শাহীন মাহমুদ রাসেলঃ

শহরের সড়কগুলো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। সড়ক ও ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ দোকান, ফেরিওয়ালা, সড়কের ওপর যানবাহনের অবৈধ পার্কিং, নির্মাণসামগ্রী রাখা, কাঁচাবাজার, ডাস্টবিন, মোড়ে মোড়ে গাড়ির বিশৃঙ্খল জটলা, যাত্রী ওঠানামা ইত্যাদি কারণে এ সংকট বাড়ছে। এতে বাড়ছে জনদুর্ভোগ, যানজট আর দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এ নিয়ে সরেজমিন ঘুরে যা দেখলাম।

শহরের মেইন রোডে অন্যান্য স্থানের তুলনায় বাজার ঘাটা ফুটপাত অনেক সংকীর্ণ। এ ফুটপাতে ফল ফ্রুটের দোকান এবং দোকানের সরঞ্জাম, পান-সিগারেট, ফল ও বিক্রেতারা দখল করে রেখেছেন। নিউ মার্কেটের সামনের রাস্তার অপরদিক ফুটপাত পুরোটাই দখলে আছে বিভিন্ন ভাবে।

ও আর হোটেল আল মুবিনের সামনে কয়েকটি কাঁচা সবজির দোকান গড়ে উঠেছে। ফুটপাত ও রাস্তার একপাশ সিএনজি ও ভ্রাম্যমাণ হকারদের দখলে থাকায় পথচারীদের হাঁটতে হয় ব্যস্ত সড়কের মাঝখান দিয়ে। ফলে ছোটখাটো দুর্ঘটনা প্রতিদিন ঘটে। ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা ও পথচারীদের চলাচলের সুবিধার জন্য নগরের জন্য কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই।

কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগে ফুটপাতের একপাশ দখল করলেও এখন ফুটপাতের দুপাশই দখল হয়ে যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের গেটের তিনপাশের ফুটপাত কাপড়, বিক্রেতা ও খাবারের দোকান, কাপড় বিক্রেতারা মালামাল রেখে দখল করে রেখেছেন। এখানে পথচারী ও সিএনজি, খটমটের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

শহরের ঝাউতলা সড়কে দেখা যায়, পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য একটু ফুটপাতও খালি নেই। এখানে ফুটপাত দখল করার পর ব্যস্ত সড়ক দখল করে গাড়ি গাড়ি পার্কিং,চানামুড়ির দোকান, ইস্পাতের আসবাবপত্র নির্মাণ, নির্মাণসামগ্রী, নোহা পার্কিং করে রাখা হয়েছে।

পুর্ব বাজার ঘাটা খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী মো. হাসান জানান, ‘দোকানের সামনের ফুটপাতে মালপত্র না রাখলে কোথায় রাখব।’ পথচারীদের অসুবিধার কথা জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি তো কাউকে রাস্তায় চলাচল করতে মানা করিনি। তাঁরা হাঁটতে পারলে আমার কোনো আপত্তি নেই।

গত সোমবার দুপুর ১২টায় শহরের অন্যতম বিলকিস মার্কেটের সামনে দেখা যায় রাস্তা দখল করে বসেছেন ফলব্যবসায়ী, কাপড় ব্যবসায়ী ও বইসহ হরেক রকমের পণ্য ভ্যানগাড়িতে সাজিয়ে বসা বিক্রেতারা। লালদীঘির মোড় থেকে বটগাছ তলা পর্যন্ত পুরো রাস্তার অর্ধেকই দখল করে আছেন হকারেরা।

ফল ব্যবসায়ী আরিফ কাছে পথচারীদের হাঁটার অসুবিধার কথা বললে বলেন, ‘আমরা কী করমু। ব্যবসা না করলে তো চুরি-ডাকাতি করতে হইব। হকার দোকানি মো. ইমরান জানান, ‘হকারদের সঙ্গে এখানকার পুস্তক ব্যবসায়ীদের অনেকবার সংঘর্ষ হয়েছে। এদের বারবার উচ্ছেদ করলেও আবার জায়গা দখল করে বসে।

সোমবার দুপুরে এ প্রতিবেদকের সামনেই এক হকারকে তিনি ধমক দিলে ওই হকার উল্টো তেড়ে আসেন। ৭ আগস্ট এ সড়কে দুর্ঘটনায় এক পথচারীর মৃত্যু হলেও টনক নড়েনি কারও। হাসপাতাল সড়ক দুপাশে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে রেখেছে ফল ও সবজি ব্যবসায়ীরা।

সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে কোর্ট বিল্ডিং পর্যন্ত সড়কের পুরোটাই দখল করেছে হকার, সবজি, ফল ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন প্রসাধনের দোকান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফল ব্যবসায়ী বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের নালার ওপর দোকান করেছি বলে প্রতিদিন ২০ টাকা করে ভাড়া দিই। তবে তার চেয়েও বেশি টাকা দিতে হয় পুলিশ ও স্থানীয় ক্যাডারদের। একটা দোকান চালাতে গেলে প্রতিদিন ১০০-২০০ টাকা শুধু চাঁদাই দিতে হয়।

সড়কে পথচারীদের দুর্ভোগ চরমে ওঠে কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টের রাস্তার দুপাশ। এখানে এক পাশ রাস্তার ওপর বসা সবজিবিক্রেতাদের দখলে থাকে এবং অন্যপাশে ডাস্টবিন থেকে উপচে পড়ে ময়লা। এ জায়গায় পথচারীরা নাকে রুমাল চেপে হাঁটাচলা করলেও যানজটের সময় হাঁটার জায়গাও থাকে না বলে তাঁদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। পথচারী মামুন জানান, ‘বছরের পর বছর এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দু-একবার ছোটখাটো দুর্ঘটনার মুখোমুখিও হয়েছি। সবজিবিক্রেতা যোগেশচন্দ্র বলেন, ‘সিটি করপোরেশনকে প্রতিদিন ২০ টাকা হাসিল দিয়ে দোকান নিয়া বসি। যেদিন রাস্তা ঠিক করবে সেদিন রাস্তা থেকে উঠে যাব।

আরেক সবজিবিক্রেতা শমসের আলম জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ জায়গায় ব্যবসা করতেছি। কাউকে ভাড়া দিই না।’ এখানকার স্থানীয় ব্যবসায়ী জয়নুল্লাহ জানান, ‘রাস্তা দখল করে বসা হকারদের অনেকবার উচ্ছেদ করলেও কোনো লাভ হয়নি। এরা স্থানীয় প্রশাসনকে টাকা দিয়ে চলে।

ছেলেকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরছিলেন নীলু আকতার। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পত্রিকায় লিখে কিছু হবে না। এ সড়কটা এখন আর সড়ক নেই, চিপাগলির চেয়েও খারাপ হয়ে গেছে। চৌরঙ্গী বেকারির সামনে রাস্তার ওপর সিএনজি অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ডটা দিন দিন বড় হচ্ছে। দক্ষিণ পাশে রাস্তার ওপর বসে ফলের বাজার। হাঁটার কি উপায় আছে?

ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প ক্রমে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে পথচারী আর যানবাহনের জন্য। পান বাজার সড়ক সামনে রাস্তাটি অলিখিত গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় পরিণত হয়েছে। মোড়ের এ পাশে গাড়ি চলতে পারে পাঁচ ফুটের মতো অংশে। অর্ধশতাধিক রিকশা, অটোরিকশাচালক এখানে যাত্রীর আশায় বসে থাকেন। প্রায়ই দেখা যায়, ছোট বড় গাড়ি পার্ক করা।

নিয়মিত দাঁড়িয়ে থাকে ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস ইত্যাদি। এ ছাড়া, বিভিন্ন গণপরিবহন যাত্রী নামানোর জন্যও এখানে থামে। মোড় পর্যন্ত সড়কের দুপাশে ফুটপাত আছে। কিন্তু দুর্ভোগও আছে সমানে। ফুটপাতের ওপর এলোমেলো রাখা হয়েছে বিভিন্ন দোকানের মালামাল।

স্থানীয় বাসিন্দা লতিফ হোসেন, মিয়া ইদ্রিস ও আলতাফ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পেট্রোল পাম্প ফল এবং হকার ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেলেও পথচারী কিংবা মানুষের দুর্ভোগের কথা কেউ ভাবছেন না। অভিযোগ রয়েছে, ট্রাফিক পুলিশ ও স্থানীয় কিছু মাস্তানদের যোগসাজশে হাসপাতাল সড়কটি দখলমুক্ত হচ্ছে না।