আলমগীর কবির :
বিচ্ছেদ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলবেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। এ নিয়ে দুই-এক দিনের মধ্যেই সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি। অপু বলেন, তালাকনামার যে নোটিশ আমার ঠিকানার পাঠানোর কথা বিভিন্ন সংবাদ থেকে জেনেছি, সেটি হাতে পাওয়ার পর আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে সবার সামনে কথা বলবো।’

অপু বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে লুকোচুরির কিছু নেই। যা সত্য তা সবার জানা প্রয়োজন।’
সংবাদ মাধ্যমে আসা খবরে কাবিননামা নিয়ে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে অপু বলেন, ‘আমাদের বিয়ের কাবিননামায় টাকার অংক (দেনমোহর বাবদ) উল্লেখ আছে ১ কোটি ৭ লাখ। এটাকে কেউ যেন বিভ্রান্ত না করে।’

উল্লেখ্য, সোমবার শাকিবের আইনজীবী গণমাধ্যমে দেনমোহর ৭ লাখ টাকা উল্লেখ করেছিলেন। অপু বলেন, শাকিব এভাবে তালাক নোটিস না পাঠিয়ে পানিঘোলা না করে নিজে সুন্দরভাবে আমার সাথে কথা বলে সংবাদ সম্মেলন করে সবাইকে জানিয়ে দিতে পারত।’

অপু বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি সংসার করতে। শাকিবের এদিকটায় কোনো মনোযোগ ছিল না। সে এখন অন্য গ্রহের বাসিন্দা। তবে আমি চাইবো শাকিব যেন ক্যারিয়ারে আরো বেশি সফলতা পায়।’

এর আগের খবরে বলা হয়, শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের বিয়ে বিচ্ছেদের খবর ছড়িয়ে পড়ে গতকাল সোমবার দুপুর থেকেই। প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ওখান থেকে টিভি স্ক্রল হয়ে অনলাইন পত্রিকাগুলোতে শিরোনাম হয়, ‘অপুকে তালাকের নোটিশ দিলেন শাকিব’। শাকিবের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে খবরগুলো প্রচার করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে অপু বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে, প্রথমে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরে মেসেজ দেখে অপু কলব্যাক করে বললেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ বা তালাক নোটিশ যা-ই বলেন, আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। টেলিভিশনের স্ক্রলে দেখে প্রথমে আমি বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারি। তাই এ বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’ তিনি বলেন, ‘কারো প্রতি ক্ষোভ, অভিমান থাকতেই পারে। তার মানে এ নয়, হুটহাট সিদ্ধান্তে জীবন থেকে কাউকে বাদ দিয়ে দেবো। তবে শাকিব যদি এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে আমি কিছু বলব না। সবচেয়ে খুশি হবো গণমাধ্যমকর্মীরা যেন এই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা না করে।’ গণমাধ্যমকর্মীরা নীরব হলেই চার পাশের আলোচনা বন্ধ হবে? অপু বলেন, ‘বন্ধ হবে কি না জানি না, তবে আমি যাদেরকে সবচেয়ে ভালোবাসি, তাদের কাছ থেকে বিব্রতকর প্রশ্নগুলো কানে আসবে না- এটাই শান্তি।’

‘নোলক’ নামে একটি চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে শাকিব খান এখন ভারতের হায়দরাবাদে। বিয়ে বিচ্ছেদের নোটিশ প্রসঙ্গে সামাজিকমাধ্যমে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে শাকিবের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত প্রযোজক ইকবাল হোসেন জয় বলেছেন, ‘তালাকনামা পাঠানোর খবর সঠিক। গত ২২ নভেম্বর এ বিষয়ে শাকিব খান সিনিয়র একজন আইনজীবীর সাথে কথা বলেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ নভেম্বর শাকিব খান তালাকনামায় স্বাক্ষর করে অপুর নিকেতনের বাসায় পাঠিয়েছেন।’ কিন্তু অপু তালাকনামা হাতে পাননি, এর কারণ জানতে চাইলে জয় বলেন, তালাকনামার চিঠি অপুর বাসায় বারবার গিয়ে ঘুরে এসেছে। অপু চিঠি গ্রহণ করেননি। বাসার দারোয়ানও চিঠি গ্রহণ করতে সম্মত হননি।
শাকিব খানের আইজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘অপু বিশ্বাসের নিকেতনের বাসা এবং বগুড়ার ঠিকানায় তালাকের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তবে এ তালাক কার্যকর হবে নোটিশ পাঠানোর তারিখ থেকে তিন মাস পর।

তালাকের কারণ হিসেবে নোটিশে শাকিব উল্লেখ করেছেন, অপু তার পছন্দের সীমার মধ্যে থাকেননি। সম্প্রতি তাদের সন্তানকে গৃহপরিচারিকার কাছে রেখে দেশের বাইরে যান অপু। এ ব্যাপারে অপুর কাছ থেকে তিনি কোনো সন্তোষজনক জবাব পাননি। এরপর শাকিব ধরে নিয়েছেন, অপু তার সাথে সংসার করতে চান না।’ আইনজীবী বলেন, ‘বিয়ের দেনমোহর বাবদ সাত লাখ টাকা অপুকে পরিশোধ করবেন শাকিব খান। এ ছাড়া তিনি একমাত্র সন্তান আব্রাম খান জয়ের ভরণপোষণ করবেন।

২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন শাকিব-অপু। এই বিয়ের খবর ৯ বছর ধরে গোপন রেখেছিলেন তারা। চলতি বছরের ১০ এপ্রিল (সোমবার) বিকেল ৪টায় দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে এসে, এক রকম হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেন অপু। এত দিন অপু বিশ্বাস গোপনে আগলে রেখেছিলেন শাকিব খানের ঔরসজাত সন্তানকে। কলকাতার একটি ক্লিনিকে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জন্ম হয় শাকিব-অপুর ছেলে আব্রাম খান জয়ের। সে সময় অপু বিশ্বাসের সিজারও করা হয়। এ খবর প্রকাশের পর থেকেই শাকিবের সাথে অপুর মান-অভিমান চলছিল।

এ দিকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ছিল শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের ছেলে আব্রাম খান জয়ের প্রথম জন্মদিন। জন্মদিনের দাওয়াতপত্রে অপু বিশ্বাস ও জয়ের ছবি থাকলেও শাকিব খানের কোনো ছবি ছিল না। তখনো শাকিব-অপুর সম্পর্কের চরম টানাপড়েনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এমনকি ছেলের সে জন্মদিন অনুষ্ঠানে যাননি শাকিব! যদিও শাকিব তার ছেলের সাথে সেদিন দিনের বড় একটা অংশ কাটিয়েছেন। এর পর থেকেই তাদের সম্পর্কের টানাপড়েন দিনকে দিন বাড়ছিল।

শাকিব খান গত ৩০ অক্টোবর ‘চালবাজ’ ছবির শুটিং শেষ করে ভারত থেকে ঢাকায় ফিরেন। এরপর ৪ নভেম্বর এফডিসিতে ‘আমি নেতা হব’ ছবির শুটিংয়ে অংশ নেন। আর ৫ নভেম্বর সকালের ফ্লাইটে থাইল্যান্ড যান। থাইল্যান্ড যাওয়ার পরই গুঞ্জন শুরু হয় অপুকে তালাক দিচ্ছেন শাকিব। ২০ নভেম্বরের দিকে দেশে ফিরেন তিনি। ওই দিনই সন্তানকে বাসায় রেখে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন অপু।

২০০৬ সালে পরিচালক এফ আই মানিক পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিতে প্রথম জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করেন শাকিব-অপু। ২০০৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত টানা এই জুটি একাধারে ৭০টির মতো ছবিতে জুটি বাঁধেন। একসাথে কাজ করতে গিয়ে একসময় পরস্পর প্রেমের বাঁধনে জড়িয়ে যান।