নিজস্ব প্রতিবেদক:
মুক্তি পাগল একদল বীর সন্তানের আত্মত্যাগের বিনিময়ে জুলুমখোর পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। স্বাধীন হয়ে এই দেশে এগিয়ে যাচ্ছে। সবক্ষেত্রে এখন পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। দীর্ঘদিন এই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলিত থাকলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তাদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করে তাদেরকে নানা সহযোগিতা ও সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কক্সবাজার জেলার প্রথম শহীদ মোঃ শরীফ চেয়ারম্যানের সহযোগি ও মহেশখালীর দ্বিতীয় শহীদ কালারমারছড়ার শফিকুর রহমানের পরিবার সরকারি সুবিধা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত। তাই দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করে চরম দুরাবস্থায় দিন কাটাচ্ছে তার সন্তানেরা। তার বড় ছেলে আজিজুর রহমানের বৃদ্ধ বয়সে হাট-বাজারে কুলির কাজ জীবন পার করেছেন। এখন তিনি রোগ ভুগে মৃত্যু শয্যায় রয়েছেন। কিন্তু টাকা অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

স্বাধীনতার দলিল সূত্র মতে, কালারমারছড়া ইউনিয়নের ছামিরাঘোনা এলাকার শফিকুর রহমান ছিলেন চৌকিদার। তিনি কক্সবাজার জেলার প্রথম শহীদ মোঃ শরীফ চেয়ারম্যানের একনিষ্ঠ সহযোগি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সবাই যখন পালিয়ে যায় তখন বীরের মতো দাঁড়িয়েছিলেন শহীদ মোঃ শরীফ চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের অন্যান্য সহযোগি ও পরিষদের অন্যান্য চৌকিদাররা চাকরি ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু একমাত্র চৌকিদার শফিকুর রহমানই পালাননি। তিনি দেশকে ভালোবাসে চেয়ারম্যান মোঃ শরীফের সাথে থেকে গিয়েছিলেন। চেয়ারম্যানের একনিষ্ঠ সহযোগি হিসেবে শফিকুর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়তে দেশের মানুষেকে সংঘটিত করেন। এর মধ্যে রাজাকার ও পাক বাহিনী মিলে মোঃ শরীফ চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করে। তাকে হত্যার কয়েকদিনের মধ্যে পাকিস্তানি হানাদাররা চৌকিদার শফিকুর রহমানকে ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু আর লাশ পাওয়া যায়নি। শহীদদের তালিকায় মহেশখালী উপজেলা তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শফিকুর রহমান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শফিকুর রহমানকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর চরম দুরাবস্থায় পড়ে যায় তার পরিবার। একমাত্র উপার্জনক্ষম তাকে হারিয়ে তার তিন ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে তার স্ত্রী মহা বিপাকে পড়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু শহীদ শফিকুর রহমান তার পরিবারের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন। কয়েকবছর পর অজানা কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। ছেলে-মেয়েরা সবাই অশিক্ষিত থেকে যাওয়ায় তার ফিরে পায়নি। তারপরও সেই থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নানাভাবে তদবির করেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বা কোনো ধরণের সহায়তা পাননি। শহীদ শফিকুর রহমানের সন্তানের সবাই এখন বার্ধ্যকে উপনীতি হয়েছে। কিন্তু সবাই সন্তানদের নিয়ে দারিদ্রের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে। শূন্যহাতে পিতাকে হারানোর কারণে তাদের কোনো আত্মসম্বল নেই। সে কারণে খেয়ে-না খেয়ে তাদের দিন যাচ্ছে। বড় ছেলে আজিজুর রহমান দীর্ঘদিন কাঁধে করে হাট-বাজারের মালামাল সরবরাহের কাজ করেছেন। কিন্তু অর্থনৈতিক দৈন্যতায় শেষ বয়সে এসে তিনি মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেছেন। এখন তিনি পথে ঘুরে বেড়ান। কিন্তু অর্থৈর অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না।
শহীদ শফিকুর রহমানের নাতি ও আজিজুর রহমানের পুত্র শফি আলম বলেন, আমাদের পুরো গোষ্ঠী আওয়ামী লীগ করে। আমার দাদার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন। সে কারণে তিনি স্বাধীনতার জন্য নির্ভয়ে কাজ করেছিলেন। তিনি পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঘুরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মানুষকে সংঘটিত করেছিলেন। জেলার প্রথম শহীদ মোঃ শরীফ চেয়ারম্যানের একনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে জীবনের শঙ্কা সত্তে¡ও তিনি পালিয়ে যাননি। মোঃ শরীফ চেয়ারম্যানকে হত্যার পরও আমার দাদা শফিকুর রহমান পালিয়ে যাননি। তারপরও তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মানুষকে সংঘটিত করার কাজ অব্যাহত রেখেছিলেন। তাই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু কোনো দিন লাশটা ফেরত পাওয়া যায়নি।

শফিউল আলম আরো বলেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর প্রতিটি শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের যথেষ্ট মূল্যায়ন করেছে। কিন্তু আমার দাদা একজন শীর্ষ মাপের শহীদ হলেও আমরা সে সুবিধা পায়নি। একটু সহযোগিতা পেতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের অনেকবার গিয়েছি। গাড়ি ভাড়া হিসাব করলেও অনেক টাকা হয়ে যাবে। কিন্তু সবাই আশ্বাস দিয়েছে; আমাদের ন্যায্য সহযোগিতা পায়নি। সর্বশেষ মাননীয় সংসদ আশেক উল্লাহ রফিক দুই বান্ডিল টিন লিখে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুই বছর অতিবাহিত হলেও তা এখন পর্যন্ত পাইনি।

তিনি বলেন, আমার বাবা ছিলেন আমার দাদার বড় ছেলে। দাদা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তিনি ৫ ভাইবোনের বিরাট সংসার টেনেছেন। অশিক্ষিত হওয়ায় কোনো চাকরি করতে পারেননি। সারাজীবন কুলির কাজ করেছেন। অমানুষিক পরিশ্রম করে তিনি বার্ধ্যক্যে উপনীতি হওয়ার সাথে সাথে অসুুস্থ হয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি চরম অসুস্থ রয়েছেন। কিন্তু আর্থিক অভাবের কারণে তাকে চিকিৎসা করাতে পারছি না। এই মুহুর্তে আমার দাদা একজন শীর্ষ শহীদ হিসেবে আমাদের ন্যায্য সরকারি ভাতাটা আমরা চাই। এই জন্য আমি মাননীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আহŸান জানাচ্ছি।