সোয়েব সাঈদ, রামু

রামুতে প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধ্বসে এবং বাঁকখালী নদীতে ডুবে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। অব্যাহত বর্ষণে পানিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার অধিকাংশ এলাকা। বুধবার (২৫ জুলাই) দুপুরে রামুর লম্বরীপাড়া এলাকায় বাঁকখালী নদীতে ভেসে আসে অজ্ঞাত যুবকের মৃতদেহ। স্থানীয়রা মৃতদেহটি উদ্ধার করলেও তাৎক্ষনিক ওই যুবকের পরিচয় মেলেনি।

এরআগে ভোর ৪টার দিকে দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের পানেরছড়া লম্বাঘোনা এলাকায় পাহাড় ধ্বসে প্রাণ হারায় ২ বছরের শিশু মোর্শেদ আলম। মোর্শেদ আলম জাকের হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় জাকের হোসেনের বসত বাড়িটিও মাটি চাপায় বিধ্বস্ত হয়েছে এবং বড় ছেলে আহত হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছে।

রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লুৎফুর রহমান বুধবার সকাল সাড়ে ৯ টায় জাকের হোসেনের বাড়িতে নিহত শিশুটিকে দেখতে যান। এসময় ইউএনও নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানান এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা প্রদান করেন।

ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম জানান, লম্বরীপাড়া এলাকায় নদীতে ভেসে আসা যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হলেও এখনো পরিচয় পাওয়া যায়নি।

রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লুৎফুর রহমান শিশু মোর্শেদ আলম ও অজ্ঞাত যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এখনো প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তাই আরো পাহাড় ধ্বসের আশংকা করা হচ্ছে। এজন্য তিনি পাহাড়ের নিচে বা পাদদেশে বসবাসকারী লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

এদিকে দুদিন প্রবল বৃষ্টিপাতের কারনে রামুর বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। রামুতে দায়িত্বরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিড়ার মো. রুহুল আমিন বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় জানান, তখনো বাঁকখালী নদীর পানি বিপদ সীমার ১ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পানি তখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এদিকে পাহাড়ি ঢল ও নদীর পানিতে ডুবে যাওয়ায় রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি, রাজারকুল, ফতেখাঁরকুল, কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়া, চাকমারকুল, জোয়ারিয়ানালা, কাউয়ারখোপ সহ ১১টি ইউনিয়নে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বুধবার ভোরে রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের লট উখিয়ারঘোনা এলাকায় পাহাড় ধ্বসে বিধ্বস্ত হয়েছে ওই এলাকার আবুল হোছনের বসত ঘর। ভেঙ্গে পড়ার তীব্র শব্দ ও পরিবারের সদস্যদের আর্তচিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে বাড়ির সদস্যদের উদ্ধার করেন।

বিকালে রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রিয়াজ উল আলম কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের গাছুয়াপাড়া, উখিয়ারঘোনা সহ পানিবন্দি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি দূর্গত লোকজনকে শুকনো খাবার ও অর্থ সহায়তা দেন।

রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ইউনিয়নের সিকদারপাড়া শর্মাপাড়া এলাকায় বাঁকখালী নদীর বেড়িবাধ ভেঙ্গে গেছে। এ কারনে রাজারকুল-চেইন্দা সড়কও পানিতে ভেঙ্গে গেলে সড়কটিতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এছাড়াও এ ইউনিয়নের ৫ শতাধিক বসত বাড়ি পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। দূর্গত লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

কাউয়ারখোপ ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ জানিয়েছেন, অব্যাহত বর্ষনে এ ইউনিয়নের শত শত বসত বাড়ি পানিতে একাকার হয়ে গেছে। এসব পরিবারের লোকজন মানবেতর সময় পার করছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তিনি ত্রান সহায়তা দিচ্ছেন।

এদিকে পাহাড় ধ্বস ও বন্যা প্রতিরোধে স্থানীয় জনসাধারণকে সচেতন করতে সকাল থেকে রামুর বিভিন্নস্থানে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাইকিং করতে দেখা গেছে। এছাড়া বিকালে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে দূর্গোগ মোকাবেলায় জরুরী সভার আয়োজন করা হয়।

রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলমের সভাপতিত্বে এ সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লুৎফুর রহমান, ঈদগড় ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ ভূট্টো, গর্জনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কাউয়ারখোপ ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ এবং প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিগণ বক্তব্য রাখেন। সভায় উপজেলা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৮টি ইউনিয়নকে ১০ হাজার করে এবং অপর ৩টি ইউনিয়নকে ৫ হাজার টাকা করে তাৎক্ষনিক ত্রান সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করে সার্বক্ষণিক মনিটরিং এ নিয়োজিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়াও দূর্গত লোকজনকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৩৫ টি আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।