এইচ. এম. রুস্তম আলী, ঈদগাঁও:

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও থেকে ত্রাণের লোভে কুতুপালং অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে যাচ্ছে পুরাতন রোহিঙ্গারা।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১২ সালে রোহিঙ্গা এলাকায় এক বৌদ্ধ তরুণী ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে রোহিঙ্গা মুসলমানের উপর মিয়ানমারের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠির প্রতিরোধ ও সরকারী দমন নিপীড়নের শিকার হয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তারা। ঐসময় চলে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে বেশ কিছু ঈদগাঁও বাসস্টেশন, গরুর বাজারস্থ পূর্ব জাগির পাড়া ভাড়া কলোনী, শিয়া পাড়া, দরগাহ পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বসতি গড়েছিল। এদের মধ্যে জাগির পাড়া ভাড়া কলোনীতে ছিল ছলিম, কাশেম, শুক্কুর, মুনাফ, আবদুর রহমান, রফিক, জামাল ও ইউছুপ। মহিলাদের মধ্যে স্বামী হারা আশু, তৈয়বা, হামিদা, মিনুআরা, নুর জাহানসহ আরো অনেকেই। ভাল আর মন্দ দিয়ে অসংখ্য ছেলেমেয়ে নিয়ে দীর্ঘ ৬ বছর বসবাস করে আসছিল তারা। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী মৌলানা নাছির উদ্দীন বলেন, পুরুষরা মোটামুটি টাকা-পয়সা আয় করলেও পিতা হারা এতিম শিশুরা টোকাইয়ের কাজ, মহিলারা স্থানীয়দের বাসা বাড়ীতে সস্তা দামে শ্রম বিক্রি, ভিক্ষাবৃত্তিসহ অভাবের তাড়নায় পেটের দায়ে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছিল। এসব কাজে রোহিঙ্গা নারী পুরুষদের সহযোগিতা দিয়ে যেত স্থানীয় কিছু টাউট দালাল চক্র। সম্প্রতি মিয়ানমার সেনা কর্তৃক নির্যাতিত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে থাকা-খাওয়া, চিকিৎসাসহ ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার খবরে ত্রাণের লোভে কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে চলে গেছে এখানকার প্রায় ১০/১১টি পরিবার। চলে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে আরো অর্ধ শতাধিক পরিবার। তবে যেসব রোহিঙ্গা মাত্র কয়েক বছর আগেও বিভিন্ন দালালদের মাধ্যমে বনাঞ্চলের জায়গা দখল করে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেছে তারা অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেতে নারাজ। শিয়াপাড়া ও দরগাহ পাড়া গ্রামের জান্নাত আরা ও নুর কায়েস বলেন, আমরা হাজার টাকা দিয়ে বাড়িঘর, জায়গা-জমি ক্রয় করেছি। আমরা এ সহায় সম্বল ফেলে কোথাও যাব না।

স্থানীয় সাবেক মেম্বার মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ঈদগাঁওতে বসবাসরত প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। এদের মধ্যে ১৫/১৬টি পরিবার ক্যাম্পে চলে গেলেও বাকীরা সবাই আছে। গরুর বাজার আলমাছিয়া গেইটস্থ ভাড়া কলোনীতে থাকা রোহিঙ্গা নুরবানু বলেন, আমরা বর্তমানে এখানে খুব ভাল আছি। তবে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। জন্ম নিবন্ধন বা আমাদের ভোটার আইডি কার্ড না থাকায় সন্তানদের স্কুল-মাদ্রাসায় ভর্তি করাতে পারছি না।

এ ব্যাপারে ঈদগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ ছৈয়দ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কয়েকটি পরিবার চলে যাওয়ার খবর পেয়েছি। রোহিঙ্গারা চলে যাওয়াকে ভাল লক্ষণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এভাবে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা এক স্থানে চলে গেলে সকল রোহিঙ্গারা সরকারের আওতায় চলে আসবে।

ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. খায়রুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, পুরাতন রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে চলে যাওয়ার ব্যাপারে তার জানা নেই। তবে যদি কোন রোহিঙ্গা পরিবারের চলে যেতে সমস্যা হলে তারা যদি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে তাহলে চলে যাওয়ার জন্য সব ধরণের সহযোগিতা দেবে পুলিশ। ঈদগাঁওগর এক সাবেক রাজনীতিবিদ রোাহিঙ্গারা যেন দূর্ভোগ মাথায় নিয়ে জন্ম নেন। এটা যেন তাদের নিয়তি হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে রোহিঙ্গা বিরোধী মনোভাব একটু বেশি। জেলার মোট জনসংখ্যা এখন ১৬ লাখের কিছু বেশি। এর মধ্যে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি রোহিঙ্গা। এ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো না গেলে ভবিষ্যতে কক্সবাজারে সাংঘাতিক সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেবে। এমনকি জাতিগত সংঘাতসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে প্রতিনিয়ত এবং বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত ব্যাপক ক্ষতি সাধন হতে পারে।