শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, কক্সবাজার সদর:

কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালীতে সাদা পোষাকে আসামী ধরার নামে জনগণের উপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে ভূক্তভোগী এক পরিবার। এসময় হ্যান্ডকাপ নিয়ে পালিয়ে যাওয়া আসামী সুলতান আহমদকে আটক করতে না পারলেও হ্যান্ডকাপ ফেরত পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আহত এক নারীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আটককৃত ৩ নারীকে বাচ্চাসহ আদালতে প্রেরণ করেছে। সংঘটিত ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে।

জানা যায়, ৮ নভেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই আহসান মোর্শেদ সাদা পোষাকে বহিরাগত রশিদ নগর হামির পাড়ার নুরুল ইসলাম, রহিম, মিজান নামের ৩ ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে ভারুয়াখালী ইউনিয়নের উল্টা খালীর ননা মিয়া পাড়ার নারী নির্যাতন মামলার আসামী মৃত ছৈয়দ আলমের পুত্র সুলতান আহমদকে তার ২য় স্ত্রীর বাপের বাড়ীতে গ্রেফতার করতে যায়। এসময় তার স্বজনরা সেখানে দাওয়াতে গিয়েছিল। শেষ করে বাড়ী ফেরার পথে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় পৌছলে এএসআই আহসান মোর্শেদ তাকে আটক করে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দেয়। এসময় এএসআই আহসান মোর্শেদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি পুলিশ পরিচয় দেন এবং পরিচয় পত্র ও মামলার ওয়ারেন্ট কপি প্রদর্শন করতে বলে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি, ধাক্কাধাক্কি ও বাক বিতন্ডা শুরু হলে মুহুর্তের মধ্যে ২য় স্ত্রীর বাড়ীতে অবস্থানরত সুলতান আহমদের মা রহিমা খাতুন (৫৫) এগিয়ে আসলে তাকে বন্ধুকের বাট দিয়ে রক্তাক্ত করে মাটিতে ফেলে দেয়। ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে পুলিশ মহিলাদের উপস্থিতি দেখে ছিটকে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে যান অপর এক এএসআই মাঈনুদ্দীন। তার ড্রেস দেখে স্বজনরা পুলিশ বলে নিশ্চিত হন। এসময় এলাকার লোকজন জড়ো হলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে হ্যান্ডকাপসহ পালিয়ে যায় আসামী সুলতান আহমদ। এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সহযোগিতায় গুরুতর আহত রহিমা খাতুনকে উদ্ধার করে প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। সে বর্তমানে ৫ম তলায় ২৮ নং বেড়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা যায়।

এদিকে ঘটনার সংবাদ পেয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল, সদর-রামু সার্কেল রুহুল কুদ্দুছ, সদর থানা ওসি তদন্ত, অপারেশন অফিসার, ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পুরো এলাকায় ব্যাপক তল্লাশী চালায়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সুলতান আহমদের বোন বানিয়া পাড়া এলাকার নবাব মিয়ার স্ত্রী ৫ সন্তানের জননী সাবেকুন্নাহার, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উল্টাখালীর আমিনা খাতুন, শামসুন্নাহার নামে অপর ২ নারীকে আটক করে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে আদালতে প্রেরণ করে। এদিকে ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ১১টার দিকে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে স্থানীয় এমইউপি সিরাজুল ইসলামের সহযোগিতায় হ্যান্ডকাপটি ফেরত দেন সুলতান আহমদ। এ ঘটনায় এলাকায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা।

ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনাটি শুনেছেন এবং রহিমা খাতুন নামের এক বৃদ্ধ নারী আহত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন। এ বিষয়ে জানার জন্য ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. খায়রুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ৩ জন আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান। সাদা পোষাকে আসামী ধরতে যাওয়ার কোন নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে এএসআই আহসান মোর্শেদ ড্রেস নিয়ে গিয়েছিল বলে স্বীকার করে। তবে সাদা পোষাকে দেখেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। তিনি বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি মামলা রুজু করেছেন।