ইমাম খাইর, সিবিএনঃ

পেশাগত কাজ করতে গিয়ে কক্সবাজার কোর্ট পুলিশের হাতে আইনজীবী লাঞ্ছিত করার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে আদালতপাড়া। দুই আইনজীবীকে হাতকড়া পরানোর সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের আগামী রবিবার (২৮ জুলাই) এর মধ্যে প্রত্যাহারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা।
বুধবার (২৪ জুলাই) দুপুরে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির জরুরী সাধারণ সভায় ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা এই দাবি করেন। সেই সঙ্গে আদালতঙ্গণকে দালাল, টাউট, বাটপারমুক্ত করার ঘোষণা দেন বক্তারা।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আ.জ.ম মঈন উদ্দিনের সভাপতিত্বে সাধারণ সভায় আইনজীবীরা ক্ষোভের সঙ্গে প্রশ্ন তুলেন, একজন সাধারণ কনস্টেবল কোন সাহসে পোস্ট গ্রেজুয়েট ও সম্মানিত আইনজীবীর গায়ে হাত তুলে? কোন আইনে হাতকড়া পরানো হয়? ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আদালত বর্জনসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
তাদের প্রশ্ন, ঘটনার সপ্তাহ পরেও কেন ব্যবস্থা নেয়া হলোনা? কার খুশিতে প্রশাসনের রহস্যজনক নিরবতা? এখনো সময় আছে। ব্যবস্থা নিন।
আইনজীবীদের অভিমত, নিয়ম ভঙ্গ করে আসামীদের কোর্ট সেলে রেখে দেয়ার কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বারবার সময় নিয়েও সমঝোতা বৈঠকে বসেনি পুলিশ।
সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবালুর রশীদ আমিন সোহেলের সঞ্চালনায় সভায় বক্তারা বলেন, জনগণের টেক্সের টাকায় চাকুরি করে জনগণের গায়ে হাত তুলার দুঃসাহস কেমন করে পুলিশ? তাদের সাহসের মাজেজা কোথায়? সিএসআইসহ যারা ওইদিন দায়িত্ব পালন করেছিল তাদের অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। আইনজীবীরা ক্ষেপলে সমস্যা হবে।
বক্তাদের আক্ষেপ, আইনজীবীকে হাতকড়া পরানো হলো। এসপি-এডিশনাল এসপি আমলে নেন না- তা কোনভাবে মেনে নেয়া যায়না। আইনজীবীকে হাতকড়া পরানোর আইন নেই। এর মাধ্যমে সমস্ত আইনজীবীকে অপমানিত করা হয়েছে। পুলিশ নিজেই আইন লঙ্ঘন করেছে।
সভায় আইনজীবীরা আদালত পাড়াকে দালাল, টাউট, বাটপারমুক্ত করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবি তুলেন। তারা বলেন, আদালত চলাকালেই আসামী পাঠানোর নিয়ম থাকলেও তা অমান্য করা হয়। বিভিন্ন থানা সন্ধ্যা ৭ টার পরও আসামী চালান করে। যে কারণে টাউট-বাটপাদের মাধ্যমে কোর্ট পুলিশ অনৈতিক সুবিধা হাসিল করতে সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিচারক না পেয়ে আসামী হয়রানীর শিকার হয়। অযথা ভোগান্তিতে পড়তে হয় স্বজনদের।
নিয়ম হলো-গ্রেফতারকৃত আসামীর সঙ্গে মামলা ও আলামত পাঠানো। কিন্তু প্রায় ইয়াবার মামলায় আসামী চালানের সঙ্গে উদ্ধারকৃত ইয়াবা পাঠায়না পুলিশ। যে কারণে একই ইয়াবায় অনেক নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর সুযোগ থেকে যায়। থানায় কোন আলামত রাখার নিয়ম না থাকলেও অনেকাংশে মানা হয়না। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আইনজীবীরা।
সমাপনি বক্তব্যে আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আ.জ.ম মঈন উদ্দিন বলেন, ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে কোর্ট ইন্সপেক্টরসহ কোর্টসেলে কর্মরত সকল পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করতে হবে।
অন্যথায় পরবর্তী সভার মাধ্যমে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সকল আইনজীবী মাঠে থাকবে। নিজেদের মান-মর্যাদা রক্ষায় বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবেনা।
তিনি বলেন, আদালত পাড়ায় কোন টাউট বাটপারের স্থান হবেনা। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আইনজীবীদের চেম্বার সমস্যা দূরীকরণে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে।
সভায় বক্তব্য রাখেন- এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ (২), এডভোকেট মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, এডভোকেট মোহাম্মদ আহমদ কবির, এডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া, এডভোকেট মো: আখতার উদ্দিন হেলালী, এডভোকেট মো: কাসেম আলী, এডভোকেট মোহাম্মদ নেজামুল হক, এডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল মন্নান, এডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (১), এডভোকেট গোলাম ফারুক খান কায়সার, এডভোকেট আব্বাছ উদ্দিন চৌধুরী, এডভোকেট আহসান উল্লাহ, এডভোকেট অধ্যাপক নাছির উদ্দিন, এডভোকেট একরামুল হুদা, এডভোকেট রবিউল এহেছান, এডভোকেট সেলিম উদ্দীন, এডভোকেট মো: সোলাইমান, এডভোকেট মোহাম্মদুল হক, এডভোকেট জিয়াউদ্দিন বাবলু (বাবলু মিয়া), এডভোকেট রিদুয়ান আলী।
কার্যনির্বাহী পরিষদের মধ্য থেকে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন- সহ-সভাপতি, মোহাম্মদ ছাদেক উল্লাহ, হোছাইন আহমদ আনসারী, সহ-সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) মোহাং ফিরোজুল আলম, সহ-সাধারণ সম্পাদক (হিসাব) আবদুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, পাঠাগার ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক আরিফুল মোস্তফা, আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, সদস্য নুরুল মোর্শেদ আমিন, এস.এম. নুরুল ইসলাম, সব্বির আহমদ, মঈনুল আমিন, মোহাম্মদ কলিম উল্লাহ, মিজানুর রহমান ভুট্টো, মোহাম্মদ বদিউল আলম সিকদার, আব্বাছ উদ্দিন চৌধুরী, চকরিয়া প্রতিনিধি মোঃ মঈন উদ্দিন, মহেশখালী প্রতিনিধি মোহাম্মদ নুরুল আলম, কুতুবদিয়া প্রতিনিধি এ.ইউ.এম জিল­বুল করিম।