বিদেশীদের পেছনে ব্যয় হচ্ছে মোট বরাদ্দের ৭০ শতাংশ

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০৮:৪৯

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


সিএসও-এনজিও ফোরামের মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
শরণার্থীদের জন্য আসা বিদেশী সাহায্যের প্রায় ৭০ শতাংশই বিদেশী এক্সপার্টদের জন্য ব্যয় হচ্ছে। বিদেশী এনজিওগুলোর দৈনিক ব্যয় প্রায় ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তাদের কারণে মানবাধিকারের নামে স্থানীয়দের অধিকার ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। কিছু লোক লাভবান হলেও সামগ্রিকভাবে হুমকীর মুখে কক্সবাজারবাসী।
কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরাম এর উদ্যোগে আন্তজার্তিক মানবাধিকার দিবসের আলোচনায় বক্তারা এসব অভিমত জানান। দিনটি পালন উপলক্ষে রবিবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে কক্সবাজার পৌর ভবনের সামনের সড়কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানবন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের মডারেটর ছিলেন কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী, মুহম্মদ নুরুল ইসলাম, সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী জিন্নাত, মুক্তি কক্সবাজারের প্রধান নিবার্হী বিমল চন্দ্র সরকার, ব্রাকের আঞ্চলিক প্রধান অজিত নন্দি ও কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক মকবুল আহমেদ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন- কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারনে কক্সবাজারের আর্থ ও সামাজিক জীবন কি প্রভাব পরবে তার উপর গবেষণা প্রনয়ণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। মানববন্ধন এবং সেমিনারের মডারেটর কক্সবাজার সিএসও ফোরামের কো-চেয়ার আবু মোর্শেদ চৌধুরী গত ৮ ও ৯ ই ডিসেম্বর টেকনাফ ও উখিয়াতেও এধরনের সমাবেশের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন।
কোস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী মায়ানমারের বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী মি. মং জার্নির দৃষ্টান্ত দেখিয়ে বলেছেন, গনহত্যা এখন একটি লাভজনক ব্যবসা। মায়ানমারে যে গণহত্যা চলছে তাতে মায়ানমারে সামরিক জান্তা, চীন ও ভারতের কোম্পানীগুলো লাভবান হবে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা এসেছে, এতে অনেকেরই লাভ হচ্ছে। কারণ কক্সবাজারে প্রায় ১০০০ বিদেশী আইএনজিও ও ইউএন এক্সপার্ট কাজ করছে এটা কক্সবাজারের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন। প্রতিজনের পিছনে দৈনিক ব্যয় হচ্ছে কমপক্ষে ৩০০ ডলার। অর্থাৎ তাদের পেছনে প্রতিদিন ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অথচ কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিও কাজ করতে পারছে না। তিনি আরো বলেন, নেপালে ভুমিকম্পের পরে আইএনজিওদের সরাসরি কাজ করা থেকে সরকার নিষিদ্ধ করে এবং ফিলিপাইনের সরকারও সাইক্লোন হাইওয়ানের পর একই রকম সিদ্ধান্ত নেয়। তাই বাংলাদেশ সরকার ও রাজনীতিবিদদের কে এইরকম সিদ্ধান্ত নিতে হবে। স্থানীয় এনজিওদের মাধ্যমে কাজ করাতে হবে।
মুক্তি কক্সবাজারের প্রধান নিবার্হী বিমল চন্দ্র সরকার বলেন, সারা বিশ্বে আজ মানবাধিকার লঙ্গিত। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রথমে কক্সবাজার বাসিই গ্রহন করেছে। কিন্তু এখন স্থানীয় কক্সবাজারবাসীই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। স্থানীয় মানুষের কষ্ট আরো বেড়ে গেছে। তাদের নেই পর্যাপ্ত খাদ্য, কর্মসংস্থানও কমে গেছে। তাই স্থানীয়দের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। আমাদের দীর্ঘ দিনের প্রশিক্ষিত কর্মী বেশি বেতনে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা এগুলো বন্ধের জন্য আইএনজিওদের আহ্বান জানাচ্ছি। সাংবাদিক জনাব মোহাম্মদ আলী জিন্নাত বলেন, রোহিঙ্গাদের উপর যে নির্যাতন হয়েছে তা শুধু মানবাধিকার লঙ্গন নয়, গনহত্যা। অথচ বিশ্ব জনমত কার্যকরভাবে মায়ানমারের উপর কোন চাপই প্রয়োগ করতে পারছে না। পাশাপাশি এই জন¯্রােতের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগন। কক্সবাজারের বিশিষ্ট সাংবাদিক জনাব ফজলুল কাদের চৌধুরী রাখাইন রাজ্যের ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের তথাকথিত বন্ধু রাষ্ট্র ভারত, চীন, রাশিয়া আমাদের প্রস্তাবে সমর্থন দেয়নি। বরং তারা বাধা দিয়েছে। বাংলাদেশ যেই দিন মায়ানমারের সাথে চুক্তি করেছে, সেইদিনই আরো রোহিঙ্গা মায়ানমার হতে বাংলাদেশে এসেছে। তাহলে কিসের চুক্তি হলো? তিনি অং সাং সুচির কর্মকান্ডের কঠোরভাবে সমালোচনা করেন।
সবশেষে তিনি দিবসটি পুরো কক্সবাজার জেলায় সফলভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সকল সিএসও এনজিও নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি আইএনজিও ইউএন এর সকল বিদেশী সহায়তার পুর্ণ স্বচ্ছতা ও স্থানীয় জনগন ও সরকারের প্রতি দায়বদ্ধতা দাবি করেন।
এতে উপস্থিত ছিলেন মুক্তি, কোস্ট ট্রাস্ট, একলাব, ব্র্যাক, নোঙ্গর, ইপসা, পালস, রেডিও টেকনাফ এর প্রতিনিধিবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের সিভিল সোসাইটি ও এনজিওর নেতৃবৃন্দ। সিএসও ফোরাম কক্সবাজারে দিবসটির প্রতিপ্রাদ্য বিষয় ঠিক করে- “কক্সবাজারের সমাজ, মানবাধিকারের সমাজ, রোহিঙ্গাদের সাথে স্থানীয়দের অধিকারকেও সমুন্নত রাখুন”।