বিশেষ প্রতিবেদক:
আজ ২৯ মার্চ মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি এবং কক্সবাজার জেলার মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহীদ মো. শরীফ চেয়ারম্যানের পুত্র ওসমান গণি চেয়ারম্যান হত্যার ছয় বছর পূর্ণ হলো। ২০১২ সালের আজকের এই দিনে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা নিজ অফিসে কুপিয়ে ও গুলি করে নির্মমভাবে তাঁকে হত্যা করেন। এই হত্যার ঘটনায় পুরো জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। এমনকি দলের কেন্দ্র পর্যায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। কাকতালীয়ভাবে হত্যার এই দিনেই এই চাঞ্চল্যকার মামলার বিচার কাজ আজ শুরু হচ্ছে।

তথ্য মতে, এই চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনায় ওসমান গণি চেয়ারম্যানের বড় ছেলে এড. নোমান শরীফ বাদি হয়ে তৎকালীন কালারমারছড়ার চেয়ারম্যান ও তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধীর পুত্র মীর কাসেম চৌধুরীকে প্রধান আসামী করে হত্যা মামলায় দায়ের করেছিল। মামলায় আরো আসামী করা হয়- গত ইউপি নির্বাচনে কালারমারছড়ার আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী সেলিম, কালারমারছড়ার সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা রুহুল কাদের বাবুল, বিএনপি নেতা ফরিদুল আলমসহ ৬৩জনকে। এর মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপএ দাখিল করেন। মামলায় ২১ জন আসামী পলাতক রয়েছে। ২ জন আসামী মৃত্যুবরণ করেছে।

জানা গেছে দীর্ঘ ছয় বছর পর এই চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার কাজ আজ ২৯ মার্চ হত্যাকান্ডের ঠিক ছয় বছরের দিনে কক্সবাজার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে মামলার বিচার কাজ শুরু হচ্ছে।

এদিকে পরিবারের অভিযোগ, আসামীদের কয়েক জন জেল কাটলেও অধিকাংশই পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। তারা গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে এসব আসামী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উল্টো তারা ওসমান গণি চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি ও হয়রানি করে যাচ্ছে। আওয়ামী দলীয় শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ও শীর্ষ নেতাদের প্রশ্রয়ে থেকে তারা প্রকাশ্যে ঘুরছে এবং ওসমানের পরিবারের সদস্যদের হুমকি ও হয়রানি করে যাচ্ছে।

ওসমান গণির ছোট পুত্র কালারমারছড়ার চেয়ারম্যান তারেক শরীফ বলেন, ‘আমার বাবা একজন ত্যাগী ও জনদরদি নেতা ছিলেন। তিনি অন্যায় ও সাধারণ মানুষের অধিকার নিয়ে সব সোচ্চার ছিলেন। এতে সুবিধা করতে না পেরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা যোগসাজস করে আমার বাবাকে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করেছে।’

ওসমান গণি চেয়ারম্যানের স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, ‘খুনিরা আমার স্বামীকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তারা তাকে অত্যন্ত নিষ্ঠুর কায়দায় গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। এরকম খুনের ঘটনা খুবই নগন্য। এভাবে তারা আমার স্বামীকে হত্যা করেও ক্ষান্ত হয়নি। এরপরও তারা আওয়ামী লীগের দলীয় শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ও শীর্ষ নেতাদের ইন্ধনে আমাদের হুমকি ও নানা ভাবে হয়রানি করে যাচ্ছে। সর্বশেষ আদালতের কাছে আমাদের একটাই চাওয়া- খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।’

মহেশখালীর সাধারণ লোকজনের ভাষ্য, ‘ওসমান গণি চেয়ারম্যান সাধারণ মানুষকে অনেক ভালোবাসতেন। বিশেষ করে দক্ষিণ মহেশখালী নেতাদের অবহেলা ও নির্যাতনের বিষয়ে তিনি একমাত্র সরাসরি প্রতিবাদ করতেন। তাই তাদের পরিকল্পনায় তাকে হত্যা করে একটি বজ্র প্রতিবাদী ব্যক্তিত্বকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।’

মামলার বাদি এড. নোমান শরীফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রশ্রয়ে থেকে খুনিরা বেপরোয়া হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। তারপরও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে না। আমাকে ও আমার ভাইকে হত্যার চেষ্টাসহ নানা ভাবে আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পর হলেও মামলাটির বিচার কাজ শুরু হলো। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী আদালত আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিবেন।’

হত্যার কান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের জামাতা মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী ওসমান গণি বলেন, ওইদিন আমি ওনার (ওসমান গণি চেয়ারম্যান) খুব কাছাকাছি ছিলাম। সন্ত্রাসীরা ভারি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিত হামলা করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা ওনাকে নির্মম হত্যা করে। খুব থেকেও ওনাকে বাঁচাতে আমি কিছু করতে পারিনি। এই বিষয়টি আমাকে এখনো যন্ত্রনা দেয়। বিচারের আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হলেই মহেশখালী সাধারণ জনতা কিছুটা শান্তি পাবে।’