

বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে একমাত্র কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম এই রাষ্ট্রীয় পদকের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন। বাকী ৬৩ জেলার কোন এসপি এবার বিপিএম কিংবা পিপিএম পদকের জন্য মনোনীত হননি। ৬৪ জেলার এসপি’দের একমাত্র প্রতিনিধি যেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম। আগামী রোববার ৫ জানুয়ারি জাতীয় পুলিশ সেবা সাপ্তাহ ২০২০ এর প্রথম দিনে ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ সদর দপ্তরের প্যারেড মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম সহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিপিএম ও পিপিএম পদকের জন্য মনোনীত ১১৮ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদক প্রদান ও ব্যাজ পরিয়ে দেবেন। এ কৃতিত্বপূর্ণ পদক প্রাপ্তির মাধ্যমে এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম তাঁর নামের শেষে বিপিএম এর পর ‘বার’ শব্দটি লিখবেন। অর্থাৎ ‘বার’ শব্দটির মাধ্যমে একাধিকবার এই বিপিএম পদক পেয়েছেন বুঝানো হবে। এছাড়া, বাংলাদেশ পুলিশের বাৎসরিক ‘মহোৎসব’ নামে খ্যাত পুলিশ সেবা সাপ্তাহ ২০২০ এ দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক মাদক উদ্ধারকারী জেলা ও দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারকারী জেলা হিসাবেও পৃথক ২ টি আইজিপি পদকের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। এ বছর আইজিপি পদকের জন্য ১০টির বেশী উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলাগুলোকে ‘এ’ ক্যাটাগরীর জেলা ও ১০ টির কম উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলাগুলোকে ‘খ’ ক্যাটাগরীর জেলা হিসাবে বিভক্ত করে ২ ক্যাটাগরীতে এ পদক দেওয়া হবে।

বিপিএম ও পিপিএম পদক প্রাপ্তরা রাষ্ট্রীয় অর্থ সুবিধা এবং প্রাপ্ত উপাধি নিজ নিজ নামের শেষে ব্যবহার করতে পারবেন। পদোন্নতি ও প্রাইজ পোস্টিং এ এই পদক গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম কক্সবাজারে যোগদানের মাত্র ১৫ মাসের মধ্যে ২ টি জাতীয় পর্যায়ের পদক প্রাপ্তি ও ৪ টি আইজিপি পদক প্রাপ্তির সৌভাগ্য অর্জন করলেন।

অপরাধ দমনে পুলিশিং অপারেশনে ব্যাপক সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘সেবা’ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম-কে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই বিপিএম জাতীয় পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশের বিশ্বস্ত সুত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে সিবিএন-কে বলেছেন-কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম’কে ইতিমধ্যে বিপিএম (সেবা) পদক প্রদানের জন্য পুলিশ সদর দপ্তেরর জাতীয় জুরিবোর্ড কর্তৃক চুড়ান্তভাবে মনোনীত করা হয়েছে। সুত্র আরো জানান, গত মঙ্গলবার ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও বুধবার ১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি বিপিএম ও পিপিএম পদকের জন্য মনোনীত ১১৮ জনের তালিকাটি চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ২ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের সারাদেশের জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এ পদকের জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে। জাতীয় পুলিশ সেবা সপ্তাহ-২০২০ উপলক্ষে আগামী ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকাস্থ রাজারবাগ পুলিশ হেডকোর্য়াটারে জাতীয় পুলিশ প্যারেড ও কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহন করতে সদয় সম্মতি দিয়েছেন। সেই অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই আনুষ্ঠানিকভাবে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম সহ পুলিশের রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের এই গৌরবময় সম্মাননা প্রদান করবেন বলে সুত্রটি সিবিএন-কে নিশ্চিত করেছেন। পরদিন ৬ জানুয়ারি আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) ‘খ’ ক্যাটাগীরতে দেশের সর্বোচ্চ মাদক উদ্ধারকারী জেলা ও দেশের সর্বোচ্চ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারকারী জেলা হিসাবেও কক্সবাজার জেলা পুলিশের কর্ণধার এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম-কে এ বিশাল সাফল্যের জন্য আলাদা ২ টি আইজিপি পদক, সনদ ও সম্মাননা প্রদান করবেন। এ সম্মাননা গ্রহণের জন্য গত মঙ্গলবার ৩১ ডিসেম্বর থেকে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম স্বপরিবারে ঢাকায় অবস্থান করছেন। বুধবার ঢাকা রাজারবাগ প্যারেড গ্রাউন্ডে পদকের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীতরা প্রস্তুতিমূলক প্যারেডে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া জাতীয় পুলিশ সপ্তাহে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম সহ উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকতারা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ ও ভোজে অংশ নেবেন। বিসিএস পুলিশ অফিসার্স এসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভায়ও তাঁরা যোগ দেবেন বলে সুত্রটি সিবিএন-কে জানিয়েছেন।

পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন কক্সবাজারে যোগদানের পর কক্সবাজারের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়। ইয়াবাকারবারি, মাদককারবারি, মানবপাচারকারী, অবৈধ অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী সহ পেশাদার অপরাধীদের মূর্তিমান আতংক হিসাবে সর্বত্র তাঁর আপোষহীন পরিচিতি গড়ে উঠে। সততা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের কারণে পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম গণমানুষের একজন প্রকৃত বন্ধু হিসাবে খ্যাতি অর্জন করে। তাঁর গঠনমূলক কর্মকান্ডে পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে ইতিবাচক ধারণা জম্মাতে থাকে। “দুষ্টের দমন-শিষ্টের পালন”-ই যেন পুলিশ বিভাগের কাজ-এই প্রবাদ বাক্যকে অক্ষরে অক্ষরে পালনের নিরন্তর চেষ্টা ছিল তাঁর অবিরাম। পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেনের কক্সবাজারে গত ১৫ মাসে দায়িত্বপালনকালীন সময়ে দৃঢ়চেতা ও সাহসী ভূমিকায় চোরাকারবারের গেটওয়ে হিসাবে পরিচিত এ অঞ্চলের সব ধরণের চোরাকারবারী ও দূষ্কৃতিকারীরা অনেকটা অসহায় ও কোনঠাসা হয়ে পড়ে। তাঁর আপোষহীন ভূমিকায় অপরাধীরা বাধ্য হয়ে অপরাধকর্ম থেকে দূরে সরতে থাকে।

পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেনের দৃঢ় ভূমিকায় মহেশখালী উপকূলের ভয়ংকর জলদস্যুরা বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর ৪৩ জন সশস্ত্র জলদস্যুকে মহেশখালী হাইস্কুল মাঠে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিলেন। র‍্যাব প্রধান বেনজির আহমেদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই সফল আত্মসমর্পণ হয়েছিলো। যে ৪৩ জন পেশাদার জলদস্যু এখন স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে এসেছে।
ইয়াবা সহ সবধরনের মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সর্বত্র তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। পালাতে থাকে ইয়াবার গডফাদার, খুচরা বিক্রেতা, ইয়াবা সেবীরা। চরম আতংকিত হয়ে গাঢাকা দেয় ইয়াবার পৃষ্ঠপোষকতাকারীরা। ইয়াবাকারবারীরা নিজেরা নিজে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে এবং ভাগবাটোয়ারা নিয়ে কথিত বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হতে থাকে প্রতিদিন। আইনী পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতাও গড়ে তোলা হয় সর্বত্র। টিকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত অনেক ইয়াবাকারবারী সরকারের কাছে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়। সে ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ইয়াবার স্বর্গরাজ্য টেকনাফ হাইস্কুল মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি, পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী (বিপিএম-বার) সহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ১০২ জন আত্মস্বীকৃত ইয়াবাকারবারী আত্মসমর্পণ করে। যা ছিলো, এ দেশের মাদককারবারী আত্মসমর্পণের প্রথম রেকর্ড। আভ্যন্তরীন সংঘর্ষে নিহত হয়, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আনার প্রথম জনক ও মিয়ানমারের ২৩ টি ইয়াবা কারখানার ডিলার বলে খ্যাত সাইফুল করিম। এভাবে গত ১৫ মাসে কক্সবাজার জেলায় নিহত হয় প্রায় দেড়শ’ চিহ্নিত ইয়াবাকারবারি ও জগন্য অপরাধী। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আলোকে এ সাড়াশি অভিযান এখনো তীব্রতরভাবে চলমান রয়েছে। গত ১৫ মাসে স্থানীয়ভাবে ইয়াবা সহ মাদক ব্যবসা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দমন করা সম্ভব হয়েছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের তীব্র অভিযানে থাকতে না পেরে ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছরা ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর উপস্থিতিতে ৯৬ জন জলদস্যু ও অস্ত্রের শীর্ষ কারিগর আত্মসমর্পণ করেছে। আত্মসমর্পণকারীরা জেলা পুলিশের কাছে জমা দিয়েছে ১৫৫ টি অবৈধ অস্ত্র, অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জাম ও প্রচুর গোলাবারুদ।

পুলিশ বিভাগে নিয়োগ মানে বস্তা ভরে ভরে অনৈতিক লেনদেন করা। ২০১৯ সালের ২ জুলাই কক্সবাজার জেলা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় ৩৮৬ জন টিআরসি (ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল) নিয়োগ দেয়া হয়েছে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে। এ নিয়োগে দারুণ প্রশংসিত হয়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। কক্সবাজার জেলার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন সমুহ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করে জেলা পুলিশের ভাবমূর্তির ব্যারোমিটারের পারদকে উপরে উঠিয়েছেন। এভাবে একের পর এক সফলতা আর রাষ্ট্রের দেয়া এজেন্দা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন যিনি-তিনি হলেন কক্সবাজারের স্বনামধন্য, নির্লোভ নিরহংকার পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের প্রথম দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান কক্সবাজারের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরল সম্মাননায় সম্মানিত করা হয়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশের উদ্যোগে। কক্সাবাজার জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটিকে সৎ, বলিষ্ঠ, গ্রহনযোগ্য ও যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে। জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটিকে করা হয়েছে আরো অধিকতর গতিশীল ও সক্রিয়। স্থানীয়ভাবে “দুঃসাহসিক অভিযাত্রায় সফল নায়ক” হিসাবে উপাধি পেয়েছেন এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম।

২০১৯ সালে জাতীয় পুলিশ সেবা সপ্তাহে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন সহ জেলা পুলিশের ৫ জন কর্মকর্তা পেয়েছিলেন, পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার বিপিএম (বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল) এবং পিপিএম (প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল)। এদের মধ্যে পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন পেয়েছেন বিপিএম-(সাহসিকতা), টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ পেয়েছেন বিপিএম-(সাহসিকতা), কক্সবাজার সদর মডেল থানার তৎকালীন ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার পেয়েছেন পিপিএম-(সাহসিকতা), টেকনাফ থানার এসআই মোঃ শরিফুল ইসলাম পেয়েছেন পিপিএম-(সাহসিকতা) এবং একই থানার এসআই রাসেল আহমদ পেয়েছেন বিপিএম-(সাহসিকতা)। জাতীয় পর্যায়ের এ পাঁচটি পদকই অন্যান্যদের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সাথে ২০১৯ সালে জাতীয় পুলিশ সপ্তাহে সারা দেশে সর্বোচ্চ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক উদ্ধারে পৃথক ২ টি আইজিপি পদক পেয়েছেন জাতীয় পুলিশ সপ্তাহে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। এ দুটো জাতীয় পদকও আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী (বিপিএম বার) এর কাছ থেকে গ্রহন করেছেন এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম।

গত একবছরে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ টি জেলার মধ্যে সার্বিক সাফল্য বিবেচনায় ৫ বার চট্টগ্রাম রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ জেলা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক (বিপিএম-বার, পিপিএম) এর কাছ থেকে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম ৫ বার নিয়েছেন শ্রেষ্ঠ জেলার পদক, সম্মাননা ও সনদ। থাইল্যান্ড, জাপান ও ফিলিপাইন থেকে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম নিয়েছেন আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ। রোহিঙ্গা শরনার্থী ব্যবস্থাপনা ছিলো কক্সবাজার জেলা পুলিশের জন্য একটা বড় কঠিন কাজ। এ চ্যালেঞ্জ সফলভাবে ব্যবস্থাপনায় সক্ষম হয়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। গুজব প্রতিরোধ ও ডেঙ্গু রোগের বিস্তার রোধে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ। জেলায় গুজবকে শূণ্যের কোঠায় নিয়ে এসেছিলেন স্বল্প সময়ে।

এসব কাজ করতে টিম ওয়ার্কে যাঁরা নিরন্তর সহযোগিতা করে সফলতার ঝুড়িকে আরো সমৃদ্ধ করেছেন-তাঁরা হলেন এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম এর রাইট হ্যান্ড বলে পরিচিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, ল্যাফ্ট হ্যান্ড অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) রেজওয়ান আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ইন সার্ভিস) মশিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) নিহাদ আদনান তাইয়ান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ আদিবুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজী মতিউল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক বিভাগ) বাবুল চন্দ্র বণিক,সহকারী পুলিশ সুপার (মহেশখালী সার্কেল) রতন কুমার দাশ গুপ্ত প্রমুখ পুলিশ কর্মকর্তাগণ।

সংক্ষিপ্ত জীবনী :
অপ্রতিরোধ্য এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম জম্মগ্রহন করেন বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ওলানিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে। তাঁর গর্বিত পিতা মরহুম মাস্টার আবদুল কাদের হাওলাদার, মাতা অজুফা খাতুন। তাঁর বাবা ছিলেন, এলাকার একজন আদর্শ ও গুনী শিক্ষক। তাঁরা পরিবারে ৮ ভাই বোন। প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন-উত্তর শাহবাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করেছেন বরিশালের ঐতিহ্যবাহী জর্জ ইনষ্ঠিটিউট থেকে। রেকর্ড সংখ্যক মার্ক নিয়ে ঢাকা ল্যাবর‍্যাটরী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইসএসসি পাশ করেছেন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে কৃতিত্বের সাথে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করে ২৪ তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিসিএস (পুলিশ) সার্ভিসে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে বিসিএস (পুলিশ) এর একজন কৃতি সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
চাকুরি জীবনের শুরুতেই এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম পুলিশ হেডকোয়ার্টারে যোগ দেন। এরপর সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসাবে ডিএমপি’তে, সহকারী পুলিশ সুপার হিসাবে মানিকগঞ্জ সদর সার্কেলে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে মুন্সিগঞ্জ জেলায়, কিশোরগঞ্জ জেলায় ও ঢাকা জেলায় কর্মরত ছিলেন। পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (টিআর) পদে দায়িত্বপালনকালীন সময়ে ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর তিনি পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পান। ২০১৮ সালের ১১মার্চ তিনি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (ওয়েলফেয়ার এন্ড ফোর্স) হিসাবে বদলী হয়ে সেখানেও তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ উপ পুলিশ কমিশনার হিসাবে ডিএমপি’তে কর্মরত থাকাবস্থায় ২০১৮ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের পুলিশ সুপার হিসাবে নিয়োগ পান। এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেনের জন্মদিন ১৬ সেপ্টেম্বর। ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এ.বি.এম মাসুদ হোসেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার হিসাবে যোগদান করেন। তৎকালীন বিদায়ী পুলিশ সুপার ডঃ এ.কে.এম ইকবাল হোসাইন থেকে তিনি দায়িত্ব গ্রহন করেন। ২০১৪ সালে কৃতিত্বের জন্য চৌকষ, মেধাবী ও দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম আইজিপি ব্যাজ অর্জন করেন। বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চর গোপালপুর ইউনিয়নের মিথুয়া গ্রামের বুনিয়াদি ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান, প্রখ্যাত আইনজীবী, বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক সভাপতি ও বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন কাবুল এর কন্যা ইংরেজি বিষয়ে অনার্স সহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা জেনিফার মুন’কে নিজের জীবনসঙ্গীনি হিসেবে বেচে নেন ২০০৮ সালের ৩১ অক্টোবর। এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম কক্সবাজারে কর্মরত থাকাবস্থায় তাঁর শ্বশুর বরিশালের সবার প্রিয়, আমৃত্যু বরিশালের পিপি এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন কাবুল ২০১৯ সালে ১৯ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন। এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম এবং জেনিফার মাসুদ দম্পতি ঈসা ও মুসা নামক ফুটফুটে চোখজুড়ানো দু’জমজ সন্তানের জনক ও জননী।