ডেস্ক নিউজ:

সংসদের পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল ২০১৮ সংবিধান বিরোধী ও মত প্রকাশের অন্তরায় বলে মত দিয়েছেন বিরোধী দলীয় কয়েকজন এমপি। তারা বলেছেন, প্রস্তাবিত আইনের ৩২ ধারা প্রয়োগের ফলে তথ্য অধিকার ব্যাপকহারে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ফলে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধের অধিকতর বিস্তার ঘটবে। বুধবার জাতীয় সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে এর বিরোধিতা করে এমপিরা তা অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন তারা।

এই আইন অত্যন্ত হতাশাজনক ও বিতর্কিত উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, এই বিলে অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট যুক্ত করা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনের ৩২ ধারা প্রয়োগের ফলে তথ্য অধিকার ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ফলে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধের অধিকতর বিস্তার ঘটবে। তাছাড়া ধারাটি অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিকতা যুক্ত এবং যে কোনো গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ কাজ করবে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সংবিধানের মূল চেতনার বিশেষ করে মুক্তচিন্তা, বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বিকাশের পথ রুদ্ধ করবে। ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতা বোধ সৃষ্টি করবে। এজন্য বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা উচিত ছিল।

তিনি আরও বলেন, অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট প্রয়োগ, ১৯২৩ এর মত আইনের বিতর্কিত ধারা এই আইনের সঙ্গে যুক্ত করা কতটুকু প্রাসঙ্গিক কতটুকু না তা চিন্তা করা খুবই গুরুত্ব বলে আমি মনে করি। ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি দুর্নীতি ও সুশাসন নিশ্চিতে যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে প্রস্তাবিত আইনটি সে ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন ও সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের ভূমিকা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। তাই গণমাধ্যমসহ সকল নাগরিক যাতে কোনো ধরনের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারে তার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রস্তাবিত আইনটি জনমত যাচাই এ পাঠানোর প্রস্তাব করছি।

কুমিল্লা-৮ থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, গণমাধ্যমের অধিকার ও তথ্য পাওয়ার অধিকার এই আইনে নিশ্চিত করা হয়নি। স্বাধীনভাবে মতামতের যে অধিকার- তা এই আইনে নিশ্চিত করেনি।

সংরক্ষিত নারী আসনের রওশন আরা মান্নান বলেন, ডিজিটাল আইন প্রণয়নের দরকার আছে। কিন্তু মিডিয়া ও সাংবাদিকের মতে এই আইন সংবিধান বিরোধী। তাই সরকারের দরকার ছিল বিলটি আনার আগে জনমত যাচাই করা। সরকার এমন ব্যবস্থা করুক যাতে গণমাধ্যম সরকারের খারাপ কাজের সমালোচনা করতে পারে। কারণ জনগণের জন্যই সরকার।

সংরক্ষিত নারী আসনের নূরে হাসনাত চৌধুরী লিলি বলেন, আমি জানি বিলটি কণ্ঠভোটের মাধ্যমে পাস করে নিয়ে যাবেন। ডিজিটাল আইনের মাধ্যমে অপরাধ দূর করা খুব কঠিন।

শামীম হায়দার পাটোয়ারী (গাইবান্ধ্যা-১) বলেন, আমাদের সংবিধানের ৩৯ ধারায় সংবাদ মাধ্যম ও মুক্তচিন্তার অধিকার দেয়া হয়েছে। চিন্তার স্বাধীনতা বলতে বোঝায় সরকার এমন কোনো আইন পরিচালনা করবে না যা স্বাধীন চিন্তায় কোনো ধরনের চাপ অনুভব করবে। কিন্তু এই আইনটি সংবিধান থেকে অনেক দূর চলে গেছে। ৫৭ ধারা করার পর সারা বাংলাদেশে এর অপব্যবহার দেখেছি। শেষ পর্যন্ত পুলিশ বলতে বাধ্য হলো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া কোনো মামলা করতে পারবেন না। সেই ৫৭ ধারার যে ভীতি এই আইনে আরো বেশি। সেই ৫৭ ধারার বিষয়গুলো এই আইনের বিভিন্ন ধারায় বিস্তারিতভাবে আনা হয়েছে। এখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অনেক বেশি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কেউ যদি অনলাইনে খবর প্রকাশ করে সেখানে কাঁচি চালানোর ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সরকারবিরোধী কোনো ধরনের খবর প্রকাশ করলে আলোচনা ছাড়াই সেই অনলাইন ব্লক করে দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।