প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী আলহাজ্ব শহীদুল্লাহ মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন বর্তমান আর্থ-সমাজিক ব্যবস্থায় ইভটিজিং, সন্ত্রাস আর মাদকের ভয়াবহতায় যুব সমাজ আজ চরমভাবে কলুষিত। একশ্রেণির দুষ্টচক্রের অশোভ চক্রান্তের ফলেই আমাদের সম্ভাবনাময় প্রজন্ম পড়ালেকা বাদ দিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এসব সমাজ নিষিদ্ধ অপকর্ম সমাজে বিস্তার লাভের আগেই রাষ্ট্র যদি তার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারতো তাহলে পবিত্র রমাদান মাসে মাদকের বিরুদ্ধে সরকারকে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হতো না। সমাজের পবিত্রতা ধরে রাখতে ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এসব সামাজিক সমস্যা যাতে যুবক-তরুণদের গ্রাস করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই একটি সুন্দর সোনালী সমাজ গঠনে কাজ করেই যাচ্ছে। ঠিক যেমনটি মক্কার ধূষর মরুর বুকে আল্লাহর প্রিয় নবী হিলফুল ফুজুল নামক সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজের সকল প্রকার অপকর্ম রোধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কেননা তখন মানুষ খুন, হত্যা, রাহাজানি সহ নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে নিজেদের মনুষ্যত্ববোধ হারাতে বসেছিল ঠিক তা থেকে রক্ষার জন্য মহান প্রভু তার প্রিয় রাসূল(স) কে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন। শেষ নবীর উম্মত হিসেবে রাসূলের দেখানো পথ অনুসরণ করে ছাত্রশিবির প্রত্যেক ছাত্রের মাঝে ইসলামের সুমহান আদর্শ পৌঁছিয়ে দিয়ে একটি সম্প্রতির সোনালী সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অব্যাহত কাজ করে যাচ্ছে।

ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগরী উত্তর’র উদ্যোগে ঐতিহাসিক বদর দিবসের আলোচনা সভা ও এলাকাবাসীর সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিল প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আজ (০৩.০৬.’১৮) এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগরী উত্তর সভাপতি আহমেদ সাদমান সালেহ’র সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী আ স ম রায়হান’র পরিচালনায় এতে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কলেজ কার্যক্রম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, শহীদ জসিম উদ্দীন মাহমুদ ভাইয়ের গর্বিত পিতা সমাজসেবক ডা. আব্দুল খালেক, মিয়ার বাপের মসজিদ মুতোয়াল্লী আব্দুর রশিদ মেম্বার, পার্সিভিল হিল ওয়েল ফেয়ার সোসাইটির উপদেষ্টা হাসমত আলী মাসুদ, এ্যাকর্ড ওনার্স এসোসিয়েশন’র সভাপতি আমির খসরু, মহানগরী দক্ষিণের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ হাসান আলী, অধ্যাপক সেলিম উদ্দীন, এম এ হান্নান, শিবির নেতা কামাল হোসাইন, আমান উল্লাহ, আবু জোবায়ের প্রমুখ।

প্রধান বক্তা তৌহিদুল ইসলাম আল্লাহর নবী যখন প্রথমাবস্থায় মক্কায় ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিলেন তখন সেখানকার গোত্র সর্দাররা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু করেন। এক পর্যায়ে তাকে জন্মস্থান মক্কা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেন। পরে পবিত্র মদিনায় গিয়ে তিনি সকল গোত্রকে একত্রিত করে সর্বপ্রথম ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করেন। নতুন জনপদটি হয়ে উঠল ইসলাম প্রচার ও প্রসারের নিরাপদ কেন্দ্র। মুসলমান হয়ে যাওয়া আউস-খাজরাজ গোত্রের সাথে অন্যান্য ইহুদি ও খ্রিষ্টান গোত্রের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রচিত হয় মদিনা সনদ নামে পরিচিত পৃথিবীর প্রথম লিখিত শাসনতন্ত্র। কিন্তু মক্কার কুরাইশরা মুসলমানদের শান্তিতে থাকতে দিতে চায়নি। তারা ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। এতদিন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মুসলমানদের শুধু সবরের আদেশ হলেও এবার সশস্ত্র জিহাদের অনুমতি দেয়া হয়। সশস্ত্র পন্থায় কাফেরদের প্রতিরোধ করার অনুমতি লাভের পর আল্লাহর নবী প্রস্তুত হলেন। কুরাইশ কাফেরদের সাথে আল্লাহর নবী ও তাঁর সাথীদের কয়েকটি ছোট খাটো সংঘর্ষের পর প্রথম সরাসরি সশস্ত্র মোকাবেলা হয় মদিনা থেকে বেশ দূরে বদর প্রান্তরে। কিন্তু দু’পক্ষ কোনো দিক দিয়েই সমতায় ছিল না। আল্লাহর নবীর সাথে মাত্র ৩১৩ জন মুজাহিদ প্রায় নিরস্ত্র। অপর পক্ষে আবু জেহেলের নেতৃত্বে রয়েছে ১০০০ প্রশিক্ষিত সৈন্যের সুসজ্জিত বাহিনী। কিন্তু এ অসম লড়াইয়ে নিরস্ত্র মুষ্টিমেয় মুজাহিদদের কাছে পরাজিত হয় সুসজ্জিত বিশাল বাহিনী। কুরাইশদের দর্প চূর্ণ হলো। তাদের দলের মধ্য থেকে নিহত হলো ৭০ জন, বন্দী হয় আরো ৭০ জন। আর মুসলমানদের মধ্যে শহীদ হন মাত্র ১৪ জন। এজন্য সৌহার্দ্য-শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে ইসলামের বিকল্প নেই।

নগর উত্তর সভাপতি আহমেদ সাদমান সালেহ বলেন ¯্রষ্টার নির্দেশিত পন্থায় রাসূল (স) তৎকালীন মক্কার সমাজে বিরাজিত জাহেলিয়াতকে দূর করে একটি সুন্দর, সভ্য, জ্ঞান নির্ভর আধুনিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই বদরের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় জিহাদ। যুদ্ধবন্ধীদের সাথে আল্লাহর নবী ও মুসলিমরা যে সহমর্মিতার আচরণ করেন, বিশ্বের ইতিহাসে তার নজির পাওয়া মুশকিল। মুক্তিপণ আদায়ে অক্ষমদের ওপর চাপানো হয়েছিল ১০ জন মুসলিম শিশুকে পড়া লেখা শেখানোর দায়িত্ব। ইসলাম মানবজাতিকে আবার সেই উন্নত মাকামে নেয়ার ঘোষণা দেয়। বদরের প্রান্তর থেকে ইসলামের বিজয়ধারা সূচিত হয়।