সিবিএন ডেস্ক:
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনসহ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সংসদ সদস্যদের নিয়ে অনানুষ্ঠানিক কূটনৈতিক (ট্র্যাক টু ডিপ্লোমেসি) উদ্যোগ নেওয়ার দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। একইসঙ্গে সংসদ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে সফর করে সংসদে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার দাবি উঠেছে।

বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলের সিনিয়র সদস্যরা এই দাবি তোলেন। এসময় তারা সর্বদলীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন।

ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষে সরকার দলের সিনিয়র সদস্য মোহাম্মদ নাসিম পয়েন্ট অব অর্ডারে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। মোহাম্মদ নাসিমের বক্তব্য সমর্থন করেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১-১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। কিন্তু, সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। দীর্ঘ সময়ে মাত্র ৩ জন রোহিঙ্গা মিয়নমারে ফেরত গেছেন। তাদের মিয়নমারে ফিরে যেতে অনীহা রয়েছে। এভাবে চলতে পারে না। রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের সমস্যা নয়; বৈশ্বিক সমস্যা। বিদ্যমান এ সমস্যা সমাধানে সংসদে সব দল মিলে আলোচনার জন্য একটি দিন নির্ধারণ করা যেতে পারে। সংসদে আলোচনা করে একটি প্রস্তাব নেওয়া যেতে পারে।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারত, চীন ও মিয়ানমারে গিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করতে একটি সংসদীয় কমিটি থাকবে।’

এরপরই জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু জানান, রোহিঙ্গা সংকটকে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ কীভাবে দেখছে, তা দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর জানা দরকার। একটি দল জাতিসংঘ সফর করে সংসদে প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে পারে। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে সর্বদলীয় কমিটি করার প্রস্তাব দেন তিনি।

হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। দ্বিপাক্ষিকভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে না। বাংলাদেশ–মিয়ানমার ও জাতিসংঘ এই ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান হবে না।’

ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করেছিলাম, তা কতখানি যথাযথ ছিল, তা খতিয়ে দেখা দরকার। সেখানে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের যে কথা বলা হয়েছে, তা বাংলাদেশের পক্ষে হয়েছে বলে মনে হয় না। আন্তর্জাতিক বন্ধুরা পরামর্শ দিয়ে মনে করেছিলেন, এই সমস্যার সমাধান করবেন। আমি মনে করি, তারা তাদের রাজনীতি করেছেন, আমাদের রাজনীতি করেননি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল করেছেন, এটা সত্য। কিন্তু, এই সমস্যা চলতে পারে না।’

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অনানুষ্ঠানিক কূটনীতির প্রস্তাব করে সাবেক মন্ত্রী মেনন বলেন, ‘সরকারের বাইরেও যারা থাকেন, তারাও এ ধরনের সংকট সমাধানে সাহায্য করতে পারেন। ভারতের সঙ্গে গঙ্গা পানি চুক্তি ও স্থল সীমানা চুক্তির সময়ে আমরা এই অনানুষ্ঠানিক কূটনীতি দেখেছি।’ তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে অনানুষ্ঠানিক কূটনৈতিক তৎপরতা (ট্র্যাক টু ডিপ্লোমেসি) চালানোর আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সর্বদলীয় কমিটি করার প্রস্তাব দেন তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।