আজাদ মনসুর
বিগত দু’দশকে সাংবাদিকদের মনমানসিকতায় বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। অতীতে সাংবাদিক মানে একজন আদর্শ নীতিনিষ্ঠ সাহসী ব্যক্তিত্বকে বোঝাতো। কিন্তু এখন বিষয়টা সম্পূর্ণ উল্টে গেছে। এখন সাংবাদিকতায় আদর্শের কোনো বালাই নেই। সাংবাদিকরা অনেকেই এখন রাতারাতি ধনী হবার প্রতিযোগিতায় নেমে ফ্ল্যাট, গাড়ি, বাড়ি করেছে। এ প্রতিযোগিতায় ইতিমধ্যে কেউ কেউ কোটিপতি পর্যন্ত হয়েছে। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। এখানে একটা কথা বলা দরকার, অতীতে সংবাদপত্রে সাংবাদিক কর্মচারী কেউ দুর্নীতি করলে, অর্থের বিনিময়ে নিউজ করলে, নিউজ প্রকাশ বন্ধ করলে অথবা অন্য কোনোভাবে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করলে কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতো। আজকের বাস্তবতা হলো, যে সাংবাদিকদের গাড়ি আছে, দামি ফ্ল্যাটে থাকে কর্তৃপক্ষ তাদেরই গুরুত্ব দেয় ও যোগ্য বলে মনে করেন। এতে দোষের কী আছে? এই যখন মালিক কর্তৃপক্ষের অবস্থা তখন সাংবাদিক বা সাংবাদিকতার কী অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়। সাংবাদিকতা পুরোপুরি পণ্যে পরিণত হয়েছে।

অতীতে সাংবাদিকতায় আসতো মেধাবীরা। এখন মুর্খরা তো স্ব-গৌরবে ভাস্বর। ফলে আগে যে সকল মেধাবি সাংবাদিক দীর্ঘ পরিক্রমায় সাংবাদিকতা করে গুটি কয়েক সিনিয়র বনে গেছেন ওই সকল সাংবাদিকদের চারপাশে এখন মুর্খ আবাল সাংবাদিকদের কারণে তাদের মেধা ও মননে ঘুনে ধরেছে। তাই তারা এখন ভাল আর খারাপ কি বুঝেন না। অনেকের কাছে শুনেছি সিনিয়রদের মানবিক মূল্যবোধ হিজরাদের মত হয়ে গেছে। তারা কিছু দেখেও দেখেনা। হিজরাদের একটা ধর্ম আছে তারা কিছু চাইলে দিতে হবে। না দিতে অপারগতা দেখালে কাপড় তুলে বলে, ধরে দেখ না, তুমিও কি হিজরা? বেইজ্জতি করবেই। জানিনা সাংবাদিকতার কোন ধর্ম আছে কিনা। এতদিন এই পেশায় থেকেও বুঝতে পারলাম না। সাংবাদিকতার ধর্ম কি? কক্সবাজারের সাংবাদিকতার যতকথার আজকের নবম পর্ব।

যখন সাংবাদিকতার ভাল ও খারাপ দিক নিয়ে কেউ লিখছেন না, তখন কেউ তো এগিয়ে আসলো। কক্সবাজারের সাংবাদিকতার ভাল আর খারাপ তথা সব অসংগতি যখন তুলে ধরা হচ্ছে তখন আমি একজন কক্সবাজারের বিবেকমান সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে এই জগতটা নিয়ে কি একবারও ভাবা উচিত নয়? তাদের কথা বলছি, আমিসহ অনেক সাংবাদিকদের লেখনিতে কক্সবাজারের সাংবাদিকতার অনেক চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। আমার পর্ব এখন নবমে। কক্সবাজারের সাংবাদিকতার যতকথায় চেষ্টা করছি সংবাদ ও সংবাদপত্রের সাথে নিয়োজিত গণমাধ্যমকর্মীদের যত অসংগতি তুলে ধরার। লেখাটা ছাপানো সংবাদপত্রে তাৎক্ষনিক মূল্যায়ন হয়তো করা যায়না। কিন্তু বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেসবুকে যখন বিষয়টি প্রকাশ করা হয় তখন শুধু দেখি সাংবাদিক নয় এমন লোকদের পাল্লা ভারি লাইক ও কমেন্টস করতে দেখা যায়। কিন্তু কক্সবাজারের সিনিয়র নামধারি সাংবাদিকরা পড়ে কিনা জানিনা, তবে অনেকে নিজ দায়িত্বে পড়ে এড়িয়ে চলেন বিষয়গুলো। তার মানে কি লোকদের কথামত আপনারা হিজড়া? তাহলে কেন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলছেন? একবারও কি ভাবছেন। কক্সবাজারের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের নিয়ে নিয়ে? কোথায় গেছে আমার সেই গৌরবগাঁথা সাংবাদিকতা? মোটেও নিজেদের এড়াতে পারেন না। কি করবো পেটের দায়ে অন্য পেশায় সময় বেশি দেয়া হচ্ছে। যদি কোন একটা ভাল মাধ্যম পেতাম, কাজ করতাম। ভাল মাধ্যম যখন এখন অধরা, করার কিছুই নেই। ভাল কোন মাধ্যমে যদি থাকতাম তাহলে সময় হতো আপনাদের মতো সিনিয়র নামধারি বাবুদের আংগুল তুলতে। মনে কিছু নিয়েন না বা বিয়াদবি মনে করবেন না। সংগত কারণে বলতে হচ্ছে অনেক সিনিয়র ভাই জানেন, ২০০৯ সালে যখন আমার সাংবাদিকতার বয়স ৬ বছর।

তারুণ্যের জয়গান গাওয়া একমাত্র প্রতিনিধিত্বশীল সাংবাদিক সংগঠন কক্সবাজার সাংবাদিক সংসদ (সিএসএস) এর আত্ম প্রকাশের পর যখন কিছু প্রোগ্রাম হাতে নিয়ে আমন্ত্রণপত্র নিয়ে কয়েক সিনিয়র সাংবাদিক ভাইদের কাছে গিয়েছিলাম। তখন আপনাদের আচরণে ক্ষোব্ধ হয়ে আপনাদেরকে কি বলে আসছিলাম মনে আছে? বর্তমানে যেসকল তরুণ সাংবাদিক সাংবাদিকতা করছে তারা তো জানে না যে কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক মানে কি? শুধু তারাই কক্সবাজারে এককভাবে রাজত্ব করবে। সে সময়কার দু’মতের দু’ সাংবাদিক সংগঠন ও কক্সবাজার প্রেসক্লাব যখন নিবু নিবু! কক্সবাজার সাংবাদিক সংসদ (সিএসএস), আপনারা ভুলে গেলেও ইতিহাস তো আপানাদের মত এত জগণ্য নয়? নথিযুক্ত কাগজ আর কলম একদিন কথা বলবেই।

পাঠক, কি বলতে কি বলে ফেললাম বুঝতে পাচ্ছি না। আসলে কোন একটা বিষয় যখন উঠে আসে তখন বিস্তারিত না বললে লেখার অসম্পর্ণতা থেকে যায়। কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক মানে আমরা যাদেরকে বুঝি তারা এখন পেশাটিকে বেশি নষ্ট করে দিচ্ছে। তাদের মৌনতা কক্সবাজারকে আরও নিচে নামিয়ে দিবে। এরা চাইলে দ্রুত প্রদক্ষেপ নিতে পারতেন। কেন নিবেন কে কোন পরিবার থেকে উঠে এসেছেন আমাদের জানা আছে। এখন অনেকেই বাড়ি, গাড়ি, জমি ও ফ্ল্যাটের মালিক। চিহ্নিত সিনিয়র নামধারি কার নেই বলুন তো বাড়ি, ফ্লাট ও জমি। ওই সময় আপনাদের সাংবাদিকতা ছাড়া অন্য কোন পেশা ছিল? জানি এখন অনেকে সাংবাদিকতার পাশাপাশি অন্য পেশার সাথেও জড়িত। যাক, যেখানে গেছেন চষে ফেলেছেন।

সাংবাদিক হিসেবে যখন কোন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানে যেতাম সংবাদের প্রয়োজনে তখন আপনাদের নাম বলতেন উনারা। পাঠক, বিশ্বাস করুণ তাদের কথা শুনে মাথা নত করে ফেলতাম। যাক, অনেক কিছুর মালিক হয়েছেন এখন প্রজন্মের প্রয়োজনে কিংবা আপনারা মরলে আপনাদের শেষযাত্রাকালে আপনাদের বহন করার মত একটা পরিবেশ তৈরি করুণ। আপনার কর্মস্থলে যাতে আপনাদের এনে কয়েক মিনিটের জন্য রাখতে পারি। একটা জানাযা যাতে সাংবাদিকদের তীর্থভূমি হিসেবে খ্যাত প্রেসক্লাবে করতে পারি। মনে করবেন না যে, আপনাকে কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে কোথাও কোন অনুষ্ঠানে চেয়ার দিচ্ছে মানে আপনাকে মূল্যায়ন করে দিচ্ছেন। তার আড়ালে আপনি একজন খুব খারাপ মানুষ। লজ্জা থাকলে কক্সবাজারের সাংবাদিকতায় পরিবর্তন আনুন। আমার পর্যটন শহর কক্সবাজারেরও পরিবর্তন হবে আমার বিশ্বাস। আমি দেখেছি কক্সবাজারের সাংবাদিকতায় এখন যত মুর্খতার আধিক্য তারচে বেশি মেধাবি কর্মঠ ও চৌকস সাংবাদিকদের সংখ্যা বেড়েছে। তাদের সঠিক মূল্যায়ন করতে না পারলে আমরা একদিন তাদের এ জগত থেকে হারাবো।

প্রিয় পাঠক, সাংবাদিকতায় আর আগের মতো ধার নেই, সবকিছু কেমন যেন হয়ে গেছে, কোনোকিছু লিখলেও কাজ হয় না-প্রায়ই শুনতে হচ্ছে এ অভিযোগ। শুনতে হচ্ছে এখন আর কাগজ পড়াই যায় না। ভুলে ভরা, যাচ্ছেতাই হাবিজাবি দিয়ে কাগজ ভরে দিচ্ছে। সংবাদপত্র-সাংবাদিকতা তথা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু তারপরও এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য নেই। বরং উল্টো করে বলা হয় যতোসব বাজে অভিযোগ। চলবে…

আজাদ মনসুর (এম.এ, এলএল.বি) শেষবর্ষ
আইটি স্পেশালিষ্ট, প্রণেতা-কক্সবাজার সাংবাদিক কোষ, সভাপতি-কক্সবাজার সাংবাদিক সংসদ (সিএসএস)
azadcox90@gmail.com/০১৮৪৫-৬৯ ৫৯ ১৬