ইমাম খাইর, সিবিএনঃ
দুঃসহ যানজটে ক্রমেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে কক্সবাজার পৌরবাসী। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মোড়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকা মানুষজন সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দুর্বল সিদ্ধান্তের কারণে সহসা যানজট নিরসন হচ্ছেনা। প্রতিদিন সড়কে ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।
দিনের বেলায় মালবাহী ট্রাক, ভারি যান শহরের ভেতরে ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছে না। প্রতিদিন সড়কে ট্রাক দাঁড়িয়ে টনেটনে মালামাল লোড-আনলোড করছে। আর এসব গাড়ি থেকে ট্রাফিক পুলিশের কিছু সদস্য আর্থিক সুবিধা নেয় বলেও অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের। গুটি কয়েক ব্যক্তিকে সুবিধা দিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার পৌরবাসী।
স্থানীয়দের মতে, চাহিদার অন্তত দশ গুণ অটোবাইক ইজিবাইক শহরে চলাচল করছে। ফুটপাত দখল, শহরের সড়কগুলোর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত যানবাহনের দীর্ঘ লাইন, অসহনীয় শব্দজট সবকিছু মিলিয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) বাবুল চন্দ্র বণিক বলেন, যানজট নিরসনে শহরের ৬টি পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে। ভারি কোন যানবাহন শহরের ভেতর না ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবু অগোচরে কিছু গাড়ি ঢুকে যায়-তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, মালামাল লোড আনলোড এর নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় এমন অবস্থা হচ্ছে। বারবার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বিষয়টি অবগত করার পরও সমাধান হচ্ছে না।
যেভাবে হোক সুনির্দিষ্ট একটি জায়গায় লোড-আনলোডের ব্যবস্থা করতে পারলেই যানজট অনেকটা কমে যাবে মনে করেন ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা। যানবাহন থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগটি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
যানজটের কারণ হিসেবে দেখা গেছে, শহরের ব্যস্ততম সড়কে অতিরিক্ত টমটম-ইজিবাইক চলাচল, দক্ষ চালক, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং।
তাছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নেই পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ।
রাস্তায় অবাধে টমটম আটকা পড়ে মুহূর্তের মধ্যেই পুরো শহরে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের সামনেই এ অনিয়মটা হলেও কেউ কিছু বলছে না।
কক্সবাজার শহরে দিন দিন জনসংখ্যা, বসত বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস ও কর্মসংস্থান বেড়েই চলছে। রাস্তাঘাটের পরিধি বাড়েনি। টমটম, অটোরিক্সা, রিক্সা, সিএনজির সংখ্যা শহরে দিন দিন বাড়ছে। অবৈধ দখল ও ফুটপাতের কারণে ছোট হয়ে গেছে চলাচলের রাস্তা। অনিয়ন্ত্রিত ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে যানবাহন চলাচলের কারণে বেশির ভাগ সময় ভয়াবহ যানজট থাকে।
তারাবনিয়ারছড়া এলাকার এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, কক্সবাজার শহর অভ্যন্তরে দিনের বেলায় ভারী যান, বড় গাড়ীগুলো প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অনেকে মানছে না। ট্রাফিক পুলিশকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে প্রতিদিন শহরের ভেতরে ঢুকছে মালবাহী গাড়ি। সড়কের ওপর মালামাল লোডআনলোড করা হয়।
বিশেষ করে- কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তারাবনিয়ারছড়া, বাজার ঘাটা, আইবিপি রোডে দিনের বেলায় প্রচুর যানজট লেগে থাকে। ভোলাবাবুর প্রেট্রোল পাম্প ও ঝাউতলা এলাকা যেন অঘোষিত বাসটার্মিনাল।
স্থানীয় আরেক দোকানদার জানিয়েছে, যানবাহনগুলো থেকে ট্রাফিক পুলিশের অনৈতিক সুবিধা আদায়ের কারণে যানজট নিরসন হচ্ছে না। কার্যকর হচ্ছে না প্রশাসনের সিদ্ধান্ত।
অনেকে মনে করে-ভারি যানবাহন চলাচলের জন্য যে নির্দিষ্ট সড়ক রয়েছে সে সড়ক দিয়ে চলাচল করলে শহরবাসী ভয়াবহ যানজট থেকে রক্ষা পাবে। এ ব্যাপারে অতি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে শহরবাসী।
সংবাদের প্রয়োজনে গত কয়েকদিন ধরে সরেজমিনে কক্সবাজার শহরের অবস্থা দেখা হয়। নেয়া হয় স্থানীয় ভুক্তভোগিদের ভাষ্য। যাদের অধিকাংশ প্রশাসনের খামখেয়ালিপনা ও ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকাকে দোষছে।
বিশেষ করে- গত কয়েক মাসধরে কক্সবাজার শহরে যানজটের মাত্রা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে সর্ব শ্রেণি-পেশার মানুষ ভোগান্তির শিকার।
কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে হলিডে মোড় পর্যন্ত যেতে অনেক সময় দেড়ঘণ্টা পার হয়ে যায়। ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতির কারণে কলাতলী রোডেও যানজট লেগে যায়।
ছোটখাটো যানবাহনসমূহ বের হতে একটি ‘বাইপাস সড়ক’ তৈরি করলে যানজট কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। এই জন্য সর্বপ্রথম উদ্যোগী হতে হবে কক্সবাজার পৌরসভাকে।
এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমানকে অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে তিনি এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানান।