ইমাম খাইর, সিবিএন:
কক্সবাজারে মরণনেশা মাদকদ্রব্য ঠেকাতে মাঠে নেমেছে প্রশাসন। গত ১০ অক্টোবর থেকে টাস্কফোর্সের অভিযান শুরু হয়েছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুইদিনে কক্সবাজার শহর ও উখিয়ার বিভিন্ন মাদকের স্পট ও মাদক কারবারীদের বাসাবাড়ীতে অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় ৩৮ হাজার ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক হয়। মামলা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) কক্সবাজার শহরের সাহিত্যিকাপল্লী এলাকায় অভিযান চালায় বিশেষ টাস্কফোর্স। এ সময় ইয়াবাসহ আটক তানিমুল হক সামি (১৯) নামের একজনকে মোবাইলকোর্টের মাধ্যমে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোরশেদ আলম। সাজাপ্রাপ্ত যুবক ওই এলাকার মাহমুদুল হকের ছেলে। একই দিন অভিযান চালানো হয় শহরের দক্ষিণ বাহারছড়া, টেকপাড়া চৌমুহনী, মাদক ব্যবসায়ী পাপ্পু, শাহনাজ পারভীন ও রোকেয়া বেগমের বাসায়। পালিয়ে যাওয়ায় তাদের কাউকে আটক করতে পারেনি অভিযানকারীরা।
১৭ অক্টোবর দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়সহ ৫ টি সংস্থার তালিকাভুক্ত মাদক কারবারী শাহজাহান আনসারীর শহরের বাসটার্মিনাল সংলগ্ন বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে যৌথ টাস্কফোর্স। এছাড়াও তার ভাই আবু সুফিয়ান আনসারী ও আবুল কাশেম আনসারীর বাসায় অভিযান চালানো হয়। শাহজাহান আনসারী কক্সবাজার জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন (ডিএফএ)এর সহসভাপতি ও সদর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক।
ওই দিন শাহজাহান আনসারীদের বাড়ীতে অভিযানের পর হোটেল মোটেল জোনের জামান হোটেল, লেুগুনা বীচে অভিযান চালায় টাস্কফোর্স। তবে, কোন ধরণের মাদকদ্রব্য বা সংশ্লিষ্ট কাউকে আটক করতে পারেনি তারা। অভিযানে নেতৃত্ব দেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও ডিএসবি) মাসুদ রব্বানি।
সাথে ছিলেন- কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোরশেদ আলম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটওয়ারী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আদিবর রহমান, কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. ফরিদ উদ্দিন খন্দকার, র‌্যাবের ডিএডি মুহাম্মদ জহির, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের ইন্সপেক্টর আব্দুল মালেক তালুকদারসহ র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।
চিহ্নিত স্বীকৃত ইয়াবা গডফাদার শাহজাহান আনসারীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না দেওয়া ক্ষোভের মধ্যেছিল সাধারণ ক্রীড়ামুদিসহ সচেতন মহল। কারণ আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানে অনেক শীর্ষ ইয়াবা ডনরা গা ঢাকা দিলেও শাহাজাহান আনসারী ছিল প্রকাশ্যে। কয়েক বছর আগেও শহরের বাসটার্মিনালে গাড়ীর লাইনম্যান হিসাবে কাজ করতো শাহজাহান আনসারী। ইয়াবার পরশে তিনি কলাতলীতে ২ টি হোটেলের মালিক বনে যায়। ৮৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি হাকান।
এদিকে, একই দিন (১৭ অক্টোবর) পৃথক অভিযানে উখিয়া নুর হোটেলের সামনে থেকে ৩৮ হাজার ইয়াবাসাহ মোঃ ইসমাইল (১৯) ও মোঃ আতিকুর রহমান (৩০) নামের দুইজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের টীম। এ সময় একটি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাও জব্দ করা হয়। ইসমাইল টেকনাফ নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের আবুল মনসুরের ছেলে। আতিকুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার জাদুপুর গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে। অভিযানকালে সহযোগী মোঃ ইয়াছিন (৩০) রেডিং টিমের উপস্থিতি বুঝতে পেরে কৌশলে পালিয়ে যায়। সে টেকনাফ পৌরসভাধীন নাইট্যং পাড়ার মৃত রহমানের ছেলে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সোমেন মন্ডল জানান, উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। কক্সবাজার শহরসহ বিভিন্ন মাদকের আস্তানায় অভিযান চালানো হচ্ছে। উখিয়ায় আটক ২ মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন- ১৯৯০ এর সংশ্লিষ্ট ধারা মোতাবেক মামলা করেছেন টেকনাফ সার্কেল উপপরিদর্শক মোঃ নাসির উদ্দিন। কোন মাদক ব্যবসায়ীকে ছাড় দেয়া হবেনা বলেও জানান সোমেন মন্ডল।