বিদেশ ডেস্ক : মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নতুন ১০ হাজার শরণার্থীর নাম চূড়ান্ত করছে বাংলাদেশ। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের এক প্রতিবদেন থেকে এই তথ্য জানা যায়। এর আগে বাংলাদেশ আট হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা পাঠিয়েছিল। সেখান থেকে মাত্র ৬০০ জনকে রাখাইনের বাসিন্দা বলে স্বীকার করেছিল মিয়ানমার। উল্লেখ্য, একদিকে প্রত্যাবাসানের কথা বললেও অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরাকে ধারাবাহিক ও কাঠামোবদ্ধ সহিংস প্রক্রিয়ায় অসম্ভব করে তুলছে মিয়ানমার।

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। উগ্র বৌদ্ধবাদকে ব্যবহার করে সেখানকার সেনাবাহিনী ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে স্থাপন করেছে সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাসের চিহ্ন। ছড়িয়েছে বিদ্বেষ। ধাপে ধাপে মলিন হয়েছে তাদের পরিচয়। ক্রমশ তাদের রূপান্তরিত করা হয়েছে রাষ্ট্রহীন বেনাগরিকে। জানুয়ারিতে সম্পাদিত ঢাকা-নেপিদো প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের পাঠানো প্রথম ৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা থেকে মিয়ানমার কেবল ৬০০ জনকে ফেরত নিতে রাজি হয়েছে। এমন অবস্থায় নতুন ১০,০০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর দ্বিতীয় তালিকার কথা জানা গেল।

আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, এপ্রিলের শেষে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য জয়েন্ট ওয়ার্কি গ্রুপের বৈঠকেই ওই তালিকাটি মিয়ানমারকে দেওয়া হবে। শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেন, ‘প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সহজ করতে আমরা কক্সবাজারের টেকনাফ ও বান্দরবানের ঘুমদুমে দুটি ট্রানজিট সেন্টার তৈরি করছি।’ দুই মাসের মধ্যে এই কেন্দ্রগুলো কাজ করতে শুরু করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। তবে প্র্রক্রিয়া কবে শুরু হবে সেই বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি আবুল কালাম।

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অপরিহার্য শর্ত হিসেবে চাওয়া হয়েছে বৈধ কাগজপত্র। অথচ বেশিরভাগ রোহিঙ্গা পুড়ে যাওয়া সম্বল ফেলে পালিয়ে এসেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রত্যাবাসন চুক্তিকে মিয়ানমারের ধোঁকাবাজি আখ্যা দিয়েছে। সরেজমিন প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, অনেকেই মিয়ানমারে ফিরতেই চায় না। বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, এখনও কিছু কাজ বাকি আছে। যারা ফিরে যাবে, তারা কোথায় যাবে সেই বিষয়টিও এখনও ঠিক হয়নি।

মিয়ানমার মুখে প্রত্যাবাসনের কথা বললেও এএফপির সাম্প্রতিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেখানে ‘আদর্শ বৌদ্ধ গ্রাম’ গড়ে তোলা হচ্ছে। ওই ফরাসি বার্তা সংস্থার খবর থেকে জানা যায়, রোহিঙ্গাশূন্য বাফারজোন প্রতিষ্ঠা করতে সেখানে বৌদ্ধদের অর্থায়ন ও সেনা মদতে সংস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এতে আরও দীর্ঘ হয়েছে রোহিঙ্গা জীবনের অনিশ্চয়তা। বালুখালি ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া সানজিদা বেগম বিবিসিকে বলেন, মিয়ানমার তাদের নাগরিকত্ব দিলে তিনি ফিরবেন। নয়তো আবার তাদের হত্যা করার চেষ্টা করা হবে। ‘এই অবস্থায় তারা কীভাবে ফিরে যাব’ প্রশ্ন তোলেন তিনি।